রাষ্ট্রচিন্তা খসড়া গঠনতন্ত্র

রাষ্ট্রচিন্তা

অন্তর্বর্তীকালীন খসড়া গঠনতন্ত্র


১. ভূমিকা:

বাংলাদেশ যে ভয়াবহ রাষ্ট্রনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তার থেকে উদ্ধার পেতে হলে অন্তত তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে রাষ্ট্রচিন্তা তার রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো :

১. বর্তমান রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি ন্যূনতম মানবিক, গণক্ষমতাতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রসংস্কারের কর্মসূচী উত্থাপন;

২. রাষ্ট্রসংস্কারের কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সহজে অর্জনযোগ্য একটি যৌক্তিক কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ; এবং

৩. গৃহীত কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী ঘোষিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা যাতে সম্ভব হয় তার উপযোগী একটি সংগঠনের কাঠামো উদ্ভাবন।

উল্লিখিত তিনটি চ্যালেঞ্জের প্রথম ২টির বিষয়ে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনার খসড়াতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু সবচাইতে কঠিন চ্যালেঞ্জটি নিয়ে প্রস্তাবনায় সামান্যই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। এদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বিষয়ে প্রস্তাবনার ৩য় পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে :

(ক) আমাদের দেশে জনমানুষের রাজনীতি এবং জনমানুষের সংগঠন গড়ে তুলতে হলে এদেশের মানুষের সংগঠন ও লড়াই-সংগ্রাম গড়ে তোলার অভিজ্ঞতার দুইটি প্রধান ধারার কথা মনে রাখতে হবে : (এক) স্বাধীন বা স্বতঃস্ফূর্ত ধারা, যা এই ভূখণ্ডের মানুষের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও প্রণোদনাজাত, এবং (দুই) ব্রিটিশ বা অন্য কোনো দেশের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত।

ফকির-সন্ন্যাসী-পাগলপন্থী বিদ্রোহসহ বিভিন্ন কৃষক-বিদ্রোহ এবং স্থানীয় সশস্ত্র বিদ্রোহসমূহ প্রথম ধারার অন্তর্ভুক্ত। আর ব্রিটিশ-আনুকূল্যে গড়ে ওঠা কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ইত্যাদি রাজনৈতিক দলকে দ্বিতীয় ধারার উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মূলত আমাদের দেশে যেসব রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে বা নতুনভাবে গড়ে উঠছে তারা প্রায় সবাই হয় এই দ্বিতীয় ধারার মাতৃদলগুলি ভেঙ্গে জন্ম নিয়েছে, না-হয় একই মডেল অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে। এই দুই ধারার বাইরে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য কমিউনিষ্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেছে আর একটি ধারা। তারাও সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশের দলসমূহকে অন্ধভাবে অনুকরণ ও অনুসরণ করেছে এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শে পরিচালিত রাষ্ট্রসমূহের কমবেশী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে আর এক ধরণের দলও এ দেশে গড়ে উঠেছে। এরাও দেশী-বিদেশী কোনো-না-কোনো রাষ্ট্র বা দলের অনুকরণ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট এবং পরিচালিত।

এইসব দল বা সংগঠনের গঠনপ্রণালী বা কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত কতিপয় মানুষ সম্মিলিত হয়ে প্রথমে একটি দল গঠন করে কর্মসূচী ঘোষণা করছে, এবং এরপর জনমানুষকে তাদের দলে যোগদান ও তাদের কর্মসূচী সমর্থনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এভাবে গঠিত দলসমূহ প্রথম থেকেই নেতা আর কর্মীতে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। নেতাদের পদ হয়ে যাচ্ছে স্থায়ী, সম্পত্তির মতো উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তরযোগ্য। দল বা সংগঠনে কর্মী-অনুসরণকারীদের মালিকানা তো দূরের কথা, কখনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। কর্মীদের কাছে নেতাদের জবাবদিহিতার বদলে কর্মীরাই নেতাদের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য থাকার রাজনৈতিক-সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এই ধরণের দল বা সংগঠন তাদের কাগজপত্রে যা-ই লিখুক বা মুখে যা-ই বলুক, যে-দলের অভ্যন্তরে কর্মী-সমর্থকদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না, সে-দলের দ্বারা কখনোই জনমানুষকে রাষ্ট্র-ক্ষমতার মালিক বানানো সম্ভব নয়। এমনকি তাদের পক্ষে জনমানুষকে রাষ্ট্রের মালিক বানানোর প্রকৃত রাজনীতিও করা সম্ভব নয়।

