আমরা এখানে কীভাবে এলাম?

উপসংহারে বাংলাদেশ যে অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা করছে তাতে এসব ফ্যাক্টর অবদান রাখলেও, আমি এটা বলবো না যে, এক্ষেত্রে অন্য কোনো কারণ নেই। এমনও বোঝাচ্ছি না যে, তা পারস্পরিকভাবে এক্সক্লুসিভ। এর পরিবর্তে, এই ক্ষেত্রগুলো অন্তর্নিহিতভাবে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন নীতি এবং আদর্শের সঙ্গে যুক্ত। তাই, বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট, যা আইএমএফের ‘অ্যারাইভালকে সামনে রেখে, তা শুধু মহামারি এবং ইউক্রেন সংকটের ফলে হয়নি।

অপরাধের মহামারী, প্রতিবাদের বুজরুকি ও বর্তমানের বাংলাদেশ

প্রতিষ্ঠানগুলো চূর্ণ করে দেয়া হয়েছে, যার পরিণতি হচ্ছে দেশে ধর্ষনের হোতারা বুক চিতিয়ে চলতে পারেন, লুটেরার বুক চিতিয়ে চলতে পারেন, আপনার অধিকার যারা লুট করেছে তাঁরা ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে পারেন। বাকি সব চলবে আর ‘সামজিক আন্দোলনের’ মাধ্যমে ধর্ষনের মোকাবেলা করবেন এটা বলতেই পারেন, কিন্ত আপনিও জানেন এগুলো কথার কথা।

বাইবেলের এক্সোডাস প্রসঙ্গ এবং কুকুর সমাচার

তবে যাই হোক, বাইবেল হাজির করে ইতিহাসকে এভাবে মেটাফোরিকালি পাঠ করে বর্তমান বোঝার চেষ্টা করার একটা ঝামেলাও আছে। কারণ সর্বোপরি আমাদের তো কোনো মেসিয়ানিক উদ্ধারকারীও এইমুহূর্তে হাজির নাই এইখানে- যে কিনা আমাদেরকে এই উন্নয়নের ফ্যাসীবাদ থেকে প্রাণে বাঁচাবে! তবে আমাদের এই সময়ে ফারাও রাজার মত কেউ আছে কিনা সেটা নিশ্চিত নই!

নির্বাচনে সবার ‘বিজয়’ সম্ভব

বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অনেক নাগরিক নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার চান। নির্বাচনী আগ্রহের চলতি জাতীয় মুহূর্তে সেই লক্ষ্যে সংলাপ শুরু করা যায়। কারণ, বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় মৌলিক গলদ রয়েছে।

‘পাটশিল্প বাঁচানোর শ্লোগানের চাইতে পাটশ্রমিকদের বাঁচানোর শ্লোগানটা জরুরী’

পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ দেখি না। তাই, পাটশিল্প বাঁচানোর শ্লোগানের চাইতে পাটশ্রমিকদের বাঁচানোর শ্লোগানটা জরুরী। রাষ্ট্রের টাকা, রাষ্ট্রের সম্পদ- মানে জনগণের টাকা, জনগণের সম্পদ। জনগণের পকেট কাঁটার এই আয়োজন বন্ধের দাবি তোলা খুব জরুরী!

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো গণবিরোধী আইন তৈরির ক্ষমতাকাঠামো

এইরকম কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাকাঠামো যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় থাকে আর মানুষের কাছে জবাবদিহি করা নুন্যতম ব্যবস্থা যে সরকার ব্যবস্থায় থাকেনা সেইটা বহাল রেখে অনেক কষ্টেসৃষ্টে হয়তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমরা বাতিল করাতে পারবো, কিন্তু গণবিরোধী আইন বানানোর ব্যবস্থাকে বদলাতে পারবোনা।

রাষ্ট্রচিন্তা ৭ দফায় কি বলতে চেয়েছে?

বিগত ৫০ বছরের শাসনকালের পর্যালোচনা থেকে তাই আমরা এটা স্পষ্ট যে, দেশের মানুষকে সম্পদ পাচার এবং জুলুম থেকে বাঁচতে হলে দেশের বিদ্যমান আইনকানুন, বিশেষত রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যেইসব আইনকানুন সম্পর্কযুক্ত, সেগুলির পরিবর্তন করতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগকারীদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আমাদের দেশের ৯৯ ভাগ মানুষই এইসব জুলুম, বেঈমানী আর অন্যায় আইন থেকে রেহাই চায়। কিন্তু কি করলে এ অবস্থার অবসান হবে এবং এ অবস্থার পরিবর্তে আমরা কেমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, সে সম্পর্কে তাদের সামনে স্পষ্ট কোনো ছবি নেই। তাই মানুষ হতাশ হয়ে এইসব জঘন্য অপরাধ আর জুলুমের সাথে আপোষ করেই একরকমভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করতে বাধ্য হচ্ছে।

গুজব বন্ধের নামে গুজব তৈরি

যখন সরকারী ভাবে তথ্য গোপনের চেষ্টা হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই আরো আতংক তৈরি হয়, মানুষ তখন উল্টো পাল্টা আরো অনেক জিনিস বিশ্বাস করা শুরু করে দেয়। কেউ অতি সতর্ক হয়, কেউ একেবারে পাত্তাই দেয় না। কারণ কোন তথ্য বিশ্বাস করবে আর কোনটা করবে না এই নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এই অবস্থায় করোনার মতন ভাইরাস আরো দ্রুত এবং মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়।

করোনা, ‘উন্নয়ন’, এবং কিছু প্রশ্ন

সামিট গ্রুপকে বসিয়ে বসিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার বিল দেয়া যায়, এস-আলম গ্রুপের তিন হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া যায়, কিন্তু সারাবছর হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটা গার্মেন্টসের মেয়েগুলোকে স্ব-বেতনে ছুটি দেয়া যায়না কেন?

ভারতের ‘নাগরিকত্ব বিল’: আমাদের প্রয়োজন ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতি

ভারত 'এক্সক্লুসিভ' রাজনীতি করছে, এর বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমাদের আরো বেশি 'ইনক্লুসিভ' রাজনীতি করতে হবে। সচেতনভাবেই। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জবাব সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে হয় না; যদিও একস্থানের সাম্প্রদায়িকতা আরেকস্থানে সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিতে পারে। ভারত রাষ্ট্র হিসেবে 'মুসলমান বিরোধিতা' করছে বলে আমরা যদি এখানে 'হিন্দু বিরোধিতা' করতে যাই তাহলে আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর বিপদ। তাই, একমাত্র সবধর্মের 'ইনক্লুসিভ' রাজনীতিই হতে পারে ভারতের ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে মোকাবেলা করার সবচেয়ে বড়ো উপায়।