উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রচিন্তার বিবৃতি

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

আমাদের সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। গত ৫ই মে রাষ্ট্রচিন্তার একজন সদস্য দিদারুল ভূঁইয়াকে তার বাড়ি থেকে র‌্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেয়া, পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের দিক থেকে তা অস্বীকার করা রাষ্ট্রচিন্তাকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে এদেশের সচেতন মানবিক মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-গ্রুপ-গোষ্ঠী তাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সক্রিয়তা দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দিদারের অবস্থান জানাতে বাধ্য হয়। আমরা এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।

বন্ধুগণ, আপনারা জানেন, দিদারুল ভূঁইয়াকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেলেও তিনি এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের একটি মামলায় আরো অনেকের সাথে কারাগারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তার বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ও ছোট ছোট তিনটি বাচ্চা এবং তার প্রতিষ্ঠান এখন চরম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রচিন্তার মতো একটি সংগঠনের পক্ষে সকল রাষ্ট্রনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের সাঁড়াশী আক্রমণের মুখে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের সক্রিয়তা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।

ঠিক এই সময়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নিয়ে অনেক আলাপ উঠেছে। এই আলাপ কেবল ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামের আন্দোলন নিয়ে নয়, রাষ্ট্র বিষয়ক চিন্তা ও তৎপরতা নিয়েও। চলমান এই আলাপে রাষ্ট্রচিন্তাকে নিয়ে অনেক আশাবাদ যেমন দেখা গেছে, তেমনি কিছু অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তিও দেখা গেছে। এই অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তিকে কাজে লাগিয়ে খানিকটা অপপ্রচারও চালাতে দেখা গেছে।

একই সময়ে গত ১০ই মে ২০২০ তারিখে রাষ্ট্রচিন্তা ও বন্ধুজনের পক্ষ থেকে “সাদা পোশাকে তুলে নেয়া বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত সকলের মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং গণবিরোধী আইন বানানোর সাংবিধানিক ব্যবস্থা সংস্কারের দাবীতে সারাদেশে প্রতিবাদী মানববন্ধন” এর ডাক দেওয়া হয়। এই ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব, মোহাম্মদপুর, টিকাটুলী, উত্তরাসহ সারাদেশের প্রায় সবগুলি বিভাগীয় শহর এবং অনেকগুলি জেলা ও উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবের সেই আয়োজনে বিভিন্ন সংগঠন, আক্টিভিষ্ট, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী ও সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অংশগ্রহণকারী কিছু সংগঠন ও ব্যক্তিদের নিয়েও নানা মাধ্যমে কথা উঠেছে। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে তার সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি দূর করা এই আন্দোলনে শামিলদের একটা কর্তব্যও বটে।

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তির একটা বড় কারণ সম্ভবত এর সাংগঠনিক ধরণ ও রাজনৈতিক বক্তব্যের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক চিন্তা ও তৎপরতার কিছু পুরানো ‘মডেল’ আছে। সেসব পুরানো মডেল স্বাভাবিকভাবেই জনসমাজের মননের গভীরে শেকড় গেঁড়ে আছে। ফলে নতুন কিছুকে ইতিবাচক মনে বিবেচনা করায় যথেষ্ট সন্দেহ-অবিশ্বাস কাজ করে। এসব নিয়ে পুরানো চিন্তা ও তৎপরতার সুবিধাভোগীদের মাঝে কিছু ভীতিও কাজ করে। এ থেকে কেউ কেউ অপপ্রচারেও শামিল হন। কিন্তু তর্ক করে এসব যতটা দূর করা যায়, তার চেয়ে বেশী দূর হয় কাজের মাধ্যমে। রাষ্ট্রচিন্তা তর্কের বাহাদুরি দেখাতে খুব বেশী আগ্রহী নয়। এসব বিস্তর হয়েছে এদেশে। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে, চিন্তা হতে হবে অনুশীলনমুখী, নচেৎ সেটা বুলিবাগিশতা ছাড়া আর কিছু নয়।