(খ) আমাদের কৃষকেরাও জানে মাটি কাটার জন্য কোদাল আর ধান কাটার জন্য কাস্তে লাগে। একটার কাজ আরেকটা দিয়ে হয় না। একইভাবে এক-এক ধরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এক-এক রকম সংগঠন গড়ে তোলা হয়–কোনোটা সামাজিক, কোনোটা-বা রাজনৈতিক। যারা সরকার-বদলের রাজনীতি করবেন বা সরকার-গঠনের জন্য নির্বাচন করবেন, আর যারা গণমানুষের সংবিধান ও গণমানুষের ক্ষমতাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন করবেন–তাদের সাংগঠনিক কাঠামো একরকম হবে না। একরকমের হলে শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসবে না। স্বাধীনতার আগে স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ দিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর দেশ ও জনগণের উপযোগী রাজনীতি না হওয়াই এর সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাগ্যজনক উদাহরণ।

কিন্তু সমস্যা হলো যারা ‘গণক্ষমতাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যারা ‘গণক্ষমতাতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের সংগঠন কেমন হবে তার কোনো তৈরী-কাঠামো সামনে নেই। তাই এদেশে নতুন রাজনীতি গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি যারা নেবে তাদের এই নতুন কাজের উপযোগী নতুন সংগঠনের কাঠামো উদ্ভাবনের চ্যালেঞ্জটিও নিতে হবে।

রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনায় উল্লিখিত এই বক্তব্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন করার জন্য কাজ করবে যে ‘দল বা সংগঠন’ তার গঠনতন্ত্রের আদল আমরা অনেকটা ভাবতে পেরেছি (আমাদের বন্ধুরা তার একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়নও করেছেন), কিন্তু রাষ্ট্রচিন্তা, যা বাস্তবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়া, এর গঠনতন্ত্রটি কেমন হতে পারে তা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু রাষ্ট্রচিন্তা যেহেতু ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে, এবং যেহেতু সারা দেশে অনেক বন্ধুই বর্তমানে রাষ্ট্রচিন্তার সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন, তাই আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংক্ষিপ্ত গঠনতন্ত্রের খসড়া উত্থাপন করার তাগিদ বোধ করছি।


২. খসড়া গঠনতন্ত্র

আমাদের দেশের প্রচলিত সংগঠনসমূহের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি অনেকটা আমাদের রাষ্ট্রের মতোই। রাষ্ট্র যেমন জনগণের অর্থে ও জনগণের ক্ষমতায় পরিপুষ্ট হয়েও জনগণের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য থাকার বদলে জনগণকেই উল্টো রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য করে রেখেছে, তেমনি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলির মূল শক্তি-সামর্থ্য তাদের সদস্য, কর্মী বা শুভানুধ্যায়ীরা হলেও দলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের বদলে নেতার হাতেই দলের সকল নিয়ন্ত্রণ রয়ে গেছে। এখানে নেতার জবাবদিহির বদলে তাই সদস্য-কর্মীরাই নেতার কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য থাকেন। একবার যিনি বা যারা দলের শীর্ষপদ দখল করে বসেন, দলে আর তার কোনো বিকল্প গড়ে ওঠে না। সরকারপ্রধান তবু দু-একবার বদল হলেও হতে পারেন, কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের কোনো বদল হয় না; অথচ তারা সারাক্ষণ রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিকতা নিয়ে সোচ্চার থাকেন! বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে একটু অদল-বদল হলেও রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোর যে কোনো পরিবর্তন হয় না তার অনেকগুলি কারণের মধ্যে এটিও একটি। বরং দেখা যায় রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের পর যে-দল ক্ষমতাসীন হচ্ছে তাদের সাংগঠনিক সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের উপর নির্যাতনের মাত্রা ওঠানামা করছে। এ বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে আমরা রাষ্ট্রচিন্তার খসড়া গঠনতন্ত্র উত্থাপন করছি।

(ক) সংগঠনের নাম : রাষ্ট্রচিন্তা (রাষ্ট্রনৈতিক তৎপরতার একটি উদ্যোগ)

(খ) সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য : উত্থাপিত রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সর্বমহলে আলাপ-আলোচনা এবং এর ভিত্তিতে মতামত গঠন ও পুনর্গঠন। জনস্বার্থে পরিচালিত সকল আন্দোলন ও সক্রিয় তৎপরতায় অংশগ্রহণ এবং সারাদেশে রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এমনভাবে সংগঠন বা যোগাযোগ গড়ে তোলা, যাতে অভীষ্ট অর্জনে সক্ষম একটি ‘দল/সংগঠন/মঞ্চ/ ফোরাম/উদ্যোগ বা যোগাযোগ-সম্পর্ক’ গড়ে ওঠার মতো পরিবেশ তৈরী করা যায়।

(গ) সংগঠনের সদস্য হওয়ার নিয়ম বা যোগ্যতা : ঘোষিত প্রস্তাবনা, কর্মসূচী ও গঠনতন্ত্রের সাথে মোটাদাগে একমত বা ক্ষেত্রবিশেষে সংযোজন-বিয়োজনে আগ্রহী, এবং যে-কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট হতে ইচ্ছুক, বাংলাদেশের এমন যে-কোনো নাগরিক, দেশে-বিদেশে যেখানেই অবস্থান করুন, সদস্য ফরম পূরণ করে রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হতে পারবেন এবং প্রয়োজনে যে কোনো সময়ে ফোনে বা মেসেজে বা মেসেঞ্জারে বা ইমেইলে জানিয়ে সদস্যপদ ত্যাগ করতে পারবেন।

(ঘ) সাধারণ সদস্য : যেসব সদস্য রাষ্ট্রচিন্তা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয় তাদেরকেই রাষ্ট্রচিন্তার সাধারণ সদস্য বিবেচনা করা হবে।
(ঙ) বন্ধু সদস্য : যেসব সদস্য রাষ্ট্রচিন্তা ছাড়াও অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা গ্রুপের সদস্য হিসাবে যুক্ত আছেন, এমন সদস্যদের বন্ধু সদস্য হিসাবে বিবেচনা করা হবে। বন্ধু সদস্যগণ যে কোনো সময় চাইলে রাষ্ট্রচিন্তার সাধারণ সদস্য হতে পারবেন।

(চ) রাষ্ট্রচিন্তা ইউনিট : রাষ্ট্রচিন্তার সাথে যুক্ত সাধারণ সদস্য ও বন্ধু সদস্যগণ প্রয়োজন ও পছন্দমতো তাঁদের জেলা, উপজেলা, অঞ্চল, এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের নামে স্বতন্ত্র ইউনিট গড়ে তুলতে পারবেন। সকল সাধারণ সদস্য ও বন্ধু সদস্যই ইউনিট-সদস্য হবেন এবং মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে তারা সমান মর্যাদার অধিকারী হবেন। প্রত্যেকটি ইউনিট সম-মর্যাদার অধিকারী হবে। প্রত্যেক ইউনিট তাদের সুবিধা অনুযায়ী সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ করবেন এবং আলোচনার মাধ্যমে শুধুমাত্র সাধারণ সদস্যদের মধ্যে কাজ অনুযায়ী দায়দায়িত্ব বণ্টন করবেন। রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনা ও কর্মসূচী অনুযায়ী একটা ইউনিটের কাঠামো নিম্নরূপ হতে পারে:

সদস্য (সদস্য-ফরম পূরণকারী সকল সাধারণ ও বন্ধু সদস্য)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: সংবিধান, আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: অর্থনীতি)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: স্থানীয় সরকার)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: নাগরিক অধিকার ও মৌলিক অধিকার)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: সংগঠন ও কর্মসূচী)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: দপ্তর ও যোগাযোগ
সদস্য (দায়দায়িত্ব: প্রচার ও প্রকাশনা)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: অনলাইন, প্রেস ও মিডিয়া)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: তহবিল)
সদস্য (দায়দায়িত্ব: সংগঠন সমালোচনা)

অথবা ভিন্নরকমও হতে পারে। তবে ইউনিটের সকল সাধারণ ও বন্ধু সদস্য কমিটিরও সদস্য হবেন এবং তাদের নামগুলো উপরে থাকবে। যাদের প্রতি দায়িত্ব দেওয়া হবে তাদের নামগুলো নীচে থাকবে। এগুলো কোনো পদ নয়। সুতরাং পদের মতো করে কোথাও উল্লেখের প্রয়োজন নেই।

(ছ) বন্ধু ইউনিট : সম-আদর্শের কোনো বন্ধু সংগঠন ভিন্ন নামে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রেখেও রাষ্ট্রচিন্তার অপরাপর ইউনিটের সম-মর্যাদা নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার সাথে যুক্ত থাকতে পারবেন। এসব বন্ধু ইউনিট এবং রাষ্ট্রচিন্তা ইউনিট সমমর্যাদা ভোগ করবে। বন্ধু ইউনিট রাষ্ট্রচিন্তার মূলনীতি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতির সাথে যথাসম্ভব সঙ্গতি রেখে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।

(জ) সাংগঠনিক ক্ষমতাচর্চার ধরণ : সদস্যরাই হবে সংগঠনের নিয়ামক শক্তি বা মালিক। সংগঠনের সদস্যদের মধ্য থেকে যার উপর যে দায়িত্ব দেওয়া হবে তিনি তা যথাসাধ্য পালন করবেন এবং ইউনিটের সদস্যদের কাছে জবাবদিহি করবেন।

(ঝ) রাষ্ট্রচিন্তা ইউনিটের কার্যপদ্ধতি : প্রতিটি ইউনিট রাষ্ট্রচিন্তার মূলনীতি অনুসরণ করবে। ইউনিটগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। কোনো ইউনিট একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সাথে তা অন্য সকল ইউনিটের সংশ্লিষ্ট সদস্যকে ফোনে, ইমেইলে, মেসেজে বা মেসেঞ্জারে জানিয়ে দেবে, যাতে সকল ইউনিটের সমন্বয়ে একটা পারস্পরিক যোগাযোগ-সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং প্রত্যেকটা ইউনিট বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতো করে ভাবতে পারে ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

(ঞ) রাষ্ট্রচিন্তা ইউনিটের সিদ্ধান্তগ্রহণ পদ্ধতি : সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় (মিটিংয়ে উপস্থিত থাক বা না-থাক) সবার কথা সরাসরি, ফোনে, মেসেজে, মেসেঞ্জারে বা ইমেইলে শোনা হবে এবং সর্বোচ্চ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব না হলে তা পুনরায় আলোচনা করা হবে এবং একই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

(ট) ইউনিটের কার্যকাল : সকল ইউনিটের কার্যকাল ও কর্মপদ্ধতি একটি সংক্ষিপ্ত সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব ২০১৯ সালের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশের পূর্বপর্যন্ত এইসব ইউনিট কার্যকর থাকবে; এবং সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে গঠনতন্ত্র সকলে মিলে গ্রহণ করবে পরবর্তী পর্যায়ে সকল ইউনিট সেইভাবে গঠিত, পরিচালিত বা বিলুপ্ত হবে।

(ঠ) সদস্যদের কাজ : সকল সদস্য তাদের সাধ্যমতো সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা যাতে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য সকল সদস্য তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। নির্ধারিত সভা, আলোচনা ও তৎপরতায় প্রত্যেকে যথাসম্ভব শরীক থাকবেন। মাসিক চাঁদা ন্যূনতম পঞ্চাশ টাকা প্রদান করবেন। অর্থ সংগ্রহ ও নতুন সদস্য সংযুক্ত করবেন। নতুন যোগাযোগ ও কর্মপরিকল্পনা গড়ে তোলায় ভূমিকা পালন করবেন।

(ড) বর্তমান কর্ম পরিকল্পনা : যত দ্রুত সম্ভব ২০১৯ সালের মধ্যে সকল জেলা শহর, গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা শহর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা এবং সংগঠন গড়ে তোলা। রাষ্ট্রচিন্তার মতাদর্শিক অবস্থান দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করা। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচী প্রণয়ন করা এবং অংশগ্রহণ করা। রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে পোষ্টার, লিফলেট, পত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশ করা। দেশের স্বার্থে সত্যিকার ভূমিকা পালনে যোগ্য, চৌকশ, মেধাবী এবং মানবিক মানুষদের সমন্বয়ে এদেশের মানুষের স্বপ্নের সংগঠন হিসাবে দেশবাসীর হতাশা দূর করে আশার আলো ছড়িয়ে দেওয়া।


৩. কর্মপরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে যা আমরা করবো এবং যা করবো না

(ক) ধর্ম-বর্ণ-জাতি-শ্রেণী-অঞ্চল বা বিশ্বাস-অবিশ্বাস ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজে যেসব বিরোধ বা দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল আছে সেইসব দ্বন্দ্বকে শাসকগোষ্ঠী তাদের সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে যেভাবে ব্যবহার করে, জিইয়ে রাখে বা উস্কে দেয়, আমরা তার ফাঁদে পড়বো না। যা-কিছু মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের বিপরীতে বিভক্তি সৃষ্টি ক’রে তার মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে দেয়, সেসব বিভক্তির ষড়যন্ত্রে আমরা কোনো পক্ষ হবো না। আমরা এইসব বিভক্তির মূল কারণ উদ্ঘাটন করবো এবং এসবের অংশ না হয়ে বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল মানুষ ও প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকাশ ও ন্যায্য অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকবো।

(খ) আমরা রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র ঐক্যবদ্ধ মানুষের জাগরণের শক্তি ও ন্যায্যতার পক্ষে বলবো।

(গ) আমরা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা সেক্টরের রাজনীতির কথা বলবো না। আমরা দেশের সকল শ্রেণী-পেশা-গোষ্ঠী ও সেক্টরসমূহের সুস্থ, স্বাভাবিক ও ন্যায্য বিকাশের পক্ষে বলবো।

(ঘ) কোনো ইস্যু বা সম্প্রদায় বা কোনো জাতি-গোষ্ঠীর কথা বলতে গিয়ে, কিংবা কোনো শ্রেণী-পেশা বা সেক্টরের কথা কথা বলতে গিয়ে আমরা কখনো রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তনের রাজনীতি থেকে বা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক সংকট-মুক্তির রাজনীতি থেকে নিজেদের বিযুক্ত করবো না। আমরা বিদ্যমান সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং বৈষম্যবিরোধী অবস্থান ও আন্দোলনকে একটি মানবিক-গণক্ষমতাতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের বৃহত্তর আন্দোলনের সাথে যুক্ত করবো এবং এ লক্ষ্যে সাধ্য অনুযায়ী তৎপর থাকবো।

(ঙ) আমরা কোনো গোষ্ঠীর বা দলের বা কোনো ব্যক্তির বক্তব্যের সারবস্তুকে বিবেচনা না করে তার বা তাদের উচ্চারিত বা লিখিত কোনো শব্দ বা বাক্যকে প্রধান বিবেচনা করে বিতর্ক করবো না, এভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলবো না, বিভাজনকে উস্কে দেবো না। আমরা সবসময় বক্তার মূল বক্তব্যকে বোঝার চেষ্টা করবো। না বুঝতে পারলে তার বা তাদের প্রতি সম্মান রেখে ব্যাখ্যা জানতে চাইবো।

(চ) আমরা সবার কথা শুনবো এবং সবাইকে বলার সুযোগ দেবো। আগে অপরের কথা শুনবো, পরে নিজের কথা বলবো। ব্যক্তির আচরণগত, প্রবণতাগত বা বিশ্বাসগত ছোট ছোট বিষয়কে কখনোই তার সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিপরীতে দাঁড় করাবো না। ব্যক্তি মানুষের সংকট-সীমাবদ্ধতা এবং ভুলভ্রান্তিকে যতটা সম্ভব মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবো।

(ছ) গণতান্ত্রিকতার চর্চায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মত বা ঐক্যমত্য কিংবা ঔচিত্য, যৌক্তিকতা বা যোগ্যতা এগুলোর কোনোটাকে কখনোই একমাত্র মানদ- করে তুলবো না এবং বাকীগুলোকে উপেক্ষা করবো না। আমরা সর্বসময় পরিস্থিতি বুঝে ও কা-জ্ঞান রেখে চলবো, বলবো এবং করবো।


8. উপসংহার

এই খসড়া গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রচিন্তা প্রত্যাশা রাখে যে, সে এর মাধ্যমে তার কাঙ্ক্ষিত কাজ এগিয়ে নেওয়ার মতো বোঝাপড়া এবং নতুন ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্করীতি গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যেতে পারবে এবং পর্যায়ক্রমে কাজ ও অভিজ্ঞতার সারাৎসার বুঝে খুব শীঘ্রই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উপযোগী রাজনৈতিক সংগঠনের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে সক্ষম হবে।

 

ইব্রাহীম ম্যানশন, রুম নং ২০৪, ১১ পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০
ফোন : ০১৮ ১৬ ০১১২১৪, ০১৭ ১৫ ০২৬৯০২