আমাদের প্রথমে আসলে গণমাধ্যমের ভাষা বলতে কী বুঝব, আর কোন অংশের ভাষা নিয়ে আলাপ করছি, তা নির্ধারণ করা উচিত। সাধারণভাবে গণমাধ্যমের ভাষা বলে কিছু থাকতে পারে না। কারণ, গণমাধ্যম যেমন এক রকমের নয়, ঠিক তেমনি একটি গণমাধ্যমেও এক রকমের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় না, বা এক ধরনের লেখালেখি হয় না। দুই দশক আগে যখন গণমাধ্যম হিসাবে টিভি বা রেডিওর প্রতাপ ছিল, তখনকার কথাই ভাবা যাক।
নিজের জীবন ও সাহিত্যে নজরুল অসাম্প্রদায়িক চর্চাকে সুউচ্চ মহিমা দিতে পারলেও তাঁর এ-সম্পর্কিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ খুব তাৎপর্যপূর্ণ হয়নি। তাঁর হিন্দু-মুসলমান মিলন-আকাঙ্ক্ষা ছিল জাতীয়তাবাদী ঘরানার, যেখানে জাতি বা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে হিন্দু-মুসলমান যৌথ তৎপরতার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। ফলে এ যৌথতা মুখ্যত তাঁর শুভকামনা মাত্র। সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে তিনি কোনো কাঠামোগত বিচার-বিশ্লেষণ করেননি।
তবে নিঃসন্দেহে বদরুদ্দীন উমর আরো আলোচিত হতে পারতেন। তিনটি গুণের সমাবেশ আছে তাঁর লেখালেখি ও কর্মতৎপরতায়। এক. তিনি সরাসরি পার্টি-করা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব; দুই. গত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি তুমুল সক্রিয় বুদ্ধিজীবী; তিন. একাডেমিক বা গবেষণামূলক কেতায় উৎপাদিত তাঁর বেশ কয়েকটি সন্দর্ভ প্রকাশিত হয়েছে। এ তিন গুণের একত্র-সমাবেশ বাংলাদেশে বেশ বিরল ঘটনা। কাজেই বদরুদ্দীন উমর টেক্সট-রিডিংয়ের জন্য সবসময়েই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
আমরা তো আশা করতেই পারি, টাকা পাচার করা ছাড়া জীবনকে অর্থবহ করার আরো পন্থা যে আছে, বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির অন্তত একাংশ দ্রুত তা উপলব্ধি করতে শিখবে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কার্যকর সংগঠনে ক্রমশ রূপায়িত করার ধারাবাহিক উদ্যোগ ও উদ্যমে শামিল হবে। দুনিয়াব্যাপি যান্ত্রিক-প্রাযুক্তিক উন্নতির কল্যাণে সমস্ত মানুষের ভালো জীবনযাপনের যে সম্ভাবনা আজ হাতে মুঠোয়, তাকে মানুষের অধিকার হিসাবে ভাবতে-বুঝতে শিখবে। তাতে অহিদদের পায়ের সুরত সামষ্টিকভাবেই পাল্টে যাবে; আর সেই মসৃণ-সুন্দর পায়ে প্রতিফলিত হবে সুন্দর বাংলাদেশের মুখ।
রাজনৈতিক প্রক্রিয়াই কেবল সাধারণ মানুষকে লড়াকু সৈনিকে বদলে দিতে পারে। ঊনসত্তরের বাংলাদেশ সেই সোনালি সময় উদযাপন করেছে। চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে সম্ভবপর করেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মুহূর্ত। কিশোর শহিদ মতিউর সেই প্রক্রিয়ারই ফসল, আবার একই সাথে সে প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান নির্মাতা।