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রচিন্তা এখনো পর্যন্ত মূলত একটা রাজনৈতিক প্রচার-আন্দোলন। পুরানো ধাঁচের রাজনৈতিক দল হওয়ার কোনো ইচ্ছা রাষ্ট্রচিন্তার নাই। রাষ্ট্রচিন্তা রাষ্ট্র বিষয়ে কিছু জরুরী চিন্তা ও প্রশ্ন সকলের সামনে তুলে ধরছে। এসব রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তা সংলাপে লিপ্ত। ক্রমে এই সংলাপের পরিসর বাড়তে থাকুক এটাই চায় রাষ্ট্রচিন্তা। এবং সেটা বাড়ছেও। কিন্তু রাষ্ট্রচিন্তা কেন এখনি রাজনৈতিক দল হয়ে উঠছে না, সেটাও ব্যাখ্যা করা জরুরী। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে রাজনৈতিক দল গড়ে উঠতে হয় জনগণের মধ্য থেকে, জনগণের দ্বারা। কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে হঠাৎ একটা দল গঠন করে অন্যদের সেটায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানোর পুরানো মডেলে রাষ্ট্রচিন্তার আস্থা নেই। কারণ এরকম প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ থাকে না। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে সমগ্র দেশে রাষ্ট্র ও এর পুনর্গঠন প্রশ্নে জনগণের বড় এক অংশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা-ঐকমত্য ছাড়া হঠাৎ কিছু মানুষ একটা দল গঠনের ঘোষণা দেয়ার এই ‘টপ-ডাউন’ অ্যাপ্রোচ, আর তাদের কতিপয় ব্যক্তির বা তাদের পরিবারের সেই দলের মালিক সেজে বসা, সেটা আর এদেশে চলবে না, চলা উচিতও নয়।

শুধু তাই নয়, প্রচলিত কোনো সাংগঠনিক কাঠামোও নেই রাষ্ট্রচিন্তার। এই আন্দোলনের কোনো সভাপতি নেই, কোনো সাধারণ সম্পাদক নেই, কোনো পলিটব্যুরো নেই, কোনো মজলিশে শুরা নেই, কোনো ‘নেতা-কর্মী’ মডেল নেই। তার চেয়েও বড় কথা এ সংগঠনের তাত্ত্বিক ভিত্তি কোনো বিশেষ মতবাদ নয়। এ সংগঠন গড়ে ওঠার ভিত্তি হলো তাদের ঘোঘিত ৭ দফা এবং খসড়া প্রস্তাবনা, যেখানে রাষ্ট্রচিন্তা বিদ্যমান রাষ্ট্রের কি কি সংস্কার প্রয়োজন, কেন প্রয়োজন, কি পথে সেই সংস্কার করা সম্ভব, কাদের পক্ষে করা সম্ভব তার খসড়া বিশ্লেষণ ও পথ-পদ্ধতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এতে যে যার মতো শামিল হচ্ছে, কথা বলছে, কথা শুনছে। সবাই মিলে রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তনের জায়গাগুলো চিহ্নিত করছে। রাষ্ট্রচিন্তা যখন কোথাও বসে, কোনো আয়োজন করে সেখানে উপস্থিত সবাই সেটার ভাড়াও শেয়ার করে, এমনকি চা খাওয়ার পয়সাও। রাষ্ট্রচিন্তা তার আচার-আচরণের সকল বিষয়ে বিশ্বাস করে দেশ নিয়ে রাষ্ট্রনৈতিক ভাবনা-চিন্তার কাজটা সকলের মিলিত প্রয়াস হতে হবে। গুটিকয়েকের ক্ষমতার অভিলাষ আকারে নয়।

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রচিন্তার কাজের প্রধানতম বিশ্বাসের জায়গা হলো ‘বাংলাদেশের মালিক এর জনগণ’। ফলে সেই জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে এর বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে। এ কাজ অল্প কয়েকজন মানুষের হতে পারে না। এ কাজ বহু মানুষের। এই বহু মানুষ যার যার সময় ও সামর্থ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তনে শামিল হবেন। যে কারণে রাষ্ট্রচিন্তার কাজে অন্যান্য বহু সংগঠন এবং সংগঠনের মানুষ শামিল আছেন। বাংলাদেশের সুপরিচিত অনেক দলের কর্মী-সংগঠকরাও রাষ্ট্রচিন্তার আলাপগুলোতে আসেন। তাঁদের উপস্থিতিকে রাষ্ট্রচিন্তায় স্বাগত জানানো হয়। তাঁরা বিতর্ক করেন। নতুন আইডিয়া দেন। আইডিয়া নেন। নিজেদের বর্তমান অবস্থানের সীমাবদ্ধতার কথাও জানান। রাষ্ট্রচিন্তার সীমাবদ্ধতা নিয়েও কথা বলেন। তাঁদেরকে বন্ধু-সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রচিন্তা সমান মর্যাদা দেয়। কিন্তু তাঁরা তাদের পুরনো দল ছাড়বেন কিনা সেটাকে তাঁদের ব্যক্তিগত বিবেচনা হিসেবেই দেখে রাষ্ট্রচিন্তা।

রাষ্ট্রচিন্তার সকলে এসব ইতিবাচকভাবে নিতে অভ্যস্ত। রাষ্ট্রচিন্তা এখন পর্যন্ত যত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে এবং রাষ্ট্রনৈতিক সঙ্কট বিষয়ে প্রস্তাবনা হাজির করেছে তার সবগুলোই নেয়া হয়েছে বিভিন্ন মত ও পথের ব্যক্তি ও সংগঠনের সাথে খোলামেলা আলাপচারিতার মাধ্যমে। ফলে সেগুলোর মালিক সকলে। সকলের মিলিত সম্পদ হিসেবেই সেগুলো প্রচারিত হয়।

রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে দেশকে পুনর্গঠনের কাজ কোনো গোপন ও বদ্ধ প্রক্রিয়া নয়। সেরকম হওয়া দরকার বলেও মনে করে না। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে, এরকম সকল মানুষের অঙ্গীকার যত দৃঢ় হবে, ততই তারা ক্রমে বেশী করে রাজনৈতিক সংস্কারের রাজনীতিতে শামিল হবেন। এর জন্য সময় নিয়ে এবং খোলামেলা একটা সাংগঠনিক মডেল নিয়ে কাজ করতে হবে। এটা মুক্তিযুদ্ধের মতো। যুদ্ধ যত তীব্র হবে, যত যৌক্তিক অভিমুখ নিবে, বোঝাপড়া যত শক্ত হবে, ততই সকল সংগঠনের মানুষ দেশ বাঁচাতে রাষ্ট্রনৈতিক পুনর্গঠনে শামিল হবে। এই প্রক্রিয়াটি তাই অংশগ্রহণমূলক থাকা দরকার। সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকা দরকার। এই সাংগঠনিক মডেলটি নতুন মনে হতে পারে। কিন্তু এদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তগুলোর মাঝে এই অংশগ্রহণমূলক মডেলই দেখে রাষ্ট্রচিন্তা।

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রচিন্তা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কারের অনেকগুলো ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে। সংস্কারের ধরন ও করণীয় বিষয়ে অনেকগুলো প্রস্তাব ও পরিকল্পনা উঠে এসেছে। দেশব্যাপী সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সেসব আলোচনার ভিত্তিতে পরিকল্পনাগুলো আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। অনেকগুলো কর্মসূচী তৈরী হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি চলমান, এবং অংশগ্রহণমূলক। এসব কাজের দায়িত্ব কেবলমাত্র বুদ্ধিজীবীদের হাতে ছেড়ে দিতে নারাজ রাষ্ট্রচিন্তা। জনগণের রাষ্ট্র জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই পরিবর্তন হতে হবে। পরিবর্তন-চিন্তা কোনো তরফ থেকে চাপিয়ে দেয়ায় বিশ্বাস করে না রাষ্ট্রচিন্তা। রাষ্ট্র গঠন ও তার পুনর্গঠনে জনগণের এখতিয়ারই সর্বোচ্চ এবং সার্বভৌম বলে বিশ্বাস করে রাষ্ট্রচিন্তা।

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রচিন্তা জনগণকে বিভিন্ন শিবিরে বিভক্ত করার বিপক্ষে, যদিও জনগণের বড় অংশ বিভিন্ন দল ও মতের সমর্থক। এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনাও নয়। যেটা অস্বাভাবিক তাহলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় ও আদর্শিক ভিন্নতা অচ্ছ্যুতধর্মী একটা সংস্কৃতি কায়েম করেছে। যার ফলে জাতীয় প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের মানুষের মধ্যে সংলাপ চালানোর মতো ন্যূনতম সহনশীলতাটুকুও আর রাখা হয়নি মানুষের মধ্যে। রাষ্ট্রচিন্তা এমন বিভাজনের রাজনীতির বদলে ঐক্যের রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিতে চায়; জনগণের একাংশকে আরেকাংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে লিপ্ত রেখে সুবিধা আদায়ের রাজনীতি পরিহারের কথা বলে। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে জনগণ ক্রমে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিবিবেচনার জায়গা থেকেই উপলব্ধি করতে পারবেন যে এ দেশে ব্যাপক রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তন দরকার। সেই উপলব্ধি প্রবলভাবে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা ও উত্তরণের জন্য প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামো আর যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। প্রয়োজন নতুন ধরনের রাজনৈতিক চিন্তা ও তৎপরতার সন্নিবেশ। এই উপলব্ধির জায়গাটা ক্রমে প্রবল হচ্ছে। কেন এটা বিলম্বিত হলো বা হচ্ছে, সে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু রাষ্ট্রচিন্তা পেছনে নয়, সামনে তাকাতে আগ্রহী। লুটপাট ও পাচারকারীদের সাজানো ছকে অপ্রয়োজনীয় পুরানো বিতর্কে শক্তিক্ষয় করে সামাজিক বিভেদকে জিইয়ে রাখতে রাষ্ট্রচিন্তা অনিচ্ছুক।

রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে এদেশে ঐক্যের জায়গাটাই প্রধান। সেই জায়গাটা হলো বাংলাদেশকে রাষ্ট্রনৈতিকভাবে পুনর্গঠন। এই পরিবর্তনের কাজটি সবাই মিলে করতে হবে। এ কাজে কৃষক থেকে সঙ্গীতশিল্পী, আইনজীবী থেকে চা শ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে ইমাম সাহেব, নৌকার মাঝি থেকে জুমচাষী—সবাইকে শামিল করার কাজটি রাষ্ট্রচিন্তা করতে চায়।

প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রচিন্তা সকল প্রশ্ন আলোচনা করেছে, সমাধান করেছে বা সব প্রশ্নের জবাব তার কাছে আছে বিষয়টা তা নয়। সেইসব অমিমাংসিত আলাপগুলো সামনে দিনগুলোতে রাষ্ট্রচিন্তা সবাইকে সাথে নিয়েই করতে চায়। রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে সাম্য, মৈত্রী, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ছাড়া যে বাংলাদেশের চলবে না, এই উপলব্ধিটা এগিয়ে নেয়াই এ মুহূর্তের কাজ। এটা একটা নতুন সংগ্রাম। রাষ্ট্রচিন্তার বক্তব্য, আলোচনা ও কর্মসূচীগুলো তাই সবার দেখা দরকার। সেখানে বাস্তবে বাস্তবায়নযোগ্য কিছু কথা পাওয়া যাবে, যা শত শত বৈঠক থেকে হাজার হাজার জনের মতামত থেকে তৈরী হচ্ছে। রাষ্ট্রচিন্তা বাস্তবতা বিবর্জিত ধারালো বুদ্ধিবৃত্তিক ঝনঝনানির পক্ষে নয়। এতে কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়ে বটে, কিন্তু দিনশেষে বাস্তব পরিবর্তনের কাজ সামান্যই এগোয়। যেকোনো পরিবর্তন-চিন্তার মালিক হতে হবে জনগণকে। এবং জনগণকেই তার বাস্তবায়নে হাত লাগাতে হবে। এটা হবে নীচ থেকে উঠে আসা একটা প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রচিন্তায় তাই অনেক অংশগ্রহণকারী আছেন, কোনো তারকা নেই। রাষ্ট্রচিন্তায় আর যা নেই তাহলো বাম বা ডান, কোনো বিশেষ পন্থা নিয়ে বিশেষ কোনো আগ্রহ বা বিরাগ। ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে রাষ্ট্রচিন্তা সবার সাথেই রাজপথে কাজ করতে চাই। তার একমাত্র বিরাগ এদেশের সম্পদ কুক্ষিগত করে যারা পাচার করে আর যারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী সেই অল্প কিছু মানুষের প্রতি।

রাষ্ট্রচিন্তা নিজে বাংলাদেশপন্থী এবং গণক্ষমতাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, যার প্রবল ঘাটতি ও অভাব পড়েছে এই রাষ্ট্রে। সেজন্য ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ মনে করে বাংলাদেশের আজকের সমস্যাগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলে এই মাটি থেকেই তার সমাধানের চিন্তা বেরিয়ে আসবে। জনগণই সেই সমাধানের দায়িত্ব নিতে সক্ষম।

সবার প্রতি ভালোবাসা।
১১ই মে ২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *