বাংলাদেশ ভূখণ্ডে রাষ্ট্র ও সরকার গঠন বিষয়ক নির্বাচন– একটি প্রাথমিক আলোচনা

  • সাধনা মহল

১. শুরুর কথা

এ অঞ্চলের মানুষ প্রধানত তিন ধরনের নির্বাচনের সাথে পরিচিত। এগুলো হলো:

. স্থানীয় সরকার (স্থানীয় শাসন) নির্বাচন: স্থানীয় সরকার নির্বাচন হিসেবে প্রচার করা হলেও বাংলাদেশে কার্যত স্থানীয় শাসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ‘স্থানীয় সরকার’ বলতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, নগর কর্পোরেশনকে বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এগুলো বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্থানীয় এজেন্ট বা শাখা হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ সংবিধানে অবশ্য একে স্থানীয় শাসন নামেই অভিহিত করা হয়েছে। বর্তমান ধাচের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন করে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকেরা ১৮৮২ সালে। 

. সরকার গঠন বা পরিবর্তন তথা সংসদ বা আইন সভার নির্বাচন: সরকার পরিবর্তন বা নির্ধারণের নির্বাচনকে এখানে সাধারণ নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ধরনের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজের নিজের নির্বাচনী মেনিফেস্টো নিয়ে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের বিজয়ীরা সরকার গঠন করে। মূলত ৫ বছর কারা দেশ শাসন করবে তাই নির্ধারিত হয় এধরনের নির্বাচনে। দেশের সংবিধানের আলোকে আইনসভা আইন প্রণয়ন করে থাকে।

. রাষ্ট্র গঠন তথা সংবিধান সভার (constituent assembly) নির্বাচন: সংবিধান সভার নির্বাচনে নির্বাচিতরা দেশের সংবিধান প্রণয়ন বা পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। যেহেতু রাষ্ট্রের প্রকৃতি কি হবে, রাষ্ট্রের আদর্শ কি হবে, রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে তা সংবিধান নির্দেশ করে তাই একে রাষ্ট্র গঠন বা পরিবর্তনের নির্বাচন  বলা হয়। সাধারণত সংবিধান প্রণয়ন বা পরিবর্তনের পরপরই এ সভা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ অঞ্চলে সংবিধান প্রণয়নের সভাকে ‘গণপরিষদ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গণপরিষদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, সংবিধান প্রণয়নের পর ভেঙ্গে না দিয়ে এটাকে আইনসভায় রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৪৬ ও ১৯৭০ সালে ২ বার ২ টি গণপরিষদ নির্বাচন হয়েছে এদেশে।

. ইতিহাসের আলোকে অঞ্চলের নির্বাচন

. ব্রিটিশ উপনিবেশিক কাল পর্ব

এ ভূখণ্ডে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছিল ব্রিটিশ উপনেবিশিক প্রভুদের প্রয়োজনে, তাদের হাত ধরে। ১৭৫৭ সালে বাংলা দখলের পর প্রায় একশ বছর ধরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত শাসন করে। কোম্পানির শাসন-শোষণ-নির্যাতনে জেরবার ভারতবাসী— বিশেষত সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সৈন্যরা— ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহ করে যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে খ্যাত। এ বিদ্রোহের পরে ব্রিটিশ সরকার নিজ হাতে ক্ষমতা নেয় এবং পার্লামেন্টে ‘ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট, ১৮৫৭’ পাস করে। এই আইনে ব্রিটেনের রাণীকে ভারতের রাণী এবং সকল ক্ষমতার অধিকারী করা হয়। রাণীর পক্ষে ভারতে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য ‘ভাইসরয়’ (গভর্নর জেনারেল ) এবং ‘ভারত সচিব’ নামে দুইটি পদ সৃষ্টি করে একজন ব্রিটিশ মন্ত্রির ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। এটাই ছিল ভারতের প্রথম শাসনতন্ত্র। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার তাদের এই শাসনতন্ত্র কয়েকবার সংশোধন করেছে।

এ শাসনতন্ত্রের অধীনে অনেক আইন তারা প্রণয়ন করেছেন, যার মধ্যে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৮৬১’ নির্বাচন ও আইনসভার সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এই আইনে প্রথমবারের মতো ভারতীয় আইন সভায় ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে এতে নির্বাচিত প্রতিনিধির ব্যবস্থা ছিল না। উপনিবেশিক সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিরা সদস্য হতে পারতেন। ​‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৮৬১’-এর সংশোধনী আনা হয় ১৮৯২ সালে এবং এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথমবারের মত আইনসভায় সীমিত আকারে হলেও ভারতীয়দের নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সংশোধনীর পর আইনসভাগুলোতে ৪ ধরনের সদস্যের ব্যবস্থা করা হয়। এরা হলেন; পদাধিকার বলে সদস্য, মনোনীত সরকারি সদস্য, মনোনীত বেসরকারি সদস্য এবং নির্বাচিত সদস্য। ১৯০৯ সালে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট’ আরও একবার সংশোধন করা হয়। এতে ভারতের আইনসভাগুলোকে আরও সম্প্রসারিত করা হয়। নির্বাচিত সদস্য আসনে প্রথম সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ভোটাধিকার অনেক সহজ করা হয়। সম্প্রদায় ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় অর্থাৎ হিন্দু, মসুলমান, শিখ, খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মাবলম্বীদের জন্য আইন সভায় আসন নির্দিষ্ট থাকবে এবং এসব আসনে স্ব স্ব সম্প্রদায়ের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়ান অ্যাক্ট, ১৯১৯’ পাস হয়। এতে কেন্দ্রে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ব্যবস্থা চালু করা হয়। উচ্চ কক্ষের নামকরণ করা হয় ‘কাউন্সিল অব স্টেট’ আর নিম্ন কক্ষের নামকরণ করা হয় ‘সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ আসেম্বলী’। এই আইনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, আইন সভায় প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়। যদিও এসময় ভোটাধিকার ছিল সীমিত, অর্থাৎ সকল নাগরিকের ভোটাধিকার ছিল না। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্পদশালী, শিক্ষিত, সরকারি খেতাবপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মধ্যেই ভোটাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯২০ সালের হিসাব অনুযায়ী সমগ্র ভারতে ‘কাউন্সিল অব স্টেট’-এর ভোটার ছিল মাত্র ১৭,৩৬৪ জন। এবং ‘সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ আসেম্বলি’র ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ৯০৯৮৭৪ জন।

