ধরিত্রী আমাদের পানে ফিরে তাকায় না… : দীপেশ চক্রবর্তী

  • তর্জমা: কাফি মোহাম্মদ তামিম; সম্পাদনা: সারোয়ার তুষার

[সম্পাদকীয় নোট: প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দীপেশ চক্রবর্তীর The Planet does not Return our Gaze শীর্ষক সাক্ষাৎকারটি প্রথমে প্রকাশিত হয় Centre Pompidou নামক ফরাসি জার্নালে  ‘La planète ne nous renvoie pas notre regard’ এই শিরোনামে, ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর। পরবর্তীতে দীপেশ চক্রবর্তী ও ডোরন ডার্নভের সম্পাদনায় ফরাসি সাক্ষাৎকারটির ইংরেজি ভার্সন প্রকাশিত হয় Alienocene নামক মার্কিনী অনলাইন জার্নালে। বর্তমান অনুবাদটি সেই ইংরেজি ভার্সনের বাংলা তর্জমা।

দীপেশ চক্রবর্তীর বুদ্ধিবৃত্তিক যাত্রা শুরু হয়েছিল আলোচিত সাবলটার্ন স্টাডিজ গোষ্ঠীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক হিশেবে। নিম্নবর্গের স্বর, কর্তাসত্তা, কৃষক-চৈতন্যের স্বরূপ অন্বেষণ থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের ইতিহাস-চেতনা, ইতিহাস-লিখন পদ্ধতির অভিজাততান্ত্রিক পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে সাবলটার্ন স্টাডিজের অভিঘাতের কদর ও পর্যালোচনা তামাম দুনিয়ায় বিপুল। এছাড়াও ভারতবর্ষের আধুনিকতা, গণতন্ত্র ও জনজীবনের উদ্ভব-বিকাশ, ইউরোপকেন্দ্রিক ইতিহাসবাদীতার যুতসই সমালোচনার জন্যও সাবলটার্ন স্টাডিজ এবং ব্যক্তি ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর অবদান সর্বমহলেই স্বীকৃত। সেখান থেকে বিগত এক যুগ ধরে দীপেশ চক্রবর্তীর বুদ্ধিবৃত্তিক, দার্শনিক ও তাত্ত্বিক দীগন্তের নতুন বাঁকের একটা নিজস্ব ভ্রমণ ও ইতিহাস আছে। দীপেশ নিজেও তার বিভিন্ন লেখাপত্র ও আলাপচারিতায় এই বাঁকবদলের আত্মজৈবনিক দিক তুলে ধরছেন। এই সাক্ষাৎকারেও দীপেশ চক্রবর্তীর বুদ্ধিবৃত্তিক বাঁকবদলের সংক্ষিপ্ত নজির হাজির আছে। (দীপেশ চক্রবর্তীর বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তাগত বাঁকবদলের আত্মজৈবনিক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে-বুঝতে দেখা যেতে পারে: ‘ইতিহাসের দীক্ষা’, দীপেশ ২০১৬; ‘সাম্প্রতিক ইতিহাস ভাবনা, আমার ইতিহাসের আলপথ ধরে’, দীপেশ ২০১৮; Chakrabarty 2017)

সাক্ষাৎকারটি পড়বার সময়ে একটি বিশেষ সতর্কতা আবশ্যক। দীপেশ চক্রবর্তীর পাঠক মাত্রই জানেন, বর্তমানে যে প্রধান তাত্ত্বিক ছক ও বর্গে দীপেশ মানুষী ও না-মানুষী (non-human) অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা ও উন্মোচন করে থাকেন, সেই বর্গটির নাম ‘Planetary’। বাংলায় আমরা এ’কে বলছি ‘গ্রহীয়’ বা ক্ষেত্র-বিশেষে ‘গ্রহ সংক্রান্ত/সম্পর্কিত’। জলবায়ু সংকট, মহামারী ও সার্বিকভাবে পরিবেশগত সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই গ্রহে মানুষী ও না-মানুষী সত্তা যে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, কেবলমাত্র মনুষ্যকেন্দ্রিক (humanocentric) চিন্তা দিয়ে তাকে ধরা সম্ভব নয় বলে দীপেশ চক্রবর্তী মনে করেন। ফলে ‘global’ ও ‘planetary’ তথা ‘বৈশ্বিক’ ও ‘গ্রহীয়’  বর্গের পার্থক্য মাথায় রেখে এই সাক্ষাৎকারে পাঠককে লিপ্ত হতে অনুরোধ করি।

যাকে বলা হচ্ছে, ‘বৈশ্বিক’, তা আবশ্যিকভাবে একটি মনুষ্য-নির্মিত অবকাঠামোর দুনিয়া। অর্থাৎ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশায়ন ও পুঁজির সঞ্চালন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তামাম ভূ-খণ্ডকে অখণ্ড ‘বিশ্বে’ বাঁধার যে বয়ান ও পরিকাঠামো, ‘global’  তারই দ্যোতক। তার মানে আমরা বলতে পারি, ‘global’ একটি মনুষ্য-কল্পিত ‘বিশ্ব’ (‘কাল্পনিক’ বা ‘অলীক’ বলা হচ্ছে না; ‘কল্পিত’  অর্থাৎ বিশেষ ও বাস্তব সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তামাম ভূ-খণ্ডের বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিকতা, লেনদেন ও সমসাময়িক অস্তিত্বের বোধ তৈরি করা); মানুষ যার কেন্দ্রে। ফলে Globalization তথা গ্লোবায়নের ইতিহাস ও বিশ্ববীক্ষায় এই গ্রহের সার্বিক আয়োজন মানুষের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন মেটানোর নিমিত্তে সজ্জিত। এ ধরনের চিন্তা আজ এতটাই উৎকট চেহারা ধারণ করেছে যে, এ’কে কেবল ‘মনুষ্যকেন্দ্রিক’ চিন্তা বলাই আর‍ যথেষ্ট নয়; বরং এ’কে ‘মনুষ্যসর্বস্ব’  চিন্তা বলাই যুক্তিযুক্ত।

‘মানুষী’ এই বিশ্ববীক্ষার পাটাতনে দাঁড়িয়ে যারা সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে জরুরি ও সঙ্গত লড়াই করেন, তাদের ভাবিত ও অধীত বিষয় মানুষে মানুষে পার্থক্য ও বৈষম্য। মানুষে মানুষে পার্থক্য ও বৈষম্যজনিত অন্যায়ের অবসান ঘটানোই ‘সামাজিক ন্যায়কেন্দ্রিক’ তৎপরতার লক্ষ্য ও অন্তিম গন্তব্য। ধরেই নেয়া হয় যে, ‘বিপুলা পৃথিবী’র অফুরন্ত ভাণ্ডার মানুষী-যজ্ঞ মেটানোর জন্য সদা-প্রস্তুত। ব্রুনো লাতুর কথিত প্রকৃতি বনাম সংস্কৃতির এক আশ্চর্য মহাবিভাজনের ওপর দণ্ডায়মান এই জগৎবীক্ষা; যেখানে ‘প্রকৃতি’র কাজ কেবল মানুষী ভোগ-বিলাসের কাঁচামাল/রসদ জোগানো। আবার আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে নিঃশর্ত, তাদের কাজ হয়ে দাঁড়ায় আইনগত ও অর্থনৈতিক বণ্টনে সাম্য ও সুষমতা নিশ্চিত করা। কিন্তু রসদের পর্যাপ্তি নিয়ে মনুষ্যবাদীদের কোন প্রশ্ন নেই। এ প্রসঙ্গে দীপেশ চক্রবর্তীকে উদ্ধৃত করার সুযোগ হাতছাড়া করা মুশকিল:

“পৃথিবীর কাছে ও অন্য প্রাণীর কাছে মানুষের যে কী এবং কত পরিমাণে ঋণ, মানুষ যেন ভেবেছিল তা সম্পূর্ণ ভুলে মেরে দিয়েও নিজের ক্ষমতা, সুখস্বাচ্ছন্দ্য আর মুনাফা অনির্দিষ্ট ভাবে বাড়িয়ে চলবে। এই সহজ কথাটাও মনে থাকে না, যে অক্সিজেন ব্যতীত আমরা বাঁচতামই না, তাও বাতাসকে জোগান দেয় নানান ‘মনুষ্যেতর’ প্রাণী, এবং এই পৃথিবী গ্রহটির নানান প্রক্রিয়া। এই ভুলে-যাওয়াটার প্রথম শুরু ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী দিনগুলোতে, ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার সূচনায়। তার পর সেই পশ্চিম-প্রদর্শিত পথে অন্যান্য দেশের নেতারাও হেঁটেছেন।

অনেক দিন ধরে শিল্প-সভ্যতার সমাজপতি মানুষেরা, তাঁরা শিল্পপতিই হন বা দার্শনিক— মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন মর্তেই স্বর্গরচনার। পন্থা নিয়ে অবশ্যই তর্ক হয়েছে— ধনতন্ত্র না সমাজতন্ত্র, রক্তক্ষয়ী বিপ্লব না শান্তিপূর্ণ পথ, মুক্ত বাজারের অর্থনীতি না কি রাষ্ট্রের মালিকানায় শিল্প, এই সব আলোচনা। যুদ্ধ-বিগ্রহ-বিপ্লবী হিংসা। তবু মানুষ নিজের অবস্থার উন্নতিকেই, কবির ভাষায়, ‘পৃথিবীর ক্রমমুক্তি’ বলে ভুল করেছে। যেন পৃথিবীটা, সেই কবীর সুমনের গানের কথার মতো, ‘সব আমাদের জন্য, আমাদেরই জন্য।’ পৃথিবীতে প্রাণের আয়োজন কিসে বজায় থাকে, বন্যপ্রাণী বা গাছগাছালি না থাকলে মানুষের কী ক্ষতি, সে সব ভুলে শুধু নিজের অবস্থার লাগামছাড়া উন্নতির সাধনায় মানুষ ডেকে এনেছে নিজেরই সর্বনাশ। কৃষিজমি, বাসস্থান, ফসলজাত জ্বালানি, খনিজ পদার্থ ইত্যাদির খোঁজে ক্রমাগত জঙ্গল কেটে ফেলায় আমরা এসে পড়েছি এক অতিমারির যুগে, যখন ঘন ঘন অতিমারির আক্রমণ সম্ভব। আর জঙ্গল কেটে ফেলার সঙ্গে শুধু যে ভাইরাসের কথা বা বন্যপ্রাণীর ঘরছাড়া হওয়ার গল্প জড়িয়ে আছে তা নয়, জড়িয়ে আছে যে সব গ্যাস বাতাসে নির্গত হয়ে পৃথিবীর উপরিভাগের তাপমাত্রা বাড়ায়, সেই সব গ্রিনহাউস গ্যাসেরও গল্প। অর্থাৎ, আজকের অতিমারি আর পৃথিবীর উষ্ণতাবৃদ্ধি, দু’টি আলাদা কাহিনি নয়। আমাদের সার্বিক সঙ্কটেরই দু’টি ভিন্ন প্রকাশ।” (দীপেশ ২০২১ খ)

কিন্তু আজ মানুষের এই প্রবল আত্মকেন্দ্রিকতা বিষয়ে কার্যকর প্রশ্ন উঠেছে। মানুষই তুলছে প্রশ্ন। যে ছকে এতদিন মানব-অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করার চল ছিল, তার বিপদ সম্পর্কে নানা শাস্ত্র আজ ওয়াকিবহাল। মানুষকে মহাবিশ্ব ও ইতিহাসের নায়ক ধরে নিয়ে সাম্য, স্বাধীনতা, মুক্তির বাণীতে মূর্ছিত হওয়া বিষয়ে সন্দেহ প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। মহামারী বা সার্বিকভাবে পরিবেশগত সংকটের ফলে মানুষী–যজ্ঞ সংকোচনের কথা উঠছে। যে ধরনের ইতিহাস ও তত্ত্ব চর্চা এই গ্রহের ওপর মানুষের সার্বভৌমত্ব/উপনিবেশ নাকচ করে দিয়ে মানুষকে আর দশটা প্রজাতির মতো এক প্রজাতি; অর্থাৎ মানুষের ‘ভূ–তাত্ত্বিক কর্তাসত্তা’ (geological agency)-কে ‘জীবতাত্ত্বিক কর্তাসত্তা’ (biological agency)-তে সংকুচিত করবে; ইতিহাসের ‘নায়ক’ হিসেবে মানুষকে বিবৃত না করে সার্বিক জীবনের ইতিহাসে মানুষকে অবস্থিত করবে ( ‘আরেক টোয়েন্টি টোয়েন্টি: পৃথিবীর উষ্ণতা–বৃদ্ধি ও মানুষের ইতিহাস’, দীপেশ ২০১৬); তেমন ইতিহাস ও তত্ত্ব-চর্চার জরুরতকে আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ, প্ল্যানেটারি তথা গ্রহীয় ইতিহাস, বিজ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষ আর সমস্তকিছুর কেন্দ্রে নয়। ‘গ্রহীয়’ এমন এক ঐতিহাসিক-দার্শনিক বর্গ যা মানুষকে কেন্দ্রচ্যুত করে গ্রহের সার্বিক স–জীব ও অ–জীব সত্তার প্রসঙ্গকে মুখ্য করে তোলে। সার্বিক জীবনের ইতিহাসের অংশ হিসেবে মানুষ প্রজাতিকে পাঠ ও পুনর্নির্মাণ করে।

তাহলে এক্ষেত্রে ইতিহাসের কাজ বা ভূমিকা কী? দীপেশ চক্রবর্তী মনে করেন, গ্রহীয় পরিপ্রেক্ষিত থেকে জীববৈচিত্র‍্যের সঙ্গে মনুষ্য-সভ্যতার সম্পর্ক ভাবাই নতুন ইতিহাস-চর্চার কাজ (দীপেশ ২০২১ক)। প্রথাগত পুঁজিবাদের বিশ্লেষণে যে সকল বিদ্যার অধ্যয়ন করতে হয়; যেমন ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, সাহিত্য ইত্যাদির সাথে ভূ-তত্ত্ব, জেনেটিকস, জীববিজ্ঞান, জীব ও প্রাণের ইতিহাস সংশ্লিষ্ট নানাবিধ বিদ্যা অধিগত করতে হয়। অর্থাৎ পুঁজির ইতিহাসের সঙ্গে পৃথিবী ও প্রাণের ইতিহাস এক বিন্দুতে এসে পৌঁছানোর ফলে গ্লোবাল ও প্ল্যানেটারি তথা মানুষী ও গ্রহীয়’র যুগপৎ বোঝাপড়ার কোন বিকল্প নেই। এই অপারগ ও নিরুপায় পরিস্থিতি মানবতাবাদী সমাজ-তাত্ত্বিককে বিজ্ঞানের সাথে এবং ইতিহাসবিদকে সময়ের প্রচলিত ধারণা সম্পর্কে নতুন সংলাপে লিপ্ত হওয়ার দিকে ধাবিত করছে। ফলে এই নতুন পরিস্থিতি অনুধাবন ও মোকাবেলায় পুনর্গঠিত বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই বিশ্ব-নাগরিককে স্ব-স্ব নৈতিক ও রাজনৈতিক বর্গসমূহকে বাছাই করতে হবে বলে আমরা মনে করি।

এ-ও খেয়াল রাখা জরুরি, প্রগতিশীল সামাজিক ইতিহাসে এ যাবৎ ‘এজেন্সি’-কে যে অর্থে পাঠ ও নির্মাণ করা হয়েছে; গ্রহীয় পরিপ্রেক্ষিতে ‘এজেন্সি’ কথাটির অর্থ মৌলিকভাবে আলাদা। এতকাল যা ছিল স্বায়ত্তশাসন ও সচেতন কর্তাসত্তা হাসিলের মামলা, তা আবির্ভূত হয়েছে মানুষী কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় এক নৈর্ব্যক্তিক ও অচেতন পুঞ্জিভূত ভূ-তাত্ত্বিক ক্ষমতা হিশেবে। মানুষ না পারছে এই ‘এজেন্সি’কে অস্বীকার করতে, না পারছে এ’কে হজম করতে: “The use of the word agency in the expression ‘geological agency’ was very different from the concept of ‘agency’ that my historian-heroes of the 1960s — E.P. Thompson, for instance, or our teacher Ranajit Guha —had authored and celebrated. This agency was not autonomous and conscious, as it was in Thompson’s or Guha’s social histories, but that of an impersonal and unconscious geophysical force, the consequence of collective human activity.” (Chakrabarty 2021: 3)

সুতরাং, এই কিংকর্তব্যবিমূঢ় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েই তাহলে আলোকায়ন ও আধুনিকতার সূত্র ধরে ‘মানুষ’ কথাটার যে বিশেষ দ্যোতনা প্রচলিত আছে; তাকে ছাপিয়ে গ্রহীয় পর্যায়ে ‘মানুষ’ ও সার্বিক প্রাণের তাৎপর্য আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।]

মূল সাক্ষাৎকার

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক যাত্রার পরিসর উত্তর-উপনিবেশিক বিষয় থেকে শুরু করে [গ্লোবায়ন-উত্তর পরিপ্রেক্ষিতে] পরিবেশগত সংকট পর্যন্ত ব্যাপ্ত। এই দুই ধরনের ভাবনার মধ্যে আপনি কী সংযোগ স্থাপন করেছেন?

দীপেশ চক্রবর্তী: আমার যাত্রা গভীরভাবে গ্লোবায়নের (Globalization) সাথে সম্পর্কিত: উত্তর-উপনিবেশিক বিষয়াদির প্রতি আমার আগ্রহ একটা বৈশ্বিক ঘটনারই অংশ। উদাহরণস্বরূপ: ১৮ শতকের পরিপ্রেক্ষিতে একক সাম্রাজ্যিক আধিপত্যের জন্য লড়াইরত ফরাসি এবং ব্রিটিশদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের শেষ রঙ্গমঞ্চ ছিল ভারত। এবং এই দ্বন্দ্বে ফরাসিরা হেরে গিয়েছিল। একবার ভারত সফরকালে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ই.পি. থমসন লক্ষ্য করেছিলেন যে ভারতীয় মার্কসবাদ ইংরেজ মার্কসবাদের মতোই অভিন্ন। আমার এক বন্ধু জবাব দিয়েছিলেন, “যদি তাই হয়, এর কারণ ডুপ্লিক্স নামে পরিচিত ফরাসি জেনারেল ভারতীয় সাম্রাজ্য হারিয়েছিলেন এবং ক্লাইভ নামে পরিচিত ইংরেজ জেনারেল এটি জিতেছিলেন; এর কম বা বেশি নয়। ভারত যদি ফরাসি সাম্রাজ্যের অধীন থাকত, তবে প্রত্যেকেই কাঠামোবাদের ভাষায় কথা বলতো। তোমরা আমাদের শাসন করেছো, তাই আমরা তোমাদের ভাষায় কথা বলি। তবে এর সাথে ফরাসিদের বিশ্ববীক্ষার কোন সম্পর্ক নেই।”

সাম্রাজ্যের বিলোপের সাথে সাথে সময়টা সাম্রাজ্যবাদী ধ্যান-ধারণা বিরোধী ছিলো এবং এটাই আমি আমার বাবা-মা’র কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলাম। আমার বাল্যকালে, অর্থাৎ ৬০’র দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো, তাদের অভিবাসনের বিধি-নিষেধকে শিথিল করতে শুরু করে, যা আমার শ্রেণীর লোকেদের পশ্চিমমুখী অভিবাসনে উৎসাহিত করেছিল। অবশ্যই, শ্রমজীবী শ্রেণীর অভিবাসনের শুরু আরো অনেক আগেই এবং উপনিবেশোত্তর ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সে পেশাজীবী বর্গের লোকেরা যেতে শুরু করার অনেক আগেই আফ্রিকান বা ক্যারিবিয়ানদের উপস্থিতি সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সমস্ত গোষ্ঠীর মানুষেরা এমন ধরনের বর্ণবাদের মুখোমুখি হয়েছিল যাকে আমি ‘সাম্রাজ্যবাদ-উত্তর’ বর্ণবাদের মেট্রোপলিটন রূপ হিশেবে আখ্যায়িত করে থাকি। ভারতবর্ষ যখন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল তখন ইংল্যান্ডের ইংরেজরা ভারতীয়দের প্রতি এর চেয়ে বেশ কম বর্ণবাদী ছিলো!

নানাদিক থেকেই উত্তর-উপনিবেশবাদ ছিল সাম্রাজ্যোত্তর (পোস্ট-ইম্পিরিয়াল) বর্ণবাদের প্রতিক্রিয়া; তবে একই সাথে, এটি গ্লোবায়ন প্রক্রিয়ারও একটি গতিশীল অংশই বলতে হবে। আপনি যদি একবার ভাবেন, ২০০০ সালের দিকে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত ভোক্তা শ্রেণীর বেশিরভাগ অংশ ইউরোপীয় এবং আমেরিকান, উত্তর আমেরিকানদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। আজকে, অ-ইউরোপীয় এবং অ-আমেরিকান, বিশেষত চীনা এবং ভারতীয়রা এই শ্রেণীর সবচেয়ে বড় অংশ। ইউরোপীয় এবং আমেরিকানরা এখন বিশ্বের ভোক্তা শ্রেণীর মাত্র ৩৫% অংশ। একরকমভাবে বলতে গেলে, গ্লোবায়ন সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা ইতিহাসের চেতনা অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে যা আমরা আমাদের চোখের সামনে লিখিত হতে দেখেছিলাম। আমার জীবন এই ঐতিহাসিক প্রবাহেরই অংশ। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, একটা গ্লোবায়ন-উত্তর সংবেদনশীলতার বিকাশ একটি মুখ্য দৈবাৎ ঘটনা ছিল।

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: কখন আপনার জন্য এই পরিপ্রেক্ষিতের পরিবর্তন ঘটলো, যা আপনাকে আজ ‘গ্লোবাল’ থেকে  ‘প্ল্যানেটারি’র দিকে প্রশ্ন করতে পরিচালিত করে?

দীপেশ চক্রবর্তী: ফরাসি দার্শনিক ক্যাথরিন ম্যালাবুর সাথে কথোপকথনের ফলে আমি এইভাবে বিষয়গুলো সূত্রবদ্ধ করতে শুরু করেছিলাম, তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন কীভাবে তার জন্য, গ্লোবায়নের ‘গ্লোব’ এবং বৈশ্বিক [গ্লোবাল] উষ্ণতার ‘গ্লোব’ এর দুটি পৃথক অর্থ রয়েছে। এটি আমাকে বহু প্রশ্ন স্পষ্ট করতে সহায়তা করেছিল, আমি আসলে যা নিজেকে দীর্ঘকাল ধরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আমি আমার পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলাম; সেখানে চমৎকার আউটডোর ও প্রকৃতি আবিষ্কার করেছিলাম, এবং আমার আবিষ্কারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ২০০৩ সালে এক নজিরবিহীন খরার মাঝামাঝি সময়ে, রাজধানী ক্যানবেরায় একটি বিশাল অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে ৩০০ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, প্রায় ২৫ জন লোক প্রাণ হারান, কয়েক হাজার প্রাণী মারা যায়, এবং আমার পছন্দের শহরের চারপাশের সমস্ত উদ্যান পুড়ে খাক হয়ে যায়। তখন, আমি অবাক হয়েছিলাম যে এই জাতীয় ধ্বংসাত্মক অগ্নিকাণ্ড কীভাবে ঘটতে পারে, এবং আমার অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশবিদ বন্ধুরা, আমাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এই খরা স্বাভাবিক নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি। আমি [তাদের] প্রশ্ন করেছিলাম, জলবায়ু পরিবর্তন কী। আমার কোনও ধারণা ছিল না, এবং [এ সম্পর্কে] পড়ে অবাক হয়েছিলাম যে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করছেন যে, পরবর্তী বরফযুগকে ৫০,০০০ বছরেরও বেশি পিছনে ঠেলে দেওয়ার ক্ষমতা মানুষের রয়েছে। একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে, আমি মানুষের ক্ষেত্রে এই সুবিশাল মাত্রার ব্যাপ্তি প্রয়োগ করার কথা কখনোই ভাবিনি। আমি সর্বপ্রথমে এবং সর্বাগ্রে ৫০০ বছরের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় সম্প্রসারণ, উপনিবেশায়ন বিষয়ের একজন ইতিহাসবিদ ছিলাম। এবং আমি নিজেকে বলেতাম যে গ্রহ সংক্রান্ত যাবতীয় কিছু করা ছিলো বিজ্ঞান জগতের এখতিয়ারের বিষয় এবং এতে আমার আগ্রহী হওয়ার প্রয়োজন নেই।

আমি প্রায়শই এই ঘটনার সাথে ডাইবেটিক হওয়ার তুলনা করি যা অধিকাংশ ভারতীয়দের দশা। আপনার ডাক্তার আপনাকে রাতারাতি বলবে আপনার ডাইবেটিক রয়েছে, তিনি আপনাকে প্রশ্ন করবেন এবং তারপর আপনার গল্পের ফিরিস্তি বাড়তে থাকবে! আমার ডাক্তার আমাকে প্রথমে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে অধ্যাপক হওয়ার ফলে আমি পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতাম না। তবে তারপর তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন আমার বাবা-মা’র ডাইবেটিক ছিল কিনা, যা আমাদের জেনেটিকসের ভূবনে নিয়ে গিয়েছিল, এবং আমার প্রধান আহার্যের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি যখন ভাতের কথা উল্লেখ করি, সত্যিই তিনি বলেছিলেন যারা ভাত খায় প্রায়শই তাদের শেষ পরিণতি ডাইবেটিক। আপনি কত সময় ধরে এই খ্যাদ্যভ্যাস অনুসরণ করছেন? আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম : ৫০০০ বছর ধরে! এক লহমায় আমার ব্যক্তিগত গল্প আর বিগত ৫০০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না; এটি কৃষির ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে গেল।

দীপেশ চক্রবর্তী

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: আপনি ‘গ্লোবাল’ বা ‘বৈশ্বিক’ [মানুষী] এবং ‘প্ল্যানেটারি তথা গ্রহীয়’র [না-মানুষী] মধ্যে যে পার্থক্যের প্রস্তাব রেখেছেন তাতে আপনি জোর দেন যে, বৈশ্বিক ইতিহাসের ধারণাটি কীভাবে সীমিত পরিপ্রেক্ষিতের সাথে, মানে ইউরোপের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। ঠিক কীভাবে বিশ্বায়ন (গ্লোবালাইজেশন) নিয়ে কথা বলা ইউরোপকেন্দ্রিকতা?

দীপেশ চক্রবর্তী: কারণ এটি এমন এক প্রক্রিয়া থেকে উদ্ভূত যাকে হাইডেগার বলেছিলেন ‘দুনিয়ার ইউরোপীয়করণ’। ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক এই ধারণা আধুনিক যুগে জন্মেছিল, যখন ইউরোপয়ীরা তাদের সাম্রাজ্য গড়ার জন্য মহাসাগরগুলি সম্পর্কিত জ্ঞানকে আরও গভীর ও অগ্রযাত্রার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। মহাসাগরগুলো আবিষ্কার এবং এগুলোকে অতিক্রম করার সামর্থ্য চূড়ান্ত স্পর্ধার প্রতিনিধিত্ব করেছিল। ইউরোপীয় সম্প্রসারণ ও বাণিজ্য, এবং মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা ও নৌচালনবিদ্যাগত সরঞ্জামগুলোর বিকাশের এসবের প্রভাব থেকে ‘পৃথিবী’ নামে যাকে অভিহিত করা হয়েছিল তাকে পৃথক করতে পারবেন না। আধুনিকতা যাকে ‘গ্লোব’ বলে এবং আমি যাকে ‘প্ল্যানেট’ বলি তার মধ্যে আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, গ্লোব আমাদের উপলব্ধিতে সহজগম্য একটি উপাদান হিসাবে উপস্থিত হতে পারে: এমনকি টেলিস্কোপ আমাদের চোখের সক্ষমতা বাড়ানোর একটি মাধ্যম ছিল; যেখানে কিনা বিজ্ঞানীরা আজকে যাকে ‘প্ল্যানেট’ বলে থাকেন তা সর্বাগ্রে মানসিক, বৌদ্ধিক পুনর্নির্মাণের একটি বিষয়।

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: আপনি কিন্তু এটার উপর জোর দিয়েছেন: এমনকি যদিও গ্রহের চিত্রটি, যেহেতু এটি ভূ-ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান (Earth System Sciences) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তা খুব বিমূর্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যের সমষ্টি, তবু এটি এক ধরনের অস্তিত্বজনিত উদ্বেগের বিষয় [অবজেক্ট]। আধুনিকতা যদিও আমাদেরকে ভাবাবেগ থেকে নির্মোহ [অবজেক্টিভ] বিজ্ঞানকে আলাদা করতে অভ্যস্ত করেছিল।

দীপেশ চক্রবর্তী: বস্তুত, যে বিজ্ঞানীরা ভূ-ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তৃত কাজ করছেন, তাদের বিষয়ের [অবজেক্ট] প্রতি যে পরিমাণ সংবেদনশীল মনোভাব রয়েছে তা দ্বারা আমি প্রায়শই অভিভূত হয়েছি। এমনকি এটি যদি এমন কিছু না-ও হয় যা আমরা নিজেদের চোখে দেখে উপলব্ধি করতে পারছি, তারপরও এই বিষয়টি আমাদের প্রভাবিত করে, বিজ্ঞানীরা যখন এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেন: আমরা কি এই গ্রহকে পরিচালনা করতে পারি? আমরা কি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? আমরা কি গ্রহীয় ব্যবস্থার শাসক হয়ে উঠতে পারি? ইতিবাচক অ্যানথ্রোপসিন কি থাকতে পারে? এই সমস্ত প্রশ্ন অস্তিত্বজনিত প্রশ্ন থেকে উদ্ভূত: আমরা যদি এইসব কিছু করতে সক্ষম না হই তবে [মানুষের] কী হবে? একটি বিমূর্ত সত্তা হিসাবে গ্রহকে তাদের মনে পুনর্গঠন করার সময় তারা সর্বাধিক মানব অস্তিত্বগত দিক থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দেন। ‘কীভাবে গ্রহ মনুষ্যকেন্দ্রীক চিন্তার একটি বর্গে পরিণত হলো?’ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমার সূচনা বিন্দু হচ্ছে, যে পরিস্থিতিকে বিজ্ঞানীরা মোকাবিলা করছেন, যেভাবে তারা অভিজ্ঞতা লাভ করা যায় না এমন একটি বিষয়ের [অবজেক্ট] অভিজ্ঞতা লাভ করেন।   

Indiscriminate deforestation; Alfredo Martirena; 22 September 2020

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: আপনি ভূ-ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানের যে চেহারা দেখান তা আমরা সাধারণত যাকে ‘প্রতিবেশ-সংক্রান্ত সচেতনতা’ বলি তাকে জটিল করে তোলে; উদাহরণস্বরূপ, ‘প্রতিবেশসংক্রান্ত সচেতনতা’ দুনিয়ার স্বাতন্ত্র্যের ওপর জোর দেয়, ‘প্ল্যানেট বি বা অন্য কোনো গ্রহ নেই’ এই বাস্তবতার ওপর জোর দেয়। অন্যান্য গ্রহের সাথে তুলনা করে আমাদের গ্রহকে বোঝার জন্য বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টাকে আপনি কতটা জোর দেন, এটা বাস্তব বা সম্ভব?

দীপেশ চক্রবর্তী: এটি সমসাময়িক গ্রহীয় বিজ্ঞানের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। যেমন, বৈশ্বিক উষ্ণতা: আপনি যখন একবার কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রভাব সম্পর্কে জানবেন, আপনি তখন মঙ্গলগ্রহ কেন শীতল এবং শুক্রগ্রহ কেনো উষ্ণ তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাই না? এটি সেই অর্থে তুলনামূলক। আমাদের দুনিয়াকে এর এককত্বসহ বুঝলে এটি অন্যান্য গ্রহীয় রূপরেখাগুলোকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসবে। এমনকি, ‘কোন বিষয়গুলি গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলে?’ এই প্রশ্নটাও স্বাভাবিকভাবে তুলনামূলক; এমনকি আমাদের কাছে এই মুহুর্তে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আর কোনও বাসযোগ্য গ্রহ না থাকলেও, আমরা কল্পনা করে নিতে পারি যে অন্য কোনো গ্রহে যদি জীবন থাকতো, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন সেখানে প্রয়োগ করা যেতো, যেমন প্রাকৃতিক নির্বাচন, ইত্যাদি। তাহলে আমরা জানতে পারতাম যে কিভাবে একটা গ্রহ বসবাসযোগ্য করা যায়। মানুষের কার্যকলাপ ভাবনার কেন্দ্রে থাকা উচিত এবং আমাদের পৃথিবীর উদ্বেগজনক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার জন্য মানুষের কার্যকলাপই একমাত্র প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত, এটি এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায়। একই সাথে, এই তথ্যও আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না যে, আজও গ্রহের বিভিন্ন ধারণায়ন সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে: যেমন করে লাতুর বলছিলেন, সময়ের সাথে সাথে মানুষ কেবল বিভিন্ন উপায়ে গ্রহটির কল্পনা করেনি, বরঞ্চ আজকাল ইলন মাস্কের গ্রহের ধারণা বা ট্রাম্পের ধারণা ভূ-ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানীদের মতো নয়।

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: আপনি উল্লেখ করেছেন যে গ্রহ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা আমাদের দুনিয়া সম্পর্কিত প্রচলিত চিন্তাভাবনার মুখোমুখি রূপের সাথে একটা বিচ্ছেদও। আমি আপনাকে উদ্ধৃতি করছি : ‘গ্রহের সাথে মোলাকাত হওয়ার মানে হচ্ছে এমন কিছুর সাথে মোলাকাত যা মানব অস্তিত্বের শর্ত, তবুও [মানব] অস্তিত্বের প্রতি গভীরভাবে নির্বিকার।’ এই না-মানবিকের মুখোমুখি হয়ে আমরা আমাদের প্রাচীনদের ‘নিয়তি’র [ফ্যাটম] প্রতিধ্বনি যেন শুনতে পাচ্ছি।

দীপেশ চক্রবর্তী: অধিকাংশ ধর্মীয় মতবাদ – খ্রিস্টান, ইসলাম, ইহুদী, এমনকি হিন্দু ধর্ম মানুষকে ‘বিশেষ’ হিশেবে উপলব্ধি করতে শেখায়। তার বিপরীতে কেউ বলতে পারে যে এই বসুন্ধরা আমাদের পানে ফিরে তাকায় না। হাইডেগারের ধারণায়, আপনি যখন কোন গাছের কাছে যান, তখন মনে হয় যেন পৃথিবী আপনাকে একটি ফল দিয়ে বরণ করার জন্য গাছটিকে প্রাণরস দিয়ে প্রেরণ করেছে। অবশ্যই, তিনি আরো যুক্ত করেছেন যে, পৃথিবীর সাথে আমাদের সম্পর্ক বসবাসজনিত বিরোধের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা নিরাপদ থাকতে চাই; তবে ভূমিকম্প, বজ্রপাত, বন্যপ্রাণী, বন্যা ইত্যাদি কারণে কখনোই সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে পারবো না। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উল্লেখ করেছেন যে, যদি বিরোধ থাকে, তাহলে সেখানে পারস্পরিকতাও আছে।

ঠিক উল্টোভাবে, গ্রহীয় অভিজ্ঞতার অর্থ হলো এমন কিছুর অভিজ্ঞতা নেয়া যা সম্পূর্ণভাবে অ-পারস্পরিক। এটি নির্দিষ্ট প্রাচীন আধ্যাত্মিকতাকে অধিক স্মরণ করিয়ে দেয়, এবং আপনি ঠিক বলেছেন: আমি সবসময় নিজেকে এই বলেছি যে আমার কাজ সম্ভবত স্টয়িসিজম থেকে উদ্ভূত। আমার মতে, গ্রহীয় ধারণাটি সকল দিক থেকে এত না-মানবিকভাবে বিশাল যে, আমরা এর উপর নির্ভর করি, আমরা এর করুণায় রয়েছি, এবং এই পরিস্থিতি আমাদের ধন্দে ফেলে দেয়। এছাড়া এটিই আমাকে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে যে পুঁজিবাদকে উৎখাত করাই সমস্যা সমাধানের জন্য হয়তো যথেষ্ট: এই ধরনের একটা সংকটের মুখে, মানব সময়ের মাপকাঠিতে এবং মানব প্রতিষ্ঠান দ্বারা কিছু সমস্যা সমাধান করা যায়, কিন্তু উত্তরের সাপেক্ষে কিছু প্রশ্ন সত্যিই অনেক বিশাল। স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে, আপনার স্টয়িক সহায়তা প্রয়োজন।

The Climate of History in a Planetary Age

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: এর অর্থ কি এই, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হতে বৈশ্বিক দিগন্ত নাগালের বাইরে? আপনার জন্য  ঠিক কোন অর্থে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতের সাথে আমাদের রাজনৈতিক ধারণা সমূহ সংযুক্ত?

দীপেশ চক্রবর্তী: এই জায়গায়, আমি প্লেটোর গুহা রূপক নিয়ে হাইডেগারের পাঠ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম। আপনি জানেন, তিনি সূর্যরশ্মি এবং এটি যে বাস্তবতা দেখায় তার মধ্যকার ফারাকের ওপর জোর দিয়েছিলেন: বন্দি যখন গুহা থেকে পালিয়ে যান তখন তিনি গাছপালা, পাখপাখালি, পাহাড়-পর্বত এবং এমন প্রতিটি বাস্তবতার একেকটি রূপকে ঠাহর করেছিলেন; কিন্তু যেখানে আলো আমাদেরকে এই রূপগুলোর মধ্যে ফারাক করতে সক্ষম করে তোলে, সেখানে খোদ আলোর কোন নিজস্ব রূপ নেই, ফলে সরাসরি তাকে উপলধ্বি/ঠাহর করা যায় না। একইভাবে, আমরা যখন নিজেদের প্রশ্ন করি যেমন ‘ভারত কি চীনের চাইতেও বেশি গণতান্ত্রিক দেশ?’ বা ‘ভারত কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে?’ অথবা যখন কেউ দাবি করেন যে জলবায়ুজনিত ন্যায়বিচার থাকা উচিত, এটা কেবল আনুষ্ঠানিক প্রত্যয়গুলোকে সংহত করার মাধ্যমেই করা যেতে পারে, এবং এই রূপগুলো কিছু উপায়ে বৈশ্বিক তথা মানুষী সীমার ওপর নির্ভর করে। এই বৈশ্বিক সীমার মধেই আমরা চিন্তাভাবনা করি, আমাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক করণীয়’র জন্ম হয়।

কিন্তু, এই গ্রহ নিজে এমন একটি বিষয় যা কোনও বৈশ্বিক উপলব্ধিকে ছাড়িয়ে যায়: আমরা এর সাথে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যকে জুড়ে দেই, যেমন সামুদ্রিক ঢেউ বা টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি; আমরা এটি টুকরো টুকরো করে কল্পনা করি, যেমন ভূতত্ত্ব পাঠ্যপুস্তকের নকশাসমূহ, মডেলসমূহ; কিন্তু এটি পটভূমিতে থেকে যায়। ফলে হাইডেগারের সেই রূপকপাঠের মতন এই গ্রহ কিছুটা আলোর মতন। এটি রূপগুলোর অনানুষ্ঠানিক অবস্থা। এবং এই কারণেও এটি রাজনীতিকরণকে প্রতিরোধ করে। গ্রহের ইতিহাসে এমন কিছুই নেই যা আমাদের রাজনীতির অপরিহার্যতাকে ভিত্তি প্রদান করে। জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ নিন: এক অর্থে এটা একটা ইস্যু যা কেবল মানবজাতিকেই আগ্রহী করে তোলে, কারণ তারা জীববৈচিত্র্যের ফসল, জীবনের বহুকোষী রূপের ফসল। তবে এই বহুকোষী জীবন মাত্র ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে দেখা দিয়েছিল, যেখানে পৃথিবীর বয়স চার বিলিয়ন বছরেরও বেশি: কোনও কিছুই এটিকে বাসযোগ্য হতে বাধ্য করেনি! পৃথিবী নামক এই গ্রহটি, জীবন ব্যতীত, অন্য যে কোনও গ্রহের মতোই হতে পারতো।

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: এই নতুন পরিপ্রক্ষিতে আপনি কি তাহলে বলবেন যে, আমাদের কাজ হলো সন্নিকটে থাকা রাজনৈতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলায় নতুন রূপ/ধরন উদ্ভাবন করা? নাকি গ্রহের উচ্চতায় আমাদেরকে তোলার জন্য চিন্তাভাবনা এবং সৃষ্টির অনানুষ্ঠানিক উপায়ের সন্ধান করা?

দীপেশ চক্রবর্তী: সদ্য শেষ করা [The Climate of History in a Planetary Age বইটি এই সাক্ষাৎকার প্রদানের সময়ে অপ্রকাশিত থাকলেও, ইতোমধ্যে এটি প্রকাশিত-অনুবাদক] আমার বইয়ের শেষ অধ্যায়ে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি: ‘আপনি যখন স্বীকার করছেন যে এই গ্রহ আমাদের সাথে পারষ্পরিকতার সম্পর্কে নেই, তখন আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন তা কি ভেবেছেন?’ প্রথমেই পরিষ্কার হওয়া যাক: অস্তিত্বজনিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, মানুষকে অবশ্যই কিছু করতে হবে। এই গ্রহ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সক্রিয়তার কোন বিকল্প নেই, প্রতিক্রিয়ার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এর একটা অংশ হচ্ছে এইটা মেনে নেয়া যে, মানুষ বিশেষ কিছু নয়, জীবমণ্ডলের ওপর তাদের বিশেষ কোন দাবি নেই। ঘটনা হচ্ছে যে, অক্ষীয় ধর্মগুলো, অর্থাৎ ৫০০০ বছর পূর্বে শহরের গোড়াপত্তন হতে উদ্ভাবিত সকল ধর্ম, দাবি করে মানবজাতি আসলে বিশেষ কিছু। কিন্তু আপনি যদি আদিবাসী ধর্মগুলোর দিকে তাকান, যেমন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী, আফ্রিকান, ভারতীয় গোত্রসমূহ, আমেরিডিয়ান (এদুয়ার্দো ভিভেইরস দে কাস্ত্রো দ্বারা অধ্যয়নকৃত); তাহলে দেখবেন যে, এই ধর্মগুলো জীবনের অপরাপর রূপের সাথে জড়িত। এমনকি নদী, পর্বতের মতন অ-জীব [non-living] উপাদানের সাথে জড়িত। এবং এগুলো মানবজাতিকে বিশেষ কিছু বলে মনেও করে না।

আমি বুঝতে পারছি যে আমরা একটি জরুরি অবস্থার মুখোমুখি: শিল্প সভ্যতা ও জীবাশ্ম জ্বালানীর জন্য পৃথিবীতে আমরা এখন সংখ্যায় ৭.৫ বিলিয়ন; খুব দ্রুতই আমরা ৯ বিলিয়ন হবো। খুব দ্রুত আমাদের বৃদ্ধি ঘটছে: ১৯০০ সালে আমরা ১ বিলিয়ন বা তার একটু বেশি ছিলাম। সুতরাং, প্রশ্ন ওঠে: সীমিত-সংখ্যক বাসিন্দাদের জন্য নির্মিত বিগত সামাজিক-ব্যবস্থা কীভাবে এইরকম উচ্চমাত্রার জনসংখ্যার ঘনত্বের সাথে মানিয়ে নিতে পারে? বলা হচ্ছে যে, জীবন-রূপ হিশেবে আমরা এখনও সংখ্যালঘু। বর্তমান মহামারী আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, অনুপাতের দিক থেকে পৃথিবীতে জীবনের সিংহভাগ রূপ অণুজীবী। প্রাণীদের চাইতে অণুজীবের সংখ্যা ঢের বেশি, এবং প্রাণীর মধ্যে মানুষ একটি সংখ্যালঘু জীবন-রূপ। এবং জীবনের এই [সংখ্যালঘু] রূপটিই সার্বিক ব্যবস্থাপনা-বিন্যাসের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট তৈরি করেছে। 

সুতরাং, আমি মনে করি আমাদের সংখ্যালঘু চিন্তা-পদ্ধতি থেকে অনুপ্রেরণা নেয়া উচিত। এবং আমি শুধুমাত্র আদিবাসীদের কথা বলছি না; বরং ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যালঘু হিসেবে যেসব গোষ্ঠী বেঁচে ছিল এবং যারা চিন্তাভাবনার এমন একটা পদ্ধতি গড়ে তুলেছিল যা শাসন করার বাসনা থেকে পরিচালিত হয়নি, তাদের কথাও বলছি। আমাদেরকে পরাজিতের দিকে তাকাতে হবে; কাফকার দিকে, সংখ্যালঘু সাহিত্যের দিকে তাকাতে হবে। আধুনিক যুগের শুরুতে বা এমনকি বিশ্বায়নের যুগের শুরুর দিকেই হোক, আফ্রিকার উপকূলে বন্দর শহরগুলিতে ইহুদি, আর্মেনীয়, ভারতীয়দের মধ্যে ছোট ছোট বণিক দল বসবাস করত। গান্ধী যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণ করছিলেন, তিনি এইসব ছোট ছোট দলের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তিনি যে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে সমগ্র দুনিয়া থেকে মানুষ বসবাস করার জন্য আসতেন। আপনি যদি শুরুর দিকের গান্ধীকে পড়েন, আপনি বুঝতে পারবেন আমার জন্য সংখ্যালঘু চিন্তা-পদ্ধতির রূপটি কী।

Earth’s history, spiralling towards the present. USGS/Wikimedia Commons

ম্যাথিউ পোট-বোনেভিল: বিশ বছর আগে, বৈশ্বিক ইতিহাসের পরিপ্রক্ষেতি আপনি ‘প্রভিন্সিয়ালাইজিং ইউরোপ’ এর আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন মনে হচ্ছে আপনি খোদ বিশ্বায়নকে প্রাদেশিকীকরণের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন এবং আরও বিস্তৃত এক গ্রহীয় দিগন্তের প্রেক্ষপাটে আপনি মানবতাবাদকে পুনর্বিবেচনা করার কথা বলছেন, যেখানে আমরা নিজেদেরকে এর কেন্দ্রে দাবি না করেই নির্ভর করতে পারবো। 

দীপেশ চক্রবর্তী: একটা উদাহরণ নেয়া যাক: আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসে যে বাতাস নিই, আমাদের প্রত্যেকের জন্য এবং সম্মিলিত অস্তিত্বের জন্য অত্যাবশকীয়, উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর জন্যেও। এবং আমরা যদি এই পরিস্থিতির ইতিহাসের দিকে তাকাই, আমাদের ফুসফুসের ইতিহাসের দিকে, আমরা দেখতে পাবো যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর ধরে জীববৈচিত্র এমন ভারসাম্যে পরিবেশকে রেখেছে যা জঙ্গল পুড়ে যাওয়া, বা আমাদের দম বন্ধ হওয়াকে প্রতিরোধ করেছে। এই সেই বিষয় যাকে ভূ-ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানীরা গ্রহের ‘আধুনিক বায়ুমণ্ডল’ বলে অভিহিত করেন – এমন একটি আধুনিকতা যা অন্তর্গতভাবে মানবকেন্দ্রীক নয়, যদিও আমরা এর সুবিধাভোগী হয়েছি। প্রসঙ্গক্রমে, ইতিহাসবিদের কাছ থেকে রেঁনেসা বা আলোকায়ন যুগের সাপেক্ষে আধুনিক দুনিয়ার কথা শুনে আমি হাসি, কেননা ভূ-ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী বিজ্ঞানীদের জন্য এই সময়কাল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত বিস্তৃত। পরিপ্রেক্ষিতের এই পরিবর্তনটাই আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে: আমাদেরকে অবশ্যই এমন একটা জীবনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে যা এই নীতি থেকে শুরু হবে যে, আমরা সবকিছুর কেন্দ্রে নই, আমরা একটি সংখ্যালঘুর জীবন-রূপ, এবং আমরা চারপাশের অন্যান্য জীবন-রূপের ওপর নির্ভরশীল। আধুনিকতা— যাকে একজন মানবতাবাদী ইতিহাসবিদ পুঁজিবাদের উত্থানের সাথে মিলিয়ে দেখেন— না-মানুষী আধুনিকতার ওপর নির্ভরশীল যা কিনা আবার জীবের ভারসাম্যের সাথে যুক্ত। এবং খুব গভীর অর্থে আমি বলবো যে সমসাময়িক পুঁজিবাদ জীবন-বিরোধী।

রেফারেন্স:

দীপেশ চক্রবর্তীঃ ‘ভূমিকা: ইতিহাসের দীক্ষা’, ‘আরেক টোয়েন্টি টোয়েন্টি: পৃথিবীর উষ্ণতা–বৃদ্ধি ও মানুষের ইতিহাস’, ইতিহাসের জনজীবন ও অন্যান্য প্রবন্ধ, তৃতীয় মুদ্রণ, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০১৬

—: ‘সাম্প্রতিক ইতিহাস ভাবনা, আমার ইতিহাসের আলপথ ধরে’, মনোরথের ঠিকানা, অনুষ্টুপ, কলকাতা, ২০১৮

—: দীপেশ চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার: ‘জীববৈচিত্র‍্যের সঙ্গে মনুষ্য সভ্যতার সম্পর্ক ভাবাই নতুন ইতিহাস চর্চার কাজ’, সাক্ষাৎগ্রহণকারী: সারোয়ার তুষার, অরাজ, ঢাকা, ২০২১ক

—: ‘মানব-প্রজাতির লাগামছাড়া আত্মকেন্দ্রিকতায় আজ এ গ্রহ বিপন্ন’, আনন্দবাজার, কলকাতা, ২২ আগস্ট, ২০২১খ

Chakrabarty, Dipesh. ‘Communig with Magpies’, ‘From Civilization to Globalization: The ‘West’ as a shifting signifier in Indian Modernity’, The Crises of Civilization: Exploring Global and Planetary Histories, New Delhi: Oxford University Press, 2017.

—. Climate of History in a Planetary Age, Chicago: Chicago University Press, 2021.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *