তবে কারাগারই হোক আমাদের সর্বকলাকেন্দ্র!

  • আর রাজী

আজ কত দিন হল দিদারভাই জেলে! এতো দিনে কি জেলের জীবন সহ্য করা শিখে গেছে দিদারভাই? একজন গৃহী-তরুণ যে তার শিশু পুত্র-কন্যাকে জড়িয়ে ঘুমাতো প্রতি রাতে, বউয়ের চোখে চোখ রেখে যার শুরু হতো প্রতিট সকাল, যার বৃদ্ধবাবা কিছু না কিছু একটা উসিলা খুঁজে নিয়ে কথা বলতো পুত্রের সাথে প্রায় প্রতিটি বিকাল, যে নিজের হাতে খাইয়ে দিত সন্তানদের, করোনার ভয়ানক সময়েও যে প্রতিদিন ছুটে গেছে নিরন্ন মানুষের জন্য অন্ন নিয়ে, যে মানুষটি তরুণদের দুর্যোগ মুকাবিলায় প্রশিক্ষিত করেছে নিত্য, ঘোর মারীকালে! ত্রাণ নিয়ে খামতিগুলো তুলে ধরছে অসম সাহসিকতায়, রাতে ছিন্নমূল মানুষকে সেহেরি পৌঁছে দিয়ে মুখের মাস্কটা সরিয়ে অন্ধকার মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে, গভীর শ্বাস টেনে নিয়ে যে মানুষটি প্রতিটি রাত নতুন করে শপথ নিয়েছে আরো অগণন নিরন্ন মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়ার, অপেক্ষা করেছে তিমির বিনাশী প্রদোষের; প্রবাহমান জলধারায় চোখ রেখে প্রতিটি ক্ষণ যে স্বপ্ন দেখেছে এদেশের প্রতিটি মানুষকে মুক্ত করার- সেই দিদারভাই বন্দী! দিদারভাই আজও জেলে! চার মাস হতে চললো বিনাবিচারে বন্দিশালায় রুদ্ধ! কারাগারের- বীভৎস নরকে সে কবেই ক্ষয়ে গেছে শৃঙখলিত জীবনের শত দিন, শত রাত!

এই চার মাসে, দিদারভাই, আমার আত্মার অংশ হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন, প্রতি কাজে, প্রতি কথায়, প্রতিটি চিন্তায় মনে পড়েছে “দিদারভাই জেলে, বিনাবিচারে রুদ্ধ কারাগারে!”

এই জেল জীবন দিদার ভাইয়ের কাছে সহনীয় হয়ে উঠেছে কি না জানি, জুলুম নির্যাতনকে হাসি মুখে মুকাবিলা করার শক্তি তার আরও বেড়েছে কি না জানি না, স্ত্রী পুত্র কন্যা পরিবার পরিজন অসংখ্য বন্ধুর মুখ-দর্শন-বঞ্চিত, প্রিয় কম্পিউটারের কি-বোর্ডে স্পর্শরহিত অনিঃশেষ অন্ধকারের সময়গুলো অতিক্রমের কোনো কৌশল তিনি রপ্ত করতে পেরেছেন কি না জানি। তবে জানি, তার পক্ষ থেকে কেউ ছোটে নি আপোষের সূত্র বা ঘুষের ডালি নিয়ে। তার মুক্তির জন্য রাস্তায় নামেনি সহস্র মানুষ, কেউ শাস্তিও দাবি করেনি তার! কিন্তু নিশ্চিত জানি, দিদার ভাই ভেঙে পড়েননি, মাথা নোয়াননি, ভুলে জাননি তার শপথ।

এরই মাঝে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে গেছে আমার মনের জগতে। এই প্রায় পৌনে তিন হাজার ঘণ্টা টানা বন্দী যে দিদারভাই, তার কথা ভাবতে ভাবতে আর নিজের অক্ষমতার ক্ষরণে জারিত হতে হতে আমি বদলে গেছি। ভেতরে ভেতরে আমি যেন নিজেই দিদার হয়ে গেছি। আর আমার চোখে দিদারভাই হয়ে উঠেছেন নমস্যজন, যেন এক অতিমানব! দিদারের কোমল প্রসন্ন মুখের আরাধনায় আজ গুম-জেল-জুলুম নির্যাতনের জীবন সহনীয় হয়ে উঠেছে আমার মানস-ভাবনায়। যে আমি নরকসম ভয় পেতাম জেল জীবনকে সেই আমিই এখন জেলে যেতে প্রস্তত! বিনাবিচারে মাসের পর মাস যদি পঁচতে হয় জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে সেটি আনন্দিত চিত্তে গ্রহণের মতো মানসিক শক্তিও তৈরি করে দিয়েছেন দিদারভাই! অনুমান করি, আমারই মত অযুত মানুষের সাহসের উৎস হয়ে উঠেছেন দিদারুল ভূঁইয়ারা!

সত্য উচ্চারণের জন্য বিনা বিচারে জেলে নিক্ষিপ্ত হওয়ায় মতো গৌরব আর কোথায়? জয় হোক আমার দিদার ভাইয়ের। দিদারভাইদের কারাগারই হয়ে উঠুক আমাদের সর্বকলাকেন্দ্র। কংসকারাতেই তো যুগে যুগে জন্ম নেয় কংসহন্তা আর যারা থাকে কালচক্রের শীর্ষে, নিয়তির নিষ্ঠুর পদাঘাতে তাদের চলে যেতেই হয় অযুত মানুষের পদতলে!

তবে কারাগারই হোকআমাদের সর্বকলাকেন্দ্র!আজ কত দিন হল দিদারভাই (Didarul Bhuiyan) জেলে! এতো দিনে কি জেলের জীবন সহ্য করা…

Posted by আর রাজী on Sunday, August 30, 2020
ফেসবুক পোস্ট, ৩০ আগস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *