অনলাইন সংবাদ সন্মেলনে রাষ্ট্রচিন্তার বিবৃতি

বিষয়: দিদারুল ভূঁইয়া সহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটককৃতদের ঈদের আগেই মুক্তি দিতে হবে!


প্রিয় দেশবাসী ও বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন আমরা একটা ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আছি, এর সাথে যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। অসম্ভব শক্তিশালী এই ঝড় অনেক দুর্বল হয়ে আসার পরেও আমাদের প্রায় ১০ জন মানুষের জীবন গিয়েছে, নষ্ট হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ী, ক্ষেতের পাকা ধান, আম-কাঠাল-লিচুসহ নানা ফসল। ইতিমধ্যেই করোনার কারনে নিঃস্ব হতে বসা মানুষদের উপর এই প্রাকৃতিক আঘাত আমাদেরকে আরো নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমরা আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ সকলের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং এই বিপদে সবাইকে সবার পাশে আরো দৃঢ়ভাবে দাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন করোনা সংকটের প্রথম থেকেই রাষ্ট্রচিন্তা আপনাদের সহায়তায় তার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষদের পাশে ত্রাণ কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলো। সক্রিয় ছিলো ত্রাণ কার্যে যুক্ত ভলান্টিয়ারদের সুরক্ষা ট্রেইনিং নিয়েও। এইসব কাজে একদম সামনের সারিতে থেকে ঝুঁকি নিয়ে মাঠের কাজের পাশাপাশি, আইটি সাপোর্ট নিয়ে ভলান্টিয়ারদের সুরক্ষা ট্রেইনিং এবং অপরাপর বন্ধুদের যোগাযোগের কাজটা সমন্বয় করছিলেন দিদারুল ভূঁইয়া। এমনকি ত্রাণ বরাদ্দের অনিয়ম, গাফিলতি, সমন্বয়হীনতার ফলে প্রয়োজনের তুলনায় যে সামান্য ত্রাণ সরকার বরাদ্দ করছিলো তাও যে প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে না পৌছেঁ কম