রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক সময়কে বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে প্রথম বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কিন্তু সে ঝাঁকুনি সম্পূর্ণ অচেনা ছিল না; বড় ধরনের বিপর্যয় তাতে ঘটেনি। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক সময় প্রায় সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছিল কল্লোলীয়দের হাতে। তার নন্দনতাত্ত্বিক তাৎপর্য আমাদের এখনকার আলাপের জন্য জরুরি নয়।
ইতিহাসের ধারণা প্রসঙ্গে-র প্রধান বিষয়বস্তু ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ঐতিহ্যের মধ্যে হাজির থাকা ইতিহাসের ধারণা। বেনিয়ামিনের আমলের ঐতিহাসিক বস্তুবাদী ঐতিহ্য বহন করা বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলো সরল রৈখিক সময়ের মধ্য দিয়ে ক্রমশ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাওয়া যেই ধরণের ইতিহাসবাদী চিন্তায় আটকে গিয়েছিল, তা এই লেখার সমালোচনার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।
আমি মনে করি, আমাদের দাপুটে নদী-পানি-বন্যা নিয়ে ভাবনাচিন্তায় বর্তমান সমস্যা সমাধান করে ভবিষ্যত উন্নয়ন ও কল্যান নিশ্চিত করাটাই কেন্দ্রীয় প্রবণতা। আপনার বিদ্রুপ-অবজ্ঞা-লঘুকরণ-ঠাট্টা-গালাগালি এই কেন্দ্রীয় প্রবণতারই প্রকাশমাত্র। কিন্তু আমি আপনার এই প্রকাশকে অবজ্ঞা-ঠাট্টা-খারিজ করতে আগ্রহী না। আমার আগ্রহ ও উদ্দেশ্য এই দাপুটে চিন্তা ও তৎপরতাকে প্রশ্ন করা। এই প্রবল জানাবোঝার আর কাজ করার ঐতিহ্য কেন ও কীভাবে তৈরি হলো তা খোঁজা। এই ঐতিহ্যের সমস্যাগুলো কী কী পারে তার একটা প্রস্তাবনা পেশ করার চেষ্টা করা।
আসলে এভাবে পরিবর্তন আসেনা। সব মানুষের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। শিক্ষক এবং নৈরাজ্যবাদী, যোগাযোগকারী বা আন্দোলনকারী, উষ্কানী দাতা এবং শান্তির অগ্রদূত, যিনি খটোমটো একাডেমিক লেখা লিখছেন, আর যে অনুবাদক সেটা সহজ করে সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, যে মানুষগুলো ঘটনার বাইরে থেকে তদবির করছে, আর যাদের দাঙ্গা পুলিশ টেনে হিঁচড়ে হাজতে পুরছে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রাজনৈতিক প্রক্রিয়াই কেবল সাধারণ মানুষকে লড়াকু সৈনিকে বদলে দিতে পারে। ঊনসত্তরের বাংলাদেশ সেই সোনালি সময় উদযাপন করেছে। চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে সম্ভবপর করেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মুহূর্ত। কিশোর শহিদ মতিউর সেই প্রক্রিয়ারই ফসল, আবার একই সাথে সে প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান নির্মাতা।
আনন্দমঠ হিন্দু জাতীয়তাবাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে হাজির হয়। ব্রিটিশদের হটানোর জন্য এই জাতীয়তাবাদ মুসলমানদের সাথে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনেনি। বইটির প্রথম সংস্করণ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের লড়াই থেকে মুসলমানদের একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় সংস্করণে যদিও শত্রু গোরা, ব্রিটিশ ও সেনা থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘নেড়ে’ ও ‘যবন’ হয়ে যায়। এই দুটো অবমাননাকর শব্দ দ্বারা বাংলার মুসলমানদেরকে বোঝানো হতো।
আমি তাকে বললাম, সাধারণ মানুষের ওপর গুলি ও নির্যাতনের প্রমাণ আমি নিজে দেখেছি। ‘আমার ছেলেরা সেটা করেনি,’ তিনি বললেন। তোমরা ব্রিটিশরা এখানে দাঁড়িয়ে যে সম্মান পাচ্ছো, তাদেরও (বাঙালি) একই সম্মান রয়েছে।
এর মাঝে রাজা মহেন্দ্রকে নিয়ে ইতিহাসচর্চার পরিসরে কিছু আলাপ-আলোচনা হলেও মওলানা বরকতুল্লাহ (পুরো নাম আব্দুল হাফিজ মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ) ইতিহাসে প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন সামান্যই। কিন্তু কেন? এই হলো প্রথম প্রশ্ন।