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালে। ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনবার এ নির্বাচনসমূহ অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৩৫ সালে পুনরায় ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়ান অ্যাক্ট’ সংশোধন করা হয়। এই আইনে কেন্দ্রীয় শাসনের জন্য একটি ফেডারেল সরকার, এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হয়।  এ আইনেও সম্প্রদায়ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা হয়। প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য সংখ্যা প্রদেশভেদে ভিন্ন ছিল। বাংলায় নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। এই ২৫০ আসনের মধ্যে সাধারণ ও তফসিলী হিন্দু মিলিয়ে ৭৮ আসন, মসুলমানদের ১১৭ আসন, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৯ আসন, ভু-মধ্যকারীদের জন্য ৫ আসন, শ্রমিকদের ৮ আসন এবং দুই সম্প্রদায়ের নারীদের জন্য ২টি করে ৪টি আসন এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য ১টি আসন সংরক্ষিত ছিল।

এই আইনের অধীনে প্রাদেশিক পরিষদের নিম্নকক্ষের জন্য ১৯৩৭ সালে একবার এবং ১৯৪৬ সালে আর একবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু উচ্চকক্ষের কোন নির্বাচন হয় নাই। নির্বাচিত আইনসভার মেয়াদ ছিল ৫ বছর। তবে গভর্নর জেনারেল ইচ্ছে করলে মেয়াদের আগেই আইন সভা বিলুপ্ত করতে পারতেন বা মেয়াদোত্তরকাল পর্যন্ত তা বহালও রাখতে পারতেন। ১৯৩৭ সালের ভোটার ছিল মোট জনসংখ্যার ১৪% এবং ১৯৪৬ সালে ১৫%। ১৯৪৬ সাথে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠনের লক্ষ্যে পরিষদ সদস্য নির্বাচিত করা হয়। জনসংখ্যা অনুপাতে বিভিন্ন প্রদেশের গণপরিষদ সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত করা হয়েছিল। প্রতি ১০ লক্ষ জনগণের জন্য ১জন সদস্য বরাদ্দ ছিল। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা গণপরিষদ সদস্য নির্বাচন করতেন।

ব্রিটিশরা এক ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ভারতে উপনিবেশ পরিচালনা করেছে। এজন্যে একটি ধারনা গড়ে উঠেছে যে তারা ব্রিটেনের অনুরূপ নির্বাচনী আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ ভারতেও করেছে। এটা সত্য নয়। ব্রিটিশ নির্বাচনী ব্যবস্থা আর ব্রিটিশ কলোনির নির্বাচন ব্যবস্থা এক নয়। প্রথমত উপনিবেশ টিকিয়ে রাখা এবং পরবর্তীতে তাদের অনুগতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার কৌশল হিসেবে ব্রিটিশরা নির্বাচন পদ্ধতি ব্যবহার করে।  ব্রিটিশ ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলঃ

ক. আইনসভাগুলোতে ৪ ধরনের সদস্যের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা ছিল। এরা হলেন; পদাধিকার বলে সদস্য, মনোনীত সরকারি সদস্য, মনোনীত বেসরকারি সদস্য এবং নির্বাচিত সদস্য। খ. শুধুমাত্র জনগণের অভিজাত অংশ ভোট প্রদান তথা আইন সভার প্রতিনিধি নির্বাচন করা ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকারী ছিলেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্পদশালী, শিক্ষিত, সরকারি খেতাবপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মধ্যেই ভোটাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল।

গ. নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল সম্প্রদায়ভিত্তিক; যেমন হিন্দু, মসুলমান, শিখ, খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মাবলম্বীদের জন্য আইন সভায় আসন নির্দিষ্ট ছিল এবং এসব আসনে স্ব স্ব সম্প্রদায়ের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হতেন।

ঘ. গভর্নর জেনারেল আইনসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করতে, বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়াদ বৃদ্ধি করতে অথবা কোন বিল বা এর সংশোধনী আলোচনা থেকে আইন পরিষদকে নিবৃত করতে পারতেন। আইন পরিষদ কর্তৃক পাসকৃত কোন বিল গভর্নর জেনারেললের পূর্ব সম্মতি ছাড়া আইনের মর্যাদা লাভ করতনা। তাঁর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ছিল।

সাধনা মহল

. পাকিস্তান উপনিবেশিক কাল পর্ব

১৯৪৬ সালের, ব্রিটিশ ভারতে অনুষ্ঠিত, নির্বাচনে নির্বাচিত যেসব গণপরিষদ সদস্য পরবর্তীকালে পাকিস্তান ডোমিনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হন তাদের নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ। এ সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৬৯ জন। পরবর্তীতে এর সদস্য সংখ্যা ১০ জন বৃদ্ধি করে ৭৯ জনে উন্নীত করা হয়। পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের দেশীয় রাজ্যসমুহ পাকিস্তানে একীভূত হওয়ায় এবং ভারত  থেকে আগত বিপুল সংখ্যক মোহাজের আশ্রয় নেওয়ায় এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে পূর্ব বাংলার সদস্য মোট ৪৪ জন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্য ৩৫  জন। ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের অধীনে পাকিস্তান গণপরিষদকে দুটি দায়িত্ব দেয়া হয় – ১. শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা ও ২. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা।

১৯৪৬-এর ৫ বছর পর ১৯৫১ সালে নির্বাচন হওয়ার সময়কাল থাকলেও পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ১০-২১ মার্চ পাঞ্জাবে, ৮ ডিসেম্বর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ও সিন্ধুতে। পূর্ব বাংলায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালের এপ্রিলে। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পূর্ববাংলা ছাড়া বেশিরভাগই ছিল ভোট-কারচুপি ও জালিয়াতিতে পরিপূর্ণ।

অপরদিকে গণপরিষদে সংবিধান প্রণয়নের কাজে নানা ষড়যন্ত্র ও গরিমসি চলছিল। ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদে একটি বিল ২৯-১১ ভোটে পাস হয়। কিন্তু উক্ত বিল বাস্তবায়নের পূর্বেই তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মালিক গোলাম মোহাম্মদ গণপরিষদ ভেঙ্গে দেন। পরবর্তীকালে ফেডারেল কোর্টের আদেশ মোতাবেক দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদের মোট সদস্য ৮০ জন, এরমধ্যে ৭২ জন সদস্য ছিলেন নির্বাচিত এবং ৮ জন ছিলেন দেশীয় রাজ্য ও উপজাতি এলাকা থেকে মনোনীত। প্রথম গণপরিষদের মতো দ্বিতীয় গণপরিষদেও প্রতি ১০ লক্ষ জনগণের জন্য ১জন সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদ গণপরিষদ সদস্য নির্বাচন করেন।

দ্বিতীয় গণপরিষদ ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয় এবং ২৩ মার্চকে শাসনতন্ত্র প্রবর্তন দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ সংবিধানে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের উভয় অংশ হতে সমান সংখ্যক সদস্যকে নিয়ে ৩০০ সদস্যের একটি জাতীয় পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। ১০ টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। একইসাথে কেউ প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় সংসদে সদস্য থাকতে পারবে না এমন বিধান রাখা হয়। এই প্রথম সর্বজনীন ভোট ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ২১ বছর বয়সের সকল নাগরিকের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনের ১৪ দিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষণার ব্যবস্থা রাখা হয়।

নির্বাচন পরিচালনা, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, এবং অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যবস্থাও করা হয়। প্রধান বিচারপতির পরামর্শে প্রেসিডেন্ট একজনকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশন’ নিয়োগ দিবেন এমন বিধান রাখা হয়। কমিশনের মেয়াদ ছিল ৩ বছর। কিন্তু এই সংবিধান কার্যকর করার ২ বছরের মাথায় ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আয়ুব খানকে সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে  সংবিধান স্থগিত/বাতিল করে সামরিক শাসন জারী করেন। তবে এর মাত্র ২০ দিন পর ২৭ অক্টোবর জেনারেল আয়ুব খান প্রেসিডেন্টকে বহিস্কার করে নিজেই প্রেসিডেন্ট-এর দায়িত্ব নিয়ে নেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন বাতিল করেন। পাকিস্তানের জনগণ রাষ্ট্রপতি কিংবা জাতীয় পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের যোগ্যতা সম্পন্ন নয় বলে, আইয়ুব খান ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামক এক ব্যবস্থা চালু করেন। এই ব্যবস্থায় ইউনিয়ন কাউন্সিলের ৮০ হাজার সদস্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন এবং এই নির্বাচিত সদস্যরা দেশের রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচনের অধিকারী ছিলেন। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সকল নাগরিকের ভোট প্রদানের মৌলিক অধিকারের যে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল তা আবার কেড়ে নেয়া হল।

১৯৬২ সালের এ সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টসিয়াল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু হয়। জাতীয় পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১৫৬ জন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৭৫ জন করে ১৫০ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৬ জন।

১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আইয়ুব খান প্রার্থী হন। সম্মিলিত বিরোধী দলের (কপ) পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ফাতেমা জিন্নাহ। ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে আইয়ুব খানকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। আইয়ুব খানের স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দুই অংশে আন্দোলন গড়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানে এ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। আইয়ুব খান যখন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উন্নয়নের দশক পালন করছেন তখন পূর্ব পাকিস্তানে এ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। গণঅভ্যুত্থানের জেরে আয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ২৮ নভেম্বর তিনি ঘোষণা করেন যত শীঘ্র সম্ভব ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ নীতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজ হবে যত দ্রুত সম্ভব দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র তৈরি করা। নির্বাচনের জন্য তিনি ‘লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ (এলএফও) জারী করেন।

নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে রেফারেন্ডাম হিসেবে ঘোষণা করে এতে অংশ নেয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের (সংরক্ষিত নারী আসনসহ) ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

পাকিস্তান আমলের নির্বাচনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য –

ক. গভর্নর জেনারেল ও প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলে সংসদ বা গণপরিষদ ভেঙ্গে দিতে পারতেন।

খ. জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়, পাকিস্তানের দুই অংশের সংসদসদস্য সংখ্যা সমান রাখা ছিল পাকিস্তানি শাসকদের নিরন্তর প্রচেষ্টা।

গ. সাধারণ জনগণ নয়, প্রধানত অভিজাত বা ধনিক শ্রেণি গণপরিষদ ও সংসদ সদস্য নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন।

ঘ. সেনাবাহিনী নির্বাচনে প্রভাবক ভূমিকা রাখতেন।

ঙ. গণ আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এদেশের জনগণ ১৯৭০ সালে সর্বজনীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের অধিকার অর্জন করেছে।

. বাংলাদেশ পর্ব

ব্রিটিশদের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৪৬ সালের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে স্বাধীন পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠন করা হয়েছিল। একই আদলে পাকিস্তানের কাঠামোতে ৬ দফার আলোকে পাকিস্তানের সংবিধান বানানোর জন্য ১৯৭০ সালে নির্বাচিত ব্যক্তিরাই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিলে গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়নের কাজ শুরু করে একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করে। এ সংবিধানের অধীনে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১১জন সদস্যসহ ২৯৩ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে ৪র্থ সংশোধনী গৃহীত হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ৭৩ সালে যারা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল তাদেরকে পুনরায় পরবর্তী ৫ বছরের জন্যে নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সংবিধান সংশোধনই নির্বাচনের স্থান দখল করে বসার এই ঘটনা এ অঞ্চলের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অধীনে ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্টের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমানের পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি গঠন করে ১৯৮৬ সালের মে মাসে ৩য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণা করেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগসহ মোট ১১টি দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। যথারীতি ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে।  ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৮৮ সালে পুনরায় ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে। এবং যথারীতি জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রবল গণ আন্দোলনের তোপে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অস্থায়ী (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরাজিতদের পক্ষ থেকে মৃদু সমালোচনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নির্বাচনটিই আজ পর্যন্ত সবচাইতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে । এই সংসদ স্থায়ী ছিল মাত্র ১২ দিন। তবে এই সংসদ সংবিধান সংশোধন করে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’কে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে যা ত্রয়োদশ সংশোধনী নামে খ্যাত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৭ম, ৮ম, ও নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই তিনটি নির্বাচনই সমালোচনা সত্ত্বেও নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের নজীর স্থাপনে সক্ষম হয়।

কিন্তু উচ্চ আদালত এক বিতর্কিত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তথা ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সংবিধান পরিপন্থি এবং বাতিল ঘোষণা করেন। এই রায়ের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দ্রুত সংসদ ডেকে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। এর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৭২ সালের সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে সংসদ সদস্যরা সদস্যপদ বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে এখন পর্যন্ত ২টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, একটি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং অপরটি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেকে বর্জন করে। যথারীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে ১৫৩ সিটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। অর্থাৎ ১৫৩ সিটে কোনো ভোট হয়নি।

২০১৯ সালের ভোটেও যথারীতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী বিজয়ী হয়েছে। এ নির্বাচনে আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনসহ গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র একযোগে একটি  ভোটারবিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করে যা জনপরিসরে ‘রাতের ভোট’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। 

. তিন পর্বে জনগণের ভোটাধিকারের প্রকৃত অবস্থা

ব্রিটিশ আমলে সকল নাগরিকের ভোটাধিকার ছিল না। শুধুমাত্র সম্পদশালী, শিক্ষিত, সরকারি খেতাবপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মধ্যেই ভোটাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করলেও ২ বছরের মাথায় আয়ুব খান তা বাতিল করেন। তাই ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ আয়ুব বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এজেন্ডা ছিল। ইয়াহিয়া খান জনগণের এ দাবীর কাছে মাথা নত করে সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এবারে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের দিকে তাকাই। এখানে জনগণের আইনত ভোটাধিকার আছে। নির্বাচনী অবকাঠামো আছে। কিন্তু বাস্তবে শর্তহীনভাবে সকল নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশে আইনত সার্বজনীন ভোটাধিকার থাকলেও কার্যত জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৪টি  সংসদ নির্বাচনে জনগণ মূলত নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছে। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম দিকের সংসদ নির্বাচনে কারচুপি, ভোট ডাকাতির পরেও এবং নিরপেক্ষতার অভাব থাকলেও জনগণ কমবেশি ভোট দিতে পেরেছিল। যদিও ফলাফলে জনগণের রায় প্রতিফলিত হয় নাই। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে বলতে গেলে জনগণ তার ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি। আইনত সকলের ভোটের অধিকার থাকলেও বাস্তবে সরকারি দলের পছন্দ বা সমর্থক ছাড়া অন্যেরা ভোট দিতে পারে নাই। 

. বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা বাংলাদেশে বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে যে ভ্রান্তধারণাসমূহ সাধারণভাবে ব্যাপক মাত্রায় প্রচলিত আছে, তার মধ্যে প্রধান প্রধান কয়েকটিঃ

ক.এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি মনোনীত করার অধিকার ভোগ করেন।

খ. সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতে সরকার গঠিত হয়।

গ. সরকার জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে কেননা ৫ বছর পর তাদের পুনরায় জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হয়।

ঘ. এতে পূর্ণ বয়স্ক সকল নাগরিকের সরকার পরিচালনায় মতামত প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

ঙ. রাষ্ট্রের মালিকানা যে জনগণের তা প্রমাণ হয়।

প্রকৃতপক্ষে উপরে প্রচারিত ধারণাগুলোর প্রায় সবগুলো হয় অসত্য অথবা অর্ধসত্য বা মিথ্যা।  কারণ-

ক. বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে ৩০০ আসনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীসহ অপরাপর প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদানকারীর জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কোন সুযোগ এ ব্যবস্থায় নেই। বাংলাদেশের এ যাবৎকালের নির্বাচনের ভোটের হিসাব থেকে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটপ্রাপ্তরা সরকার গঠন করেছে। বাকী ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটার রয়েছে প্রতিনিধিত্বহীন। মূলত এ নির্বাচন ব্যবস্থায় সংখ্যালঘিষ্ঠের সরকার গঠিত হয়, অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার বলে মিথ্যা প্রচার করা হয়।

খ. বর্তমান আইন ও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়ার পর কোন সংসদসদস্যই আর জনগণের প্রতিনিধি থাকতে পারেন না, দলীয় প্রতিনিধিতে পরিণত হন। দলের সিদ্ধান্ত বা স্বার্থের বাইরে জনগণের বা তার নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার সদস্যপদ বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে।

গ. বিদ্যমান আইন ও সংবিধান অনুযায়ী সরকার প্রধান কারও কাছে দায়বদ্ধ নন। তাঁর সংসদসহ কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। উল্টো তাঁর দলের সংসদ সদস্যরাও তাঁর আজ্ঞাবহ হতে বাধ্য। আইন অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর পর জনগণের ম্যান্ডেন্ট নিতে হয়, এই একদিন জনগণ রাজা। কিন্তু বিভিন্ন আইনি-বেআইনি প্রক্রিয়ায় জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যাতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন করার সাহস না পায় বা ভোটার ভোট দিতে যেতে সাহস না  পায়। যেমন ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না বলে ১৫১ সিটে ভোট হয় নাই। আবার ২-১% ভোট পড়লেও নির্বাচন বাতিল হয় না, প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা যায়।

বস্তুত, মিথ্যাচারের ওপর দাঁড়ানো যে নির্বাচন ব্যবস্থা, সে ব্যবস্থাকেই প্রতিনিয়ত মহিমান্বিত করার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সরকারগুলোর দেশি-বিদেশি বন্ধু, বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরা। তারা এই ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়েও কথা বলেন এবং প্রায়শই বিভিন্ন সমাধান প্রস্তাব করেন। উল্লেখযোগ্য ২টি প্রস্তাব হলো:

ক.নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, এবং

খ. কালোটাকা, পেশিশক্তি ও সরকারের প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।

বিদ্যমান সাংবিধানিক ক্ষমতাকাঠামোয় এ প্রস্তাব যে অসার, অবাস্তব এবং প্রতারণাপূর্ণ তা নিচে আলোচনা করা হবে।

. এদেশের অভিজ্ঞতায় স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক দলীয় সরকার ব্যবস্থার ভূমিকা

বাংলাদেশ পর্বের আলোচনায় দু ধরনের নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাই:

. ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন ব্যবস্থা: ১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোন বিধিবিধান নেই। ব্রিটিশ আমল থেকে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক নির্বাচন পরিচালনার যে প্রথা চলে এসেছে সেভাবেই ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। নির্বাচনকালীন দলীয় সরকার নিয়ে যে আলোচনাগুলো হয়, বিশেষকরে মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট করা ইত্যাদির কোন আইনগত ভিত্তি নেই। সংবিধানের ১২৬ ধারা বলছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে’। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ভুমিকাই প্রধান হবে।

. অনির্বাচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা:

’৯০ এর প্রবল গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারী জোট ও সংস্থাসমূহের দাবী অনুযায়ী সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহম্মদকে প্রধান করে শুধু নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক বা অস্থায়ী সরকার’ গঠন করা হয়। এই সরকার ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ পরিচালনা করে। পরে, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধণীর মাধ্যমে সাংবিধানিক ভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয় যা সংবিধানের ৫৮ক অনুচ্ছেদে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও ১০ জন উপদেষ্টা নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনা করবেন।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১বার জাতীয় সংসদ (আইন সভা) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে ৭টি এবং অস্থায়ী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে ৪টি। এই দুই ধরনের নির্বাচনকালীন সরকারের অধীন থেকে নির্বাচন পরিচালনার যে অভিজ্ঞতা পাই, তা হল –

১. দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটিতেই ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হয়েছে।

অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে অব্যবহিত পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হয়েছে।

২. নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যত ধরনের অনিয়ম ও অপরাধ কল্পনা করা সম্ভব তার প্রত্যেকটির অবাধ প্রয়োগ করা হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে। প্রথম সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় রেডিও-টেলিভিশনসহ প্রশাসনিক ক্ষমতার মারাত্মক অপব্যবহার, দলীয় বাহিনীর যথেচ্ছ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও বিরোধী দলের প্রার্থীকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাপক জাল ভোট, প্রদান ও ব্যালট ছিন্তাই করা হয়েছে। এমনকি কিছু আসনে ফল পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়  জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রথম জাতীয় সংসদের মতো অনিয়ম ও অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশি শক্তির প্রভাব, বুথ দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভরা তথা ভোট ডাকাতি, এবং সরকারি দলের পক্ষে ভোটের ফল সাজানো ও প্রকাশ করা ইত্যাদি। অন্যদিকে ৪র্থ, ষষ্ঠ ও দশম জাতীয় সংসদ উপরের অপরাধ ও অনিয়মগুলোতো ছিলই, তদুপরি এ নির্বাচন ছিল একতরফা, প্রধান বিরোধী দলসহ বেশিরভাগ দল  এসব নির্বাচন বর্জন করে। এগুলো ছিল প্রধানত ভোটারবিহীন নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপি বা ভোট জালিয়াতি বা ভোট ডাকাতি অতীতের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। রাষ্ট্রের প্রায় সকল সংশ্লিষ্ট অঙ্গ, প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির নির্বাচনের অংশীদার হয়েছে যা ইতোপূর্বে কোন নির্বাচনে দেখা যায় নি। ভোট জালিয়াতির বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে রাতের বেলা, তাই এটা রাতের ভোটের নির্বাচন হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনের নির্বাচনগুলো প্রধানত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। নির্বাচন কমিশন মোটামুটি সন্তোষজনকভাবে তার দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছে।

. বহুল আলোচিত স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন এবং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এদেশের বুদ্ধিজীবী, সিভিল সোসাইটি এবংরাজনীতিবিদদের অনেকেই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেখতে চান। তারা বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েও কথা বলেন এবং প্রায়ই বিভিন্ন সমাধান প্রস্তাব করেন। বহুল আলোচিত ২টি প্রস্তাব হল-

১. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে,

২. কালো টাকা, পেশী শক্তি ও সরকারের প্রভাবমুক্ত করতে হবে।

এরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও সরকারের প্রভাব মুক্ত করতে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন প্রণয়নের কথা বলেন। এক্ষেত্রে তারা সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেন। অথচ বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোতে নির্বাচন কেমন হবে এটা কখনই নির্বাচন কমিশন ঠিক করতে পারে না; তাই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং স্বছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়— আমাদের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা তাই প্রমাণ করছে।

এক. প্রস্তাবের ফাঁকিটা বোঝার জন্য রউফ কমিশনের উদাহরণ যথেষ্ট হতে পারে। উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অস্থায়ী (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরাজিতদের পক্ষ থেকে মৃদু সমালোচনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নির্বাচনটিই আজ পর্যন্ত সবচাইতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। নির্বাচন পরিচালনায় প্রধান নির্বাচনী কমিশনার ছিলেন বিচারপতি আব্দুর রউফ। কিন্তু এই একই নির্বাচন কমিশন দলীয় (ক্ষমতায় বিএনপি) সরকারের অধীনে উপনির্বাচনগুলোতে চরম অনিয়ম ও কারচুপির নজীর সৃষ্টি করে। মাগুরার উপনির্বাচন এমন বদনাম কুড়ায় যে তা নির্বাচন মাগুরা স্টাইল বলে কুখ্যাতি অর্জন করে।

দুই. সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তাব যে আরেকটি ফাঁকি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ নুরুল হুদা কমিশন। বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম জালিয়াতি ও প্রতারণার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এই কমিশনের অধীনে ২০১৯ সালে যা রাতের নির্বাচন হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। অথচ নুরুল হুদা কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠিত হয়েছে। এমন উদাহরণের পরেও আইন করে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব এলে সরকার সার্চ কমিটি গঠনের আইন করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আইনি সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন কমিশন নতুন কোন প্রক্রিয়ায় পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনের পথই অনুসরণ করবে, এ আশংকা অনেকেই প্রকাশ করেছেন। বিশেষকরে এ নির্বাচন কমিশনের ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের ইচ্ছা প্রকাশে অনেকেই এর অপব্যবহারের মাধ্যমে  ভোট জালিয়াতির আশংকা প্রকাশ করেছেন। যাহোক, নতুন নির্বাচন কমিশন কি ধরনের নির্বাচন উপহার দেয় তারজন্য আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

. (ভোটের ভিত্তিতে) সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে সরকার গঠনে নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন:

গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট, সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে সরকার গঠনের আলোচনা এদেশে খুব একটা হয় নাই। এটা নির্বাচন ব্যবস্থা বা ইলেক্টোরাল সিস্টেমের বিষয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য,  বাংলাদেশের বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় (এমনকি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনেও) সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে সরকার গঠনের সুযোগ কম এ বিষয়টি সিভিল সোসাইটি, বুদ্ধিজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বা রাজনীতিবিদদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতায় যে নির্বাচন ব্যবস্থা আমরা অনুসরণ করে আসছি, সেখানে কি কি গলদ আছে তা চিহ্নিত করার সময় এসেছে।

আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী ব্যবস্থা আবার বৈচিত্র্যে ভরা। দেশে দেশে একই নির্বাচনী ব্যবস্থার ভিন্ন ভিন্ন মডেল, রূপ বা বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। যাহোক, মোটাদাগে নির্বাচনী ব্যবস্থা কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হল –

ক.একজন সদস্যের জন্য একটি নির্বাচনী এলাকা (Single-member constituencies।

খ. সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা (Proportional Electoral System)

গ. মিশ্র নির্বাচন ব্যবস্থা।

. বেশি রাষ্ট্র অনুসরণ করে এমন নির্বাচন পদ্ধতি অতিসংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হলো:

*একজন সদস্যের জন্য একটি নির্বাচনী এলাকাঃ

এই ব্যবস্থায় দেশকে নির্দিষ্টসংখ্যক নির্বাচনী আসন এলাকায় বিভক্ত করা হয়। প্রার্থীরা একটি নির্দিষ্ট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন। নির্দিষ্ট আসনের নির্বাচকমণ্ডলী ঐ আসন থেকে একজনকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে থাকে।

এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে আবার প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

এক. সবচেয়ে বেশি ভোটে বিজয়ী ব্যবস্থা (Plurality system বা First-Past-the-Post system.)

এই ভোট ব্যবস্থায় একটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন, প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা যত কমই হোক না কেন, তিনি ঐ আসনের জন্য নির্বাচিত ঘোষিত হবেন। তার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের রায়ের প্রয়োজন পরে না। ধরা যাক, মোট প্রদত্ত ভোট ১০০ এবং ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম জন পেলেন ৩৯ ভোট, দ্বিতীয় জন ৩৬ ভোট এবং তৃতীয় জন পেলেন ২৫ ভোট। এ ক্ষেত্রে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন অর্থাৎ ৩৯ ভোট পেয়েছেন তিনি বিজয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থায় নির্বাচন হয়ে থাকে।

একটি উদাহরণ – উপরে উল্লেখ করা হয়েছে সবচেয়ে কম বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নির্বাচনের একটি হল ১৯৯১ সালের নির্বাচন। এই নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোটের ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গড়ে বিএনপি। তারা আসন পায় ১৮০ টি। অথচ প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ৮৮ টি।

দুই. Majoritarian system:

এটিও নির্বাচনী এলাকাকেন্দ্রিক সবচেয়ে বেশি ভোটে বিজয়ী ব্যবস্থা । তবে এই ব্যবস্থায় একজন প্রার্থীকে জয়ী হতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় নিশ্চিত করতে হয়। বিজয়ী প্রার্থী কমপক্ষে ৫১% ভোট না পেলে একটি জটিল ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ব্যবস্থা করা হয়। জটিলতার কারণে অধিকসংখ্যক আসন সম্বলিত আইনসভার ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা প্রয়োগ প্রায় অসম্ভব। সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে Majoritarian system-এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়।

**সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থাঃ

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় নির্বাচকমণ্ডলী সাধারণত ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট প্রদান করে থাকে। সারাদেশের গণনায় একটি দল যে সংখ্যক ভোট পায়, আনুপাতিক হারে পার্লামেন্টে সে পরিমাণ আসন সে দলের হিস্যায় যায়। অন্ততপক্ষে একটি আসন পেতে যে পরিমাণ ভোটের প্রয়োজন হয় সে পরিমাণ ভোট না পেলে ঐ দলকে আসন বণ্টনের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়  না। ধরা যাক, পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা ১০০। তাহলে যে দল ১% ভোট পাবে তার আসন সংখ্যা হবে ১ টি। এভাবে আসন বণ্টনের পর যে দল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন পায় সে দলকে সরকার গঠনের অনুরোধ জানানো হয়। তবে সরকার গঠন করতে সর্বাধিক সংখ্যক আসন প্রাপ্ত দলকে কমপক্ষে ৫১% আসন লাভ করতে হয়। এমনসংখ্যক আসন না পেলে তাকে নিকটতম সমমনাদের সাথে জোট করে সরকার গঠন করতে হয়। সাধারণত দলগুলো নির্বাচনের আগে তাদের সদস্য তালিকা ঘোষণা দেয় বা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এবং ঐ দলের প্রাপ্ত আসন অনুযায়ী তালিকা থেকে সংসদ সদস্য নির্ধারণ করা হয়।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে—

ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে সরকার গঠন করা হয়।

খ. পার্লামেন্টে সকল ভোটারের প্রতিনিধিত্ব থাকে। 

***মিশ্র নির্বাচন ব্যবস্থাঃ

এতে সংসদ সদস্যদের একাংশ এক সদস্যের জন্য এক নির্বাচনী এলাকা, এবং অপরাংশ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভোটারদের একইসাথে দুটি ভোট প্রদান করতে হয়। ভোটার এক ভোট দেয় নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীকে, এক ভোট দেয় দলকে। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক প্রাপ্ত আসন এবং আনুপাতিক হারে প্রাপ্ত আসন মিলে একটি দলের প্রাপ্ত মোট আসন সংখ্যা নির্ধারিত হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন প্রাপ্ত দল সরকার গঠন করে। আবার কোথাও কোথাও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার রাষ্ট্রগুলোতে এক কক্ষে একজন সদস্যের জন্য একটি নির্বাচনী এলাকা ব্যবস্থা এবং অন্য কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রয়োগ দেখা যায়।

. বাংলাদেশের জন্যে জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বা মিশ্র নির্বাচন ব্যবস্থার যৌক্তিকতাঃ

উপরে উল্লেখ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভোটে বিজয়ী ব্যবস্থায় (First-Past-the-Post system.) সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের রায় এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থায় আরও কিছু কুফল দেখা যায়। যেমন –

এই নির্বাচনী ব্যবস্থায় একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনকালীন সময়ে দলের কর্মসূচি নয়, নির্বাচনী মেনিফেস্টো নয়, তাঁর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করে থাকেন। এ জন্য ক্ষমতায় গিয়ে এলাকার উন্নয়ন কাজে হস্তক্ষেপ করেন। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংসদ সদস্যরা শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন করে থাকে, উন্নয়ন কাজ করে স্থানীয় সরকার। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার অকার্যকর থাকার অন্যতম একটি কারণ বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা।

সবচেয়ে বেশি ভোটে বিজয়ী ব্যবস্থা একজন প্রার্থীকে ভোট জালিয়াতি করতে উৎসাহিত করে। কেননা যেনতেন প্রকারে অন্য প্রার্থীর চেয়ে ১ ভোট বেশি পেলেই জয়ী হওয়া যায়।

বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় জয়-পরাজয় একমাত্র বিষয় হয়ে আছে যা দলগুলোর ভেতর বৈরি সম্পর্ক গুরুতর করে তোলার ভূমিকা পালন করছে। যেহেতু কেউ হারতে চায় না, তাই এই নির্বাচনী ব্যবস্থা হিংসাত্মক কার্যকলাপ উৎসাহিত করে, উস্কে দেয়।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় এসব কুফল থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। প্রথমত, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় সংসদে সকল ভোটারের প্রতিনিধিত্ব থাকে, ছোট দলগুলো ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা সংখ্যায় কম এমন জাতিসত্তার সংসদে আসন লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে এই ব্যবস্থায় সবাই জয়ী, কেউ হারে না। তাই দলগুলোর ভেতর বৈরি সম্পর্ক হ্রাস এবং নির্বাচনকালীন হিংসাত্মক কার্যকলাপ অবসানের পরিবেশ গড়ে উঠবে।

নিজস্ব এলাকা না থাকাতে সম্ভাব্য সদস্যরা জাল-জালিয়াতিতে উৎসাহিত থাকে না। বা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরিবেশ থাকে না। আইন প্রণয়ন তাঁদের একমাত্র কর্তব্য হয়ে উঠে।

এ ব্যবস্থায় ভোটারগণ দলের কর্মসূচি ও নির্বাচনী মেনিফেস্টো দেখে দলকে ভোট দেন। ফলে জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন। এ ব্যবস্থায় ভোট নষ্ট বা পচে না বলে জনগণ ভোট প্রদানে উৎসাহিত থাকেন।

মিশ্র নির্বাচন ব্যবস্থার একটি অন্যতম ইতিবাচক দিক হল জনগণকে সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থায় যেতে হয় না। তাই নতুন ব্যবস্থার সাথে সহজে খাপখাওয়াতে পারে। 

. বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামো বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন করা সম্ভব নয়:

বিদ্যমান ক্ষমতাকাঠামোয় তথা সংবিধানের অধীনে থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকার প্রধান তথা একপদে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী এই একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তিনি একই সাথে সংসদ নেতা ও দলের প্রধান। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলগুলোর অভ্যন্তরে বলতে গেলে গণতন্ত্রের কোনো লেশমাত্র নেই। কার্যত দলের প্রধানের হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত রয়েছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ নেই। সংবিধানের ৭০ ধারা সংসদ সদস্যদের  মুখ বন্ধ করে রাখার জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ সরকার প্রধানের ইচ্ছামত আইন প্রণীত হয়ে থাকে। সংবিধানের ১৪২ ধারা বলে সংসদকে ( কার্যত প্রধানমন্ত্রীকে) জনগণের মৌলিক অধিকারহরণসহ যে কোন আইন প্রণয়নের অধিকার  দেয়া হয়েছে। যদিও বাহ্যত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়ে থাকেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংবিধানের  ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে কোন পরামর্শ দিয়েছেন কি না তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সংবিধানের ১১৮(৫) ধারা বলছে, “……… তবে শর্ত থাকে যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত নির্বাচন কমিশন অপসারিত হইবেন না।” সুতরাং অসীম ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী কার্যত নির্বাচন কমিশন গঠন ও তার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাই নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর হাতের পুতল হতে বাধ্য। কাজেই সংবিধান তথা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার না করে দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আশাকরা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই একপদকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামো অক্ষুন্ন রেখে নির্বাচন কমিশনকে বেশি ক্ষমতা প্রদান বা শক্তিশালী করা মানে আরও সুচারুভাবে ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষমতা অর্পণ করা।

তেমনি এই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার না করে নির্বাচন ব্যবস্থা বদল করেও নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন করা যাবে এমনটি বলার সুযোগ নেই।

শেষের কথা

গণতন্ত্রে মতপ্রকাশ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার মৌলিক অধিকার। গণতন্ত্রে নাগরিকেরা সরাসরি ভোট দিয়ে সরকার গঠন করে থাকে। নাগরিকদের বিভাজন করে সাধারণ নাগরিকদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অযোগ্য মনে করা তাদেরকে যেমন অপমান বা অমর্যাদা করা হয়, তেমনি এটা গণতন্ত্র বিরোধী। রাজতন্ত্র বা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজা বা স্বৈরশাসকেরা এমনটিই করে থাকে।  পাকিস্তান আমলে আয়ুব শাহী একথা বলেই মৌলিক গণতন্ত্রের নামে সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালকেরা অনেক চতুর। তারা সার্বজনীন ভোটের আইন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন অপকৌশল এবং সাংবিধানিক মারপ্যাঁচে ব্যাপক নাগরিকের ভোটাধিকার খর্ব করতে সক্ষম হচ্ছে।

আইয়ুব আমলে গণতন্ত্র নয়, উন্নয়নকে ফোকাস করা হয়েছে। উন্নয়নের মুলা দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালকেরা একই কায়দায় জনগণকে বিভ্রান্ত রাখতে সচেষ্ট। শাসক দলের নেতারা প্রকাশ্যে উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রকে বলি দেয়ার কথা বলছেন।

ইতিমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থাসহ অপরাপর রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো বহাল আছে। তথাপি এখানে নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একব্যক্তিতে ন্যস্ত। এই গোড়ার গণ্ডল ঠিক না করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বর্তমান প্রবন্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রয়ন প্রক্রিয়ার অনিবার্য অনুষঙ্গ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের কতগুলো প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদ।

  • সাধনা মহল, গবেষক; নাগরিক অধিকার ও সুশাসন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *