বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?

  • লেখক: বখতিয়ার আহমেদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?

এইটা আসলেই শিক্ষার্থীদের বাপদেরকেই জিজ্ঞেস করতে হবে সবচে আগে।

কারণ বিশ্ববিদ্যালয়মাত্রই দেশের এই আপামর বাপদের জোগানো টাকাতেই চলে। উনারা নিজেরা বা উনাদের সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক বা না পড়ুক, এই প্রশ্ন তোলা বা তার উত্তর ঠিক করে দেয়ার হক দেশের সব বাপেরই আছে ।

কাজেই নিজের বাপের কষ্টার্জিত টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী হচ্ছে সেই প্রশ্ন তোলার প্রথম অধিকারটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই। শুধু তারা নন, এই প্রশ্ন দেশের যে কোন নাগরিকই করতে পারেন। বিশেষত যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্বানদের মাঝে এই প্রশ্ন তোলা আর ভাবার লোক আর তেমন একটা নেই, পাব্লিকের দিক থেকে এই প্রশ্ন কৈফিয়ত আকারে তোলাটা খুব জরুরী।

এই কৈফিয়ত চাওয়ার পুরা হক শিক্ষার্থীদের আপামর মায়েদেরও আছে। বিশেষত যখন নিয়মিতই তাঁদের কাউকে কাউকে সন্তানের গুলি খাওয়া বা গলায় দড়ি দেয়া লাশের মুখোমুখি হতে হয়, বাকীদের সেই আহাজারির ছাপানো ছবি থেকে ছড়ানো উৎকণ্ঠার সাথে বসবাস করতে হয় প্রতিদিন।

কাজেই জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিষ্ঠিত উপাচার্য উনার শিক্ষার্থীর তোলা প্রশ্নের সঠিক উত্তরটাই রাগের মাথায় একটু আওলায় ফেলছেন মাত্র । পরীক্ষার খাতায় টেনশনের চোটে শিক্ষার্থীরা যেমন করে আরকি।

শিক্ষার্থীদের বাপকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাটা শিক্ষার্থীর দায়িত্ব না। সন্তানদের জন্য কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চান সেটা শিক্ষার্থীদের বাপদের জিজ্ঞেস করবার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাপদেরই। তাদেঁর এক্সপেকটেশনের সাথে মিলিয়ে, সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য প্রাসঙ্গিক আর প্রয়োজনীয় জ্ঞান উৎপাদনের নৈতিক দায় মাথায় রেখে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নির্ধারণ করবার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদেরই। সমাজ রাষ্ট্রের প্রয়োজন আর প্রকৃত পরিস্থিতি রিপাবলিকের বাপদের বোঝানোর দায়িত্বও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিদ্বানদেরই। একারণেই বিশ্ববিদ্যালয় আর তার বিদ্বানদের আচার্যের সর্বোচ্চ সার্বভৌম রাষ্ট্র ক্ষমতার ছায়ায় নিশ্চিত করা স্বায়ত্ব-শাসন আর বুদ্ধিবৃত্তিক ইম্পিউনিটির সুরক্ষায় রাখবার বন্দোবস্ত করেছিলেন জাতির জনক। একারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্তাকে ‘সচিব’ না বলে ‘উপাচার্য’ বলে। একারণেই সচিবদের কাজ রাষ্ট্রের গোপন সত্য আর গোপন জ্ঞানের সম্পাদনা, আর উপাচার্যের কাজ রাষ্ট্র আর সমাজের জন্য প্রকাশ্য, উন্মুক্ত ও সার্বজনীন জ্ঞান আর সত্যের সন্ধান ও সম্পাদনার এই ঐতিহাসিক বন্দোবস্তটির দেখভাল করা।

এইটুকু কারেকশন যোগ করে নিলে বশেমরবিপ্রবি’র উপাচার্য মহোদয়ের উত্তর ঠিকই আছে। বাপকে জিজ্ঞেস করবার পরামর্শ তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কাজ যে আসলেই এই প্রশ্ন তোলার মতন ‘বেয়াদব’ শিক্ষার্থী তৈরি করা, এই গভীর অন্তর্দৃষ্টিও উনার এই বদ-মেজাজি উত্তরে আছে। রাগ কমে যাওয়ার পরে এই এই ধরণের ‘বেয়াদব’ প্রশ্নের জন্য কোন শিক্ষার্থীর নম্বর যেন কাটা না হয়, সেই রকম একটি লিখিত প্রশাসনিক আদেশও তিনি জারি করেছেন।

বেয়াদবি বা বদ-মেজাজের জন্য যেহেতু নম্বর কাটার বিধান নাই, আমার ধারণা ব্লুমস ট্যাক্সোনমির বিচারে তিনি এই উত্তরের জন্য ১০ এর মধ্যে ৭.৫ পর্যন্ত পাইতে পারেন। এ মাইনাস। শিক্ষার্থীকে দেয়া পরামর্শটি নিজের দায়িত্ব হিসেবে স্বীকার করলেই তিনি এ প্লাস পাইতে পারতেন।

তারপরেও এরকম গুরুতর একটি প্রশ্নের উত্তরে জাতিকে দুই বাক্যেই এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য অনেক থ্যাংকিউ স্যার।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *