মূল: জন পিলজার
অনুবাদ: ইলোরা সুলতানা
[প্রখ্যাত অস্ট্রেলিয় যুদ্ধ সাংবাদিক জন পিলজার ১৯৭০ দশকের গোড়া থেকেই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় লন্ডনের দি ডেইলি মিররের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের অভ্যূদয় এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ঘটনাক্রমের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্লেষক হিসেবে পিলজারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চারটি রচনা সংকলিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার ‘হিরোজ’ গ্রন্থের ’জয়বাংলা’ খন্ডে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত পিলজার নিয়মিত এসেছেন বাংলাদেশে, প্রত্যক্ষ করেছেন ডিসেম্বরের বিজয়ও। সত্তুরের দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ বহু কারনেই গভীর মনোযোগের দাবিদার যার অন্যতম একটি হচ্ছে এই সমস্ত স্থানীয় ঘটনাবলিকে তিনি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে দেখবার সুযোগ করে দেন যেখানে পাঠক হিসেবে আমরা আমাদের নিজ ইতিহাসের সম্পূর্ন ভিন্ন এক প্রেক্ষিত ও নির্ধারকদের মুখোমুখি হই। বর্তমান রচনাটি উল্লেখিত গ্রন্থের ‘জয়বাংলা’ খন্ডের দ্বিতীয় অধ্যায়।]
কোলকাতা: জুন ১৯৭১।
টেলিফোনের মসৃণ কন্ঠটি তখন বলছিল,‘আমি বলছি, সত্যিই আপনার এমন একটা সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। এটা জাজেস কোর্ট রোডের শেষ মাথায় ক্ষয়িষ্ণু একটি বাড়ি। ঠিক দশটায় চলে আসেন’। আমার ট্যাক্সি জাজেস কোর্ট রোডের দিকে ঘুরে গেল, সাদা রং করা উচু কাঁটাতারের দেয়ালকে পাশ কাটিয়ে সদর দরজার সামনে আসল যেখানে দ্বাররক্ষীরা আড্ডায় মশগুল। বাগানবিলাস ও পয়েনসেটিয়া চারার বাহারি সাজের ড্রাইভওয়েটি শেষ হয়েছে এমন এক কাঠামোর সামনে যা অনায়াসেই লুইস বি. মায়ারের১ ছবির সেট হতে পারে; বাড়ির বারান্দায় লোহার কারুকার্যময় রেলিঙ নেমে এসেছে বালি পাথর আর কাঠের তৈরি মূল কাঠামোতে, সামনের দিকে করিনথিয়ান খিলানগুলো ধরে রেখেছে একটা বিশাল পোর্টিকো যার নীচের একমাত্র ছাউনিটিতে খুব সযত্নে পার্ক করে রাখা আছে একটা কালো শেভ্রলে বেল এয়ার, ১৯৫০ দশকের কনভার্টিবল গাড়ি কিন্তু দেখতে একদম নতুন। বনেটে নানা মর্যাদাসূচক নিদর্শন খচিত এবং পাশে দাঁড়ানো আছেন বড় পাগড়ি পরা একজন মানুষ, মুখে পাকানো গোঁফ, হাতে সোনালি দড়ির লাগাম এবং পোশাকের আড়াআড়ি সার্জেন্টের মত লাল ফিতে বাঁধা।
সাদা পোষাক পরা একজন উদয় হয়ে আমাকে অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষা করতে বললেন। এই ঘরটি রাজকীয় প্রাচুর্যের স্মারক, মনে হচ্ছিল যেন আজ সকালেই এই ঘরের সবকিছুর উপর থেকে চাদর সরানো হয়েছে। দুশো বছরের বৃটিশ রাজশাসন, রাজপ্রতিনিধিদের শাসন এবং ভারতীয় আভিজাত্য যেন ঠিকরে বেরুচ্ছিল সাদা মার্বেলের হাতলওয়ালা সিড়িঘরের দেয়াল থেকে। এই ঘরে একটা রেমব্র্যান্ট ও একটা মনেট২ ছিল, ঘরে শোভা বর্ধন করছিল সোনালি কারুকার্যময় পর্দা, খাঁটি স্ফটিকের ঝাড়বাতি ছিল সংখ্যায় প্রায় বিশটির মতো, কাঠের দেয়ালের চারদিকে সাজানো বেশীরভাগ জিনিসই স্বর্ণ অথবা স্বচ্ছ স্ফটিকের এবং বহুমূল্যবান পাথরে খচিত পানপাত্রসহ বারকোশটি রূপার।
সাদা পোষাকের লোকটি আমাকে বললেন, ‘মহারাজ এখন আপনাকে স্বাগত জানাবেন’, তারপর আমাকে হাতলওয়ালা সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে গেলেন উপরে যেখানে তরুণ প্রিন্স ফিলিপের পোলো টগস পরা একটি বড় ছবি সমাদর জানাল আমাকে। পড়ার ঘরের দরজাটি একটু খোলা ছিল। ‘আসুন, আসুন, কোন আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই এখানে’, বললেন বর্ধমানের মহামান্য মহারাজা বাহাদুর স্যার উদয় চান্দ মাহ্তাব, ভারতীয় সাম্রাজের নাইট কমান্ডার। তিনি টেবিলের পেছনে দাড়িয়ে ছিলেন, পরনে এক জোড়া ঘিয়ে রঙের বম্বে ব্লুমারস, ছিটের শার্ট এবং টেনিস জুতা। ভারতীয় অভিজাততন্ত্রে মহারাজা সবচেয়ে মান্যগণ্যদের একজন। তাঁর বাবা ছিলেন বিশ শতকের মুঘল সম্রাট, কলকাতার কাছে তার যে বর্ধমান রাজ এস্টেটটি অবস্থিত, ১৯৩৮ সালের পারিবারিক হ্যান্ডবুকের বর্ণনানুযায়ী এলাকাটির পরিসর ছিল ৪০০০ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা ছিল ২০,০০,০০০। বর্তমান মহারাজা একে বর্ণনা করেন, যদিও বিনয়ের সাথেই, ‘একটি ছোট কনস্ট্যানটিনপল’।
তিনি বললেন, ‘আমার আপনাকে বলা উচিত, আমি আমার আয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ আয়কর দিই এবং কার্যত শুধু আমার এই একটি বাড়িই আছে। আমি এখন আর কোন চলনদার রাখি না। অবশ্য এখন আমি খুব বেশী দূরে কোথাও আর যাইও না। ঐদিকে ময়মনসিংহের মহারাজা তো পুরাপুরি মার্কসবাদী হয়ে গেছেন’।
‘আমার নিজের একটি ক্লাব এবং কিছু ঘোড়া আছে- শনিবারের রেসে আপনি অবশ্যই আমার বক্সে সঙ্গ দিবেন- ওহ, আমি ব্রুকবন্ড ও ডানলপের বোর্ডেও আছি। আমি কালেভদ্রে মোটর গাড়িতে চড়ে বর্ধমান যাই। আপনি জানেন, পারতপক্ষে আমি সেখানেই থাকতে চাই। কিন্তু সেখানে থাকার নানা সমস্যা রয়েছে। জনসাধারণ এখনও নিজেদেরকে আমার প্রজা ভাবে, তারা আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে এবং আমার পা চুম্বন করে। আপনি ভাবেন, আমার পা চুম্বন করা নাকি সৌভাগ্যজনক’।
আমরা বৃটিশ রাজ পরিবারের প্রতি তার ভক্তির কথা আলোচনা করি, মাউন্টব্যাটেন, নেহরু, এবং এক বোতল শ্যাম্পেনের দামের কথাও ছিল আলোচনাতে। ভারতের উপর বৃটিশ শাসনের যে অনন্য প্রভাব মহারাজকে দেখে মনে হচ্ছিল তার মূর্তরূপ। দুপুরের খাবার অন্যান্য দিনের মত কলকাতা ক্লাবেই হবে, তারপর একটি মিটিং আছে ইংলিশ স্পিকিং ইউনিয়ন আয়োজিত। তিনি বললেন, ‘বৃটিশদেরকে আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাবেন’। তিনি আরো বললেন, ‘আমি এখনো তাদের অভাব অনুভব করি এবং আমি আশা করছি বাংলায় সম্প্রতি যে বিপর্যয় নেমে এসেছে সেই জন্য তারা তাদের মূল্যবান কিছু সময় ব্যয় করে সদয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। এরকম কোন কিছুই আমাদের পোহাতে হতো না যদি তারা ভারত যেমন ছিল তেমনটি রেখে যেতেন’।
‘বাংলার সাম্প্রতিক বিপর্যয়’ বলতে বোঝানো হচ্ছিল পূর্ববাংলা থেকে কলকাতায় আগত ৭ মিলিয়ন শরণার্থীর কথা, যেখানে আতঙ্কজনক এক যুদ্ধ দানা বাঁধছিল। বাঙালিদের জন্য পূর্ব পাকিস্তান বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব আর নেই এবং ‘বাংলাদেশ’, -স্বাধীন বাংলাদেশ- নিজের জন্ম যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থেই, মহারাজা যেমনটি বলছিলেন, এটা আসলে সেই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ারই যৌক্তিক পরিসমাপ্তি যার শুরু হয়েছিল ২৫ বছর আগে বৃটিশ ভারত ভাঙ্গার মাধ্যমে। একটি আলাদা মুসলমান রাষ্ট্র তৈরির উপর জোর দিতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ জিন্নাহ্ এবং তার মুসলিম লীগের কমরেডরা তৈরি করে বসলেন একটি প্যানটোমাইম হর্স৩ : এমন একটি জাতি যা সংস্কৃতি, ভাষা এবং মাঝে ভারতের বিস্তর ভূখন্ড দ্বারা বিভক্ত। তখন থেকেই এবং খানিকটা ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ের ফলাফল হিসেবে, অবশেষে পূর্ব পাকিস্তানের পেছনের পা জোড়া থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সামনের পা জোড়া আলাদা হয়ে গেল।
শুরুতেই বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়নি। তারা শুধু চেয়েছিল নিজেদের ব্যাপার-স্যাপার নিজেরাই চালাতে। তারাও হিন্দু ভারতকে অবিশ্বাস করত, কিন্তু ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মির নিয়ে সারা বছরের যে কোন্দল তা বাঙালিদের জন্য অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এই এক কোন্দলই পাকিস্তানের বার্ষিক আয়ের বেশীর ভাগটাই সামরিক খাতে নিয়ে যেত যার সিংহভাগের জোগান দিত বাঙালিরা। পাকিস্তানের পুরো বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের অর্ধেকই আসত এককভাবে শুধুমাত্র বাংলার পাট রপ্তানির মাধ্যমে, যদিও এই পূর্ব প্রদেশটি কেন্দ্রীয় সরকারের বাৎসরিক বাজেটের এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম বরাদ্দ পেত। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল, গভীর রাজনৈতিক চেতনার অধিকারী এক জনগোষ্ঠি হয়েও বাঙালিদের কোনো রাজনৈতিক স্বর ছিল না।
যখন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে, ঘূর্ণিঝড়ের একমাস পরে, জাতীয় পরিষদ গঠনের জন্য সারা পাকিস্তানে দীর্ঘ প্রতিশ্রুত নির্বাচনটি হলো, এই অঞ্চলের দূঃখ-দূর্দশা আর পুঞ্জিভূত ক্ষোভ শেখ মুজিবর রহমানের আওয়ামি লিগকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দিল (প্রচারাভিযানের সময় হাজির করা প্রমাণ থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রশাসন যে সময়ে ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাসের স্যাটেলাইট বার্তা পেয়েছিল সেই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু দ্বীপের মানুষকে অন্তত নিরাপদ উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল)। শেখ মুজিব ছিলেন, যেমনটি লোকে তাকে জানতেন, সামান্য প্রশাসনিক দক্ষতা আর নেহরুর মত রাজনৈতিক কারিশমার একজন আইনজ্ঞ। তার মূল যোগ্যতা নিহিত ছিল তার বাঙালিত্বের সবচেয়ে বড় দিক -জনতাকে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে উজ্জীবিত করবার ক্ষমতা। আমেরিকান ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদীদের মত দক্ষতায় তিনি জনতাকে স্লোগান ধরাতে পারতেন ‘ঐ ইয়াহিয়া ও ইসলামাবাদের বুদ্ধু মাতালের দল!’, তারপর মূহুর্তেই আবার তাদেরকে নিয়ে আসতে পারতেন নাটকীয় নীরবতায়। পরিস্কার অর্থে, শেখই ছিলেন সংযুক্ত পাকিস্তানের প্রতি প্রথম এক বাস্তব হুমকি।
আওয়ামী লিগ বাঙালিদের জন্য নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন জিতে, যা পুরো পাকিস্তানের মধ্যে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। সুতরাং, শেখ নিজেকে এক বিমুঢ় অবস্থানে আবিষ্কার করেন যেখানে তিনি এমন এক দেশের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী যার কাছে তার নিজের দলের দাবি ছিল আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন। পশ্চিম পাকিস্তানে পিপল্স পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো কোন রকমে জিতলেন সামান্য ব্যবধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে, ১৩৮ টি আসনের মধ্যে ৮১ টি আসন। সুতরাং দুই পক্ষের এই অমোচনীয় বিভক্তির মধ্যে যা টিকে ছিল তা হল ইসলামের সূতা কিন্তু সেটিও ছিঁড়ে গেল ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালে।
ভূট্টো ছিলেন একজন সহজাত কুচক্রী। মধ্য মার্চ মাসে তিনি ঢাকায় উড়ে আসেন শেখ মুজিবের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা আপাত আন্তরিক ঐক্যমতে পৌছানোর জন্য, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি ঘোষণা করেন যে একমত হওয়ার আর কোন রাস্তা নেই। আসলে, ভূট্টো ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উৎসাহী উসকানিদাতা যারা তিনি বিদায় নেওয়ার ক’দিনের মাথায় ঢাকা আক্রমণ করে বসে। কামান, ট্যাংক, বাজুকা, ফসফরাস গ্রেনেড এবং ইনসেনডিয়ারি বুলেট ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা অফিস, হিন্দু কোয়ার্টার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসে আক্রমণ চালানো হয়। নগর বাজার রোডের বাজারে আগুন দেয়া হয়, বুলডোজার দিয়ে সবকিছু সমান করে একটা গণকবরে পরিণত করা হয় বাজারটিকে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী, আমার বন্ধু ফরাসি যুদ্ধ আলোকচিত্রী মাইকেল লরেন্টের মতে, দুই দিন ও দুই রাতের মধ্যে ৭০০০ মানুষ মেরে ফেলা হয়। তিনি এই আকস্মিক আক্রমনকে ‘ওয়ারশও ঘেটো’৪ এর সাথে তুলনা করেছিলেন।
মৃতদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল বেসামরিক নাগরিক। জাতির অনেক শীর্ষ বুদ্ধিজীবিদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় নদীর তীরে, গুলি করে মেরে ফেলে রাখা হয় কাক-শকুনের খোরাক হিসেবে। পুরো হিন্দু সম্প্রদায় এবং যারা তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন, তাদের সবাইকে ফায়ারিং স্কোয়াড এ নিয়ে যাওয়া হয়। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে নেয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারে।
পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিকদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। পিটার হেজেলহার্স্ট, দি টাইমস্ পত্রিকার ভারতীয় সংবাদদাতা, কোলকাতায় একাই তৎপর থেকে যান, অসীম ধৈর্য ধরে উদ্বাস্তুদের নৃশংস অভিজ্ঞতা নিয়ে যে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন তিনি পাঠাচ্ছিলেন তা মাঝে-মধ্যে এতই বর্বরোচিত যে সত্য বলে মানা কঠিন। এপ্রিল মাসে অবজারভার পত্রিকার কলিন স্মিথ এবং এসোসিয়েট প্রেসের ডেনিস নিল্ড কোলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটা লম্বা ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দেন এবং পথে প্রথম বার প্রত্যক্ষ করেন একেবারে সাধারণ মানুষদের নিয়ে সম্প্রতি গড়ে উঠা ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যোদ্ধা’ তথা মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা। স্মিথ ঢাকা পৌছেই বৃটিশ কূটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ করেন, কিন্তু তারা নিজেদের অবস্থার জানান দিয়েছিলেন স্মিথকে এই বলে ধমকে যে তার ঢাকায় আসাটা তাদের সবার মৃত্যুর কারণ হতে পারে, আর তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটছে তা ব্রিটিশ ‘স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট’ বিষয় নয়। স্মিথ লিখেছিলেন যে মুক্তিবাহিনী যদিও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের বেঁচে যাওয়া অফিসাররা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তবু সম্মুখ যুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে সমর্থ একটি পেশাদার বাহিনীর সামনে তারা শুধু উপদ্রব মাত্র।
অধিকৃত বাংলাদেশের ভেতর থেকে ভেসে আসা গুজবের সূত্র ধরে ১৯৭১ সালের জুন মাসে আলোকচিত্রী এরিক পাইপার ও আমি সীমান্ত অতিক্রম করি ’স্বাধীন বাংলাদেশ’ এর খোঁজে। উপমহাদেশের বাইরে থেকেই এই স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যোগাযোগ করাটা ছিল বেশ সহজ। এর জন্য সর্বসাকুল্যে যা দরকার পড়ে তা হল বার্মিংহামের একটা ফিরতি রেলের টিকেট যেখানে প্রবাসী বাঙালিরা অনেক কয়টি দেশপ্রেমিক সংঘ গড়ে তুলেছিল। ২৫শে মার্চের পর থেকে আমি আমার ফ্ল্যাটে নিয়মিত টেলিফোন পেতে শুরু করি আবু সাইদ চৌধূরীর, ঢাকার হাইকোর্টের নির্বাসিত প্রধান বিচারক পরে যিনি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তিনি সবসময় একটা পে-ফোন থেকে গভীর রাতে ফোন করতেন:
‘চীফ জাস্টিস চৌধুরী বলছি’
‘বলুন, চীফ জাস্টিস’
‘এই মুহুর্তে সব ভয়ঙ্কর এবং আশ্চর্য ঘটনা ঘটছে আমার দেশে। যদিও আমার মানুষেরা অনেক বীরোচিত জয় লাভ করছে কিন্তু তবু আমরা সিংহের বিপরীতে ছারপোকা মাত্র’। কিছুক্ষণ পরেই বিটকেলে বৃটিশ টেলিফোন লাইনের পিপ পিপ পিপ শব্দে চীফ জাস্টিসের গলা হারিয়ে যেত, বুঝতাম তার কয়েন শেষ হয়ে গেছে।
সত্যিকার অর্থেই এই অসংবিধিত বাংলাদেশ পরিস্থিতি বাংলার প্রাত্যহিক উন্মাদনার সেরা লিপিকার সত্যজিৎ রায়ের ছবির চিত্রনাট্য হতে পারতো। লন্ডনের চায়না টাউনের জেরারড স্ট্রিটের ‘গঙ্গা’ রেস্তোরাতেই মিলেছিল রওনা দেয়ার সূত্র। গঙ্গা’র মালিকই ছিলেন মূল মধ্যস্ততাকারী যিনি কৃতজ্ঞতাসূচক একটা কারি দিয়েছিলেন আমাকে, সাথে ছিল তার কার্ড যার পিছনে বাংলায় লেখা একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ’।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখানে কি বলা হচ্ছে’?
‘এটা বলছে, “হ্যালো। বার্মিংহামের নারী সংঘের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। জয় বাংলা”’।
‘এটা কি কোন সংকেত?’
‘না, এটা বার্মিংহাম নারী সংঘের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বাণী। তারা খুব ভালো কাজ করছে। তহবিল গঠন করছে চা চক্রের মত নানা আয়োজনের মাধ্যমে।’
‘আমি বাংলাদেশে কিভাবে যেতে পারি?’
‘এই হচ্ছে আমার এক বন্ধুর কার্ড, যিনি কোলকাতায় গ্র্যান্ড হোটেল থেকে চার বাড়ি পরে এবং ডান দিকের দ্বিতীয় দরজার উপরতলায় থাকেন। দরদাম খুব ভালো। মওদুদ আহমেদ ও রহমত আলি নামে তারা পরিচিত, সাবধানে যাবেন। আমার দেশের আলো নিভে গেছে। অনেক দূর্বৃত্ত আর ইনফরমারে গিজ গিজ করছে। জয় বাংলা!’
মওদুদ আহমেদ এবং রহমত আলী ছিলেন ঢাকার দুই তরুণ আইনজীবি যারা এর আগে যখন পশ্চিম পাকিস্তানে শেখ মুজিব কারারুদ্ধ হন তখন তার পক্ষে লড়েছেন। অনেক দর কষাকষির পর, মওদুদ আহমেদ আমাকে ও এরিককে র্যাডক্লিফ লাইনের ওপারে, যা ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানকে ভাগ করেছে, নিয়ে যেতে রাজী হলেন।
আমরা ভোর ৪টার সময় রওনা হলাম এবং পাড়ি দিলাম কোলকাতার দি স্টেটসম্যানের ভাষ্যমতে ‘করিডরস অব পেইন’: ২৫ শে মার্চের পর থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ যে রাস্তা আর ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে এসেছে। তারা এসেছে প্রায় নিরবে, সারিবদ্ধ হয়ে হেঁটে, সবচেয়ে ভাগ্যবানরা রিকশায় করে, এ পথে রিকশার টুংটাং হাত-বেল কালে-ভদ্রে শোনা যেতো, কারণ মানুষের ভারে রিকশা এত বেশী ভারি থাকত যে পায়ে হাঁটা মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেই তাদের কষ্ট হতো। বাতি নিভিয়ে চলা একটি গাড়িতে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় উদ্বাস্তুদের দলবেঁধে দেশ ছাড়ার মাত্রাটা শুরুতে ঝাপসা ঠেকছিল। কিন্তু পরে তারা রাস্তা জুড়ে এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা দিল যে, মাঝে মাঝে আমাদের শিখ ড্রাইভারটিকে বাধ্য হয়ে গিয়ার উল্টে দিতে হয়, তখন উইন্ডস্ক্রিনে চেপে বসে অনেকগুলো ইতস্তত চেহারা।
যুদ্ধ আসন্ন। দশ মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছে; ১৯৭১ সালের গ্রীষ্মের শুরু থেকেই ভারতীয় কূটনীতিকরা ইউরোপ ও ওয়াশিংটন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, কথা বলার চেষ্টা করে পাকিস্তানের উপর কার্যকর চাপ প্রয়োগে সক্ষম সম্ভাব্য এমন সবার সাথে, বিশেষত যারা পাকিস্তান এইড কনসরটিয়াম এবং মার্কিন প্রশাসনের সাথে যুক্ত। ভারত কনসোর্টিয়াম ভূক্ত দেশগুলো এবং আমেরিকাকে আহবান জানায় ভারতের সাথে এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় শরাণার্থী সংকট মোকাবেলার দায়িত্ব ভাগাভাগির জন্য। তারা এ আবেদন জানায় শুধুমাত্র খাবার এবং ওষুধের জন্য। বাংলাদেশী শরণার্থীদের প্রতি ভারতের এই দায়িত্ববোধ ছিল মানবিকতার এক ঐতিহাসিক নিদর্শন।
যাই হোক, বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিন্তু ইন্দিরা গান্ধির কাছে হৃদয়গ্রাহী কোন ব্যাপার ছিলনা যদিও জনসমক্ষে তিনি বহুবার বাংলাদেশকে সমর্থনের কথা বলেছেন। তিনি এবং তার কংগ্রেস দলের রক্ষণশীলেরা চাচ্ছিলেন পাকিস্তান যেন নীরবে বিষয়টি আপোষ-রফা করে ফেলে, শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয় এবং পূর্ব-বাংলায় তার আওয়ামী লিগের স্বায়ত্ব-শাসনের উপর আস্থা প্রকাশ করে। তারা পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য কোন বল প্রয়োগে আগ্রহী ছিলেন না এই আশংকায় যে এই বিচ্ছিন্নতাবাদের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের আরো বহু অঞ্চলে।
পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ ঠেকানোর ভারতীয় কূটনীতিক প্রচারণার আকস্মিক সমাপ্তি ঘটল যখন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরণ সিং প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের এই ‘নিশ্চয়তা’ নিয়ে ওয়াশিংটন থেকে ফিরলেন যে যুক্তরাষ্ট্র আর পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করবে না। দিল্লি বিমান-বন্দরে আনন্দময় হাততালির মধ্যে এই ‘নিশ্চয়তা’র খবরটি দেয়ার পরপরই, যে দৃশ্য মনে করিয়ে নেভিল চেম্বারলেইনের মিউনিখ থেকে ‘বিজয়োল্লাসে’ ফিরে আসার কথা৫ , পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে একটি নোট আসে, বড় একটি আমেরিকান অস্ত্রের চালান একটু আগেই আমেরিকা থেকে করাচির উদ্দেশ্যে উড়ে গেছে। জনাব সিংকে এই নিশ্চয়তা দেয়ার আগেই জনাব কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে একটা স্মারকলিপি লিখেছিলেন যা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে মন্ত্রণা দিয়েছিলেন ‘পাকিস্তানের পক্ষে হেলে’ থাকবার জন্য এবং সেখানে আরো বেশি অস্ত্র জড়ো করবার জন্য।৬
এরিক ও আমি রাতের বেলায় মওদুদ আহমেদ এবং একজন গাইডের পেছন পেছন হেঁটে রওনা দিলাম। গাইডের হাতে একটি লাল সবুজ বাংলাদেশের পতাকা আর তার পেছনে জরাজীর্ণ একদল গেরিলা যাদের হাতে ছিল ২৫ বছরের পুরোন লি এনফিল্ড রাইফেল আর গোটা কতক ব্রেন গান। এক সকালে আমরা একটা উড়িয়ে দেয়া মসজিদের সামনে এসে দাঁড়াই, পাশের দোকান-পাট লুট করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, একটি ঘরের দেয়াল ট্যাংক দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার মালিক ঘর ছেড়ে পালানোর আগেই।
লুকিয়ে থাকা অনেক মানুষ সাবধানে বের হয়ে আসল, জানতে চাইল আমাদের কাছে কোন খাবার আছে কিনা। আগের রাতে পাকিস্তানি আর্মি এসে পুরা গ্রামের গোলাঘর খালি করে গেছে। ৫০০০ মানুষের জন্য পড়ে ছিল শুধু চল্লিশ পাউন্ড ওজনের দুই বস্তা চাল। মাথায় মাওলানার টুপি আর মুখে দাড়িঅলা এক বৃদ্ধ শার্ট উঁচু করে তার পেটে বেয়োনেটের সুচারু কাটা দাগ দেখালেন। একটি আট বছরের ছেলের কানে রক্ত জমাট বেঁধেছিল, কানের লতিটা খুব কাছ থেকে গুলি করে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কাছেই একটি মাঠে একজন মহিলা একা বসে আহাজারি করছিলেন তার স্বামীকে জীবন্ত কবর দেয়া নিয়ে। পাঞ্জাবী সৈন্যদের সাথে যেতে অস্বীকার করায় দুই ভাইসহ তাকে নদীর পাশের একটা পরিখায় রেখে মাটি চাপা দিয়ে গিয়েছিল তারা, বাকী কাজটুকু সেরেছে কাকের দল।
এবং এই নিয়মমাফিক খুনের গল্প বাড়তেই থাকল যখন আমরা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেতে লাগলাম, বড় রাস্তা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে, কোন জেট ফাইটারের চলে যাওয়া আগ পর্যন্ত কোথাও লুকিয়ে থেকে। হিন্দু অধ্যূষিত অঞ্চলগুলো, দেশ বিভাগের পর থেকে যেখানে তারা নিজেদের জাতিগত অবস্থান মুসলিম পূর্ববাংলায় সূক্ষèকিন্তু শান্তিপূর্ণভাবেই ধরে রেখেছিল, সেগুলো এখন পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তুপ। বরাবরই পাঞ্জাবীরা আক্রমন করেছে একটা নির্দিষ্ট ছক ধরে। গ্রামের প্রতিটা যুবক ছেলেকে আদেশ করা হয়েছে তাদের জননাঙ্গ দেখানোর জন্য। যদি তার খৎনা করা থাকে, যার মানে সে মুসলমান, তাহলে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। যদি খৎনা করা না থাকে, যার মানে সে হিন্দু, সাথে সাথে মেরে ফেলা হয়েছে, সৈনিকদের খামখেয়ালি চাপলে কেটে ফেলা হয়েছে পুরুষাঙ্গও। শেখ মুজিবের আওয়ামিলীগের সাথে নুন্যতম সম্পৃক্ততার আভাস পেলেই গুলি করা হয়েছে। খাবার, গরু-ছাগল, হাতঘড়ি বা পরিবারের ছোট গয়না-গাটি কেড়ে নিয়েছে তারা। গ্রামের আর যেসব বাঙালি বেঁচে ছিল, তাদের বলা হয়েছে গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলেই ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে গুলি করা হবে।
আমার পর পর করা প্রতিবেদন এবং এরিক পাইপারের আলোকচিত্র থেকে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেল যে ইসলামাবাদের সরকার পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চর্চা করছে। সামরিক জান্তা তাড়াহুড়া করে এর বিপক্ষে একটা প্রচারণা দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তিনজন রক্ষণশীল দলীয় সদস্যকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। তারা সরকারি হেলিকপ্টারে চড়ে, সরকারি দোভাষীদের সাথে নিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের পরিস্থিতি দেখলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ছাত্রাবাসটি, ২৫শে মার্চ রাতে যেখানে প্রায় আঠারশ ছাত্র মারা পড়ে, যেটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল রকেট ও মর্টার দিয়ে, এই সফর উপলক্ষে সেটি পূণর্নির্মাণ করা হয়। ইয়াহিয়া খানের মেহমানদারিতে একটা জাকজমকপূর্ণ পার্টির মধ্য দিয়ে তাদের এই ভ্রমণ শেষ হয়। এজবাসটন থেকে নির্বাচিত সদস্য জিল নাইট বৃটেনে ফিরে গিয়ে পার্লামেন্টে এই রিপোর্ট করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে পরিকল্পিত গণহত্যা গল্পের অনেকখানিই অতিরঞ্জিত এবং পরিস্থিতি সেখানে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে।
‘যদি কিছু মনে না করেন, আমি ফখরুদ্দিনের সাথে দেখা করতে চাই।’
‘দয়া করে আপনি চলে যান।’
‘কিন্তু এটা তো তার অফিস।’
(ফিস ফিস কন্ঠে) ‘সে চলে গেছে গ্রামের দিকে, যুদ্ধের মাঝে, আমি জানিনা কোথায়। তার পরিবারের অনেককেই গুলি করা হয়েছে। দয়া করুন, আপনার উপস্থিতি কিন্তু আমাদের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।’
জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘চিত্রালি’র অফিসটি, যার সংস্কৃতি সম্পাদক ছিলেন এ.ইউ.এম. ফখরুদ্দিন, যেন অবরুদ্ধ ঢাকার অবিমিশ্র ভীতিটাই ছড়াচ্ছে। জুনের শেষভাগে, যখন বিদেশী রিপোর্টারদের রাজধানীতে ফিরে আসবার সংক্ষিপ্ত সুযোগ দেয়া হল, তখন এটা পরিষ্কার বোঝা গেল যে বাঙালি সাংবাদিকরা ছিলেন প্রথম সারির টার্গেট। ঢাকা প্রেস ক্লাবের বেশীর ভাগ সাংবাদিককেই ২৫ মার্চ রাতে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। দৈনিক পত্রিকাগুলো হয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অথবা সেখানে একটি উর্দুভাষী মুসলিম সম্প্রদায়- বিহারীদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে যারা দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে এখানে চলে এসেছিল আর এখন পাঞ্জাবীদের সহযোগিতা করছে।
সাংবাদিকতা একটি বাঙালি ঐতিহ্য। বাঙালি সাংবাদিকরা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্লান্তিহীন, অনুসন্ধিৎসূ সংবাদ সংগ্রাহকদের মধ্যে পড়েন। তাদের প্রতিবেদনগুলো বেশ ব্যঞ্জণাময় যার উৎস হয়তো আংশিক ব্রিটিশ রাজ এবং আংশিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাঙালিদের কবি বায়রন। তারা সংশোধনাতীত রকমের রোমান্টিক। চিত্রালি ‘জয় বাংলা’ বলে আর সবার চেয়ে বেশী আওয়াজ তুলেছিল। এর সম্পাদকীয় লেখকেরা সাইক্লোনের অনেক আগে থেকেই পাঞ্জাবী শাসনের বৈষম্য নিয়ে বুক চাপড়েছেন। নবীর কাছে আরজি জানিয়েছেন এই ‘ধর্মচ্যূত’দের পরিত্যাগ করবার জন্য যারা বাংলাকে শোষণ করেছে। ‘সোনার বাংলা তোমাদের কখনো ভুলবে না, কোনদিন ক্ষমা করবে না’ নির্ভীক চিত্রালি এক প্রচ্ছদ পাতায় ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানীদের প্রতি। ‘আমাদের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার জন্য যে প্রচন্ড আবেগ সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য তারা নিজের দেহের প্রতিটি সুন্দর তন্তুকণা দিয়েও লড়ছে, তা আমরা কখনই অবরুদ্ধ করব না।’ এই ছিল এ ইউ এম ফখরুদ্দিনের লেখার ধরণ। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের পর তিনি লিখেছিলেন (সাংস্কৃতিক পাতায়):
“জলোচ্ছাসের মরণাঘাত বাংলার শান্ত চেহারাটা পাল্টে দিয়েছে, এই অঞ্চলটিকে লক্ষ বছর আগের এক অজানা মানচিত্রে পরিণত করেছে… মরণ ঢেউয়ের নিষ্ঠুর ছোবল যাদের গ্রাস করেছে তাদের জন্য আমরা অসহায় বসে কাঁদতে পারি। চোখে জল নিয়ে আমরা শুধু এটুকুই চাইতে পারি যে যারা এখনো বেঁচে আছে তাদের বাঁচিয়ে রাখা হোক”।৭
সদা পরিচ্ছন্ন, তেল দেয়া চুল, এবং হাতে ছাতা, এই ছিলেন এ ইউ এম ফখরুদ্দিন। থাকতেন ওয়াপদা বিল্ডিংয়ে, এর পরিকল্পনা (বিদ্যূৎ) বিভাগের এর হেড অ্যাসিসট্যান্টের উপরের একটি ঘরে। তার চারটি টেলিফোন নাম্বার ছিল যার সবগুলোই কদাচিৎ কেউ ধরতো, কিন্তু তারপরও তিনি ছিলেন সূর্যের মতই নির্ভরযোগ্য। দিনে আমি কয়েকবার আমার হোটেল রুমের দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া চিরকুট পেয়েছি যাতে লেখা থাকত, ‘আমি এখানে আছি… গভীর আন্তরিক শুভেচ্ছাসহ, আপনার এ ইউ এম ফখরুদ্দিন।’ সাথে হয়ত থাকত পুনশ্চঃ দিয়ে শেকসপিয়ার থেকে কোন উদ্ধৃতি। বাংলার এই দূর্দশাগ্রস্থ দিনগুলিতে তার প্রিয় কোটেশন ছিল হ্যামলেটের স্বগতোক্তি:
হোয়েদার ইট ইজ নোব্লার ইন দ্য মাইন্ড টু সাফার
দ্য স্লিংস এন্ড অ্যারোজ অফ আউট্রোজিয়াস ফরচুন
অর টু টেক আর্মস এগেইনস্ট আ সী অফ ট্রাব্লস
এন্ড বাই অপোজিং এন্ড দেম?
যতবারই আমার বন্ধু ফখরুদ্দিন এর সাথে দেখা হয়েছে, ততবারই আমার ভারাক্রান্ত মনকে তিনি উজ্জীবিত করেছেন, দেখা হওয়া শেষ হয়েছে হাসি-আনন্দ আর নিজের গভীর শোক দূর করার প্রার্থনা করে, সবশেষে হয়তো বার্ডের কোন পংক্তি অথবা শেলীর প্রমিথিউস আনবাউন্ড অথবা ব্রাউনিঙের ‘ওয়ান মোর ফাইট, দ্য বেস্ট এন্ড দ্য বেস্ট’ দিয়ে। আর এখন মনে এমন আশা ক্ষীণ যে আমি আবার তাকে দেখতে পাব।
ঢাকা, তিন মিলিয়ন মানুষের এমন এক মানব বসতি যার কোলাহল শহরের প্রতিটি বাসিন্দা দারুণ উপভোগ করে। এই আকারের কোন পশ্চিমা শহরের মত অত বেশি শব্দ নেই এখানে; অনেক বেশী মোটর গাড়ি বা নির্মাণ-কাজ চোখে পড়ে না। কারখানার সাইরেনও বিরল। ঢাকার কোলাহলে হচ্ছে কন্ঠস্বরের প্রাধান্য, কিছু সাইকেল-রিকশার হাতল-ঘন্টার টুংটাং শব্দ এবং পেশাদার বাজনদারদের উচ্ছল বাজনা ছাপিয়েও মানুষের কন্ঠের অনুরণন আলাদা করে শোনা ও অনুভব করা যাবে। বাংলা হচ্ছে মিষ্টি সুরে এক লয়ে গানের মত এক ভাষা যার বিশাল শব্দ সম্ভারের একটা বড় অংশই ব্যবহার হয় নানা বোল আর উচ্চকিত কথকতায়, এই ভাষাভাষিরা সবসময়ই নির্বিশেষে উচ্চকিত।
তাদের গলা এখন আর শোনা যাচ্ছে না। শহরটা প্রায় নীরব। বাজারগুলো, আগে যেখানে সবচেয়ে বেশী কলরব হতো, সেখানে শ্মশান পরিস্থিতি। ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় চালের বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, হাতির ট্রেনের প্রাচীন টারমিনাস… সবকিছু স্থির হয়ে গেছে। ব্যতিক্রম শুধু মসজিদগুলো। এলিফ্যান্ট রোডের মসজিদে গম্বুজের বদলে এর মিনারের ওপর রয়েছে একটা এরোপ্লেন। দিনে পাঁচবার একজন দাড়িওলা মোয়াজ্জিন, যার নানা পাগলামি ছিল এলাকার প্রিয় কিংবদন্তী, কষ্ট করে তার ছোট প্লেনের ককপিটে চড়ে বসতেন এবং আল্লাহর মহানুভবতা প্রচার করতেন, তার কন্ঠ প্লেনের লেজে লাগানো লাউডস্পিকারে উচ্চকিত হতো। তিনি ছিলেন এক দারুণ সাহসী দেশপ্রেমিক যিনি তার ককপিট থেকে বাংলাদেশের প্রতীক উড়িয়েছিলেন সাহসের সাথে। এ ছিল নিজেকে মারার জন্য সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানানোর মত ব্যাপার। তিনি এখানেই থেমে থাকেননি। যুদ্ধের মাসগুলোতে একাধিকবার তিনি তার কর্ণ-বিদারি আজান শেষ করেছেন এক অপবিত্র চিৎকারে- ‘জয় বাংলা!’। হয়তো আল্লাহর রোষের ভয়েই পাঞ্জাবীরা তাকে কিছু করেনি।
ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলের তল্পী-বাহকদের দিয়ে পাঠানো অনুরোধের ছোট ছোট কাগজের টুকরায় আমার পকেট ভরে উঠল। রাস্তায় এই মানুষদের চেহারাগুলো আমি ঠিকমত ঠাহর করবার আগেই তারা দৌড়ে পালিয়ে যেত। কাগজগুলোর বেশীরভাগই ছিল মানচিত্র, খুঁটিনাটিসহ আঁকা, সাথে ছোট ছোট নোট দেয়া, যেমন, ‘হিন্দু পরিবারকে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে এখানে। তিন তলায় এখনো একজন বেঁচে আছে। সিঁড়ির নিচের ঘরে।’ কোনটাতে বলা ছিল সেইসব গ্রামে কিভাবে যাওয়া যায় যেখানে নির্বিচার হত্যাকান্ড হয়েছে এবং সাথে কিছু নামের তালিকা যাদেরকে বিশ্বাস করা যায়।
এভাবে পাওয়া একটা মানচিত্রসহ স্বেচ্ছায় আমাদের গাইড বনে যাওয়া এক ছেলেকে নিয়ে এরিক আর আমি পুরোন শহরের ভিতর দিয়ে চললাম, টিক্কা খান এভিনিউর ধ্বংসস্তুপের উপর দিয়ে, পূর্ব পাকিস্তানের সেই সামরিক শাসক, যার নাম ছিল নৃশংসতারই প্রতিশব্দ।
নিস্তব্ধতা কেটে গেল বাঁধ-ভাঙ্গা আতংকে। ‘এখান থেকে চলে যাও!’ এলাকার মানুষেরা চিৎকার করছিল। ‘যদি তোমরা ছবি তোল আর্মিরা আবার আসবে!’
আমরা ফিরে আসার উদ্যোগ নিতেই, মানুষরা ভীড় করে আমাদের ট্যাক্সি ঘিরে দাঁড়ালো আর গজরাতে লাগল এই ভেবে যে আমাদের উপস্থিতি তাদের ওপর আরো কত প্রতিহিংসা ডেকে আনবে। যেই ছেলেটা আমাদের রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে এসেছে, আমাদের মাঝে বসে কান্না শুরু করল, বলল ‘তোমাদের এখানে নিয়ে আসার জন্য এই লোকগুলো যদি আমাকে নাও মারে, আর্মি আমাকে ঠিকই মেরে ফেলবে।’
যখন ট্যাক্সি একপাশে ঘুরতে শুরু করল, আমি ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন নেতা বেছে নিয়ে ডেকে বললাম আমাদের সাথে সবচেয়ে কাছের কোন আর্মি পোস্টে যেতে যেখানে নিশ্চয়তা পাওয়া যেতে পারে যে পরবর্তীতে তাদের আর কোন ক্ষতি করা হবে না। সে রাজি হল এবং তখনই ট্যাক্সিটা হঠাৎ লাফিয়ে পিছনে সরে এলো চার চাকায় ভর করে এবং একটানে চলে এলো কাছের এক ক্যাম্পে যেখানে একজন পাকিস্তানি মেজর গলদঘর্ম হলেন কোন এক কর্নেল সাহেবকে ফোন করবার চেষ্টায়। শেষ পর্যন্ত যখন ফোনে পাওয়া গেল কর্নেল আমাকে নিশ্চয়তা দিলেন যে ঐ পাড়াটির উপরে কোন ধরনের প্রতিশোধ নেয়া হবে না। কিন্তু আমি তার কথায় বিশ্বাস করতে পারলাম না। ভীড় থেকে আমাদের সাথে আসা মানুষটিও তার কথা একদম বিশ্বাস করেনি। ছেলেটি আমাদের পাশে পাশে থাকল যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা হোটেলে পৌছলাম। সে ভয়ে কাঁপছিল, আর জানাল যে ট্যাক্সি ড্রাইভার একজন বিহারী ছিল এবং সে পাকিস্তানি আর্মিকে তার ব্যাপারে জানিয়ে দিবে এবং ঐ রাস্তার মানুষগুলোও তাকে কখনো ক্ষমা করবে না। ‘আমার শাস্তির আদেশ হয়ে গেছে’, সে বলল।
আমি ছেলেটির ঠিকানা নিলাম এবং বিষয়টি সরকারের একজন তথ্য কর্মকর্তাকে জানালাম যিনি তখন দ্বিতীয় (এবং খানিকটা অনমনীয়) একদল বৃটিশ এম পি’র দেখভাল করছিলেন। আমি বললাম, ছেলেটির যদি কোন ক্ষতি হয় তবে সে হবে বাঙালি ও বৃটিশ উভয় দেশের জনগণের শহীদ, সে হবে পাকিস্তান সরকারের প্রতি তাদের অমোচনীয় বিরোধিতার প্রতীক। ক’দিনের মধ্যেই এদেশ ছেড়ে যাবে এমন এক রিপোর্টারের এই হুমকিতে তার যে বিরক্তিময় প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল তা আমাকে এই বাস্তব সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল যে আমিই এই ছেলেটি এবং ঐ পাড়ার মানুষগুলোর যে কোন সম্ভাব্য বিপদের জন্য দায়ী। আমি রাতে আমার সহকর্মীদের সাথে হোটেল বারে বসে সংবাদ বিনিময়ের সময় এবিষয়টি মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলামনা। সাংবাদিকতা পেশার শিকার হওয়াটা ঘটে খুব নিঃশব্দে।
যেদিন ব্রিটিশ এমপি’রা ঢাকা ত্যাগ করলেন, পূর্ব-পাকিস্তানের আর্মি কমান্ডার মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি খান সাবেক বৃটিশ গভর্নরের বৃহৎ বাসভবনে, যা দেখতে ভার্সেই এর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণের মতন, এক প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করেন। আমাদের সবুজ চাদরে ঢাকা বারকোশে চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করা হল, কিছু বাঙালি কর্মচারী পেছনে দাঁড়িয়েছিল আমাদের বাতাস করার জন্য। জেনারেল বললেন, ‘তোমরা আগে কেন ব্যাটিং করছো না?’
আমি তাকে বললাম, সাধারণ মানুষের ওপর গুলি ও নির্যাতনের প্রমাণ আমি নিজে দেখেছি। ‘আমার ছেলেরা সেটা করেনি,’ তিনি বললেন। তোমরা ব্রিটিশরা এখানে দাঁড়িয়ে যে সম্মান পাচ্ছো, তাদেরও (বাঙালি) একই সম্মান রয়েছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর মর্টার ও রকেট হামলা চালানো হল?’
‘দেখ,’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা রকেট লঞ্চার ব্যবহার করেছি, গুলি করেছি, কিন্তু তা শুধুমাত্র জনগণের মধ্যে একটা সাময়িক ভীতি তৈরি করার জন্য। এগুলো সাধারণ কিছু ছত্রভঙ্গ করার কৌশল। আমরা কাউকে লক্ষ্য করে কিছু করিনি।’
প্রেস ব্রিফিং শেষ হয় ক্রিকেট নিয়ে আলাপ করতে করতে, জেনারেলের মতে যা তার সবচেয়ে বড় ভালবাসা। ‘আমাদের ছেলেরা’, তিনি বললেন, ‘আগামী মৌসুমে আরো কিছু নতুন স্পিন বোলার নিয়ে আসছে যা এমসিসি’কে লজ্জায় ফেলবে। তারপর তারা দেখবে অস্ট্রেলিয়া কত ভাল খেলে।’
জেনারেল, লম্বা আর চৌকা এক মানুষ, উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের একান্ত সহকারীর দিকে একটা ফাঁকা বোলিংয়ের ভঙ্গি করলেন এবং সে নিজের স্টাম্প বিপর্যয়ের অনুভূতি দেখাল। ‘আমার কথাটা তোমরা মনে রেখো’ তিনি বললেন, ‘ওভালে চোখ খোলা রেখো, আমি বলে রাখছি।’
টীকা:
১) ল্ইুস বি মায়ার পঞ্চাশের দশকের হলিউড চলচ্চিত্র প্রযোজক, স্টুডিও মেট্রো-গোল্ডউইন-মায়ারের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।
২) রেমব্র্যান্ট হ্যামেসজুন ভন রিইন সপ্তদশ শতকের ডাচ চিত্রশিল্পী, ইউরোপীয় শিল্প-কলার ইতিহাসে ‘ডাচ স্বর্ণযুগে’র অন্যতম পুরোধা। আর ক্লাউড মনেট বিংশ শতকের গোড়ায় ফরাসী ইম্প্রেশনিস্ট ধারার অন্যতম আদি-শিল্পীদের একজন।
৩) দুজন মানুষ যখন একটি কসটিউম ব্যবহার করে ঘোড়া সাজে, একজন সামনের পা ও মাথা এবং অপরজন ঘোড়ার দেহ ও পেছনের পা হয়।
৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে নাজি বাহিনীর অবরুদ্ধ এলাকা যা প্রকৃতার্থে ছিল এক ভয়াবহ বন্দীশিবির।
৫) আর্থার নেভিল চেম্বারলেইন ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলের রাজনীতিবিদ, ১৯৩৭ থেকে ১৯৪০ মেয়াদে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সমালোচিত ছিলেন তার ‘নতজানু’ পররাষ্ট্রনীতির জন্য যার অন্যতম প্রকাশ ছিল ১৯৩৮ সালে হিটলারের সাথে করা ‘মিউনিখ চুক্তি’ যাতে ব্রিটেন চেকোস্লাভিয়ার একটি বিশাল অঞ্চলে নাজি জার্মানির অধিকার মেনে নেয়। পরে অবশ্য হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে তিনি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম আট মাস ব্রিটেনকে নেতৃত্ব দেন।
৬) Henry Kissinger, Years of Upheaval, Weidenfeld & Nicholson & Michael Joseph, London, 1982, Page 806. See also Page 677
৭) ৩০ মার্চ ১৯৭৭ সালে জন পিলজারকে লেখা এ ইউ এম ফখরুদ্দিনের চিঠিতে উদ্ধৃত।