আমরা তো আশা করতেই পারি, টাকা পাচার করা ছাড়া জীবনকে অর্থবহ করার আরো পন্থা যে আছে, বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির অন্তত একাংশ দ্রুত তা উপলব্ধি করতে শিখবে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কার্যকর সংগঠনে ক্রমশ রূপায়িত করার ধারাবাহিক উদ্যোগ ও উদ্যমে শামিল হবে। দুনিয়াব্যাপি যান্ত্রিক-প্রাযুক্তিক উন্নতির কল্যাণে সমস্ত মানুষের ভালো জীবনযাপনের যে সম্ভাবনা আজ হাতে মুঠোয়, তাকে মানুষের অধিকার হিসাবে ভাবতে-বুঝতে শিখবে। তাতে অহিদদের পায়ের সুরত সামষ্টিকভাবেই পাল্টে যাবে; আর সেই মসৃণ-সুন্দর পায়ে প্রতিফলিত হবে সুন্দর বাংলাদেশের মুখ।
প্রয়োজন হলো, এদেশে, এ সময়ে, এমন একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কেমন করে সম্ভব হলো তার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা। আর সামগ্রিকভাবে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার আর কোনো পথ আদৌ অবশিষ্ট আছে কিনা, বা থাকলে কেমন হতে পারে সে পথ, তার অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করা।
আমাদের রাষ্ট্রটি এখনো পিরামিড শেইপেই আছে। দরিদ্রের সংখ্যাই এখনো সুবিশাল। এই রাষ্ট্রে দরিদ্রের জন্য দরিদ্রবান্ধব ও ঐক্যমূখী স্টেইট “প্রিন্সিপলস” দরকার, অনৈক্য-প্রসারক “আইডিয়লজি” অদরকারি। প্রিন্সিপলস নিয়ে এখনো কথা বলাই শুরু হয়নি। সেই শুরুতে পা রাখায় আর দেরি না করাই বিশেষ প্রয়োজন।
লুম্পেন পুঁজিবাদের দেশ বাংলাদেশে দেখছি স্কয়ার বা বেক্সিমকোর মতো দানবীয় গ্রুপগুলো অত্যাবশ্যক ওষুধের দাম বাড়িয়ে সেখান থেকে ৫০০ কোটি ব্যবসা নিশ্চিত করে বড়জোর ৫০ কোটি দান হিসেবে তুলে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। যে তহবিলের টাকা আদৌ উদ্দিষ্ট মানুষের কাছে পৌঁছবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ করার অনেক কারণ ও নজির আছে।
সংকটের মাঝখানে বসে টের পাচ্ছি, এইসব ভাবনা ফ্যান্টাসি মাত্র। ঘনঘোর বিপর্যয়ের মাঝখানে বসেও যখন কোন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংগঠন কেবল মুনাফাকেই প্রাধান্য দেয় তখন বোঝাই যায় আর কোন আশা নেই।
করোনা ভাইরাসই কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সামনে হাজির হওয়া একমাত্র বিপদ নয়। বরং করোনাকে পুঁজি করে যে রাষ্ট্রশক্তি সমস্ত রকমের স্বাধীনতা-সৃজনশীলতা-সংহতির পথকে রুদ্ধ করতে চায়, সেই রাষ্ট্রশক্তি কিন্তু করোনার চাইতেও অধিকতর বিপদের। এরকম নিরঙ্কুশ গণবিরোধী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সংহতির কোন বিকল্প নাই।
গবেষকদের কথা না শোনায় অনেক লাশ সামলাতে হবে দেশকে। গবেষক নির্যাতন শুরু হলে আরো বহুগুণ বেশি লাশ গুনতে হবে। ‘কিলিং দ্যা মেসেঞ্জার’ বা বার্তাবাহককে হত্যা নিজের মৃত্যুই নিশ্চিত করে। কারণ, মেসেঞ্জার বিপদে ফেলতে আসে না, খবর নিয়ে আসে যে বিপদ আসছে। যাতে করে বিপদকে মোকাবেলা করা যায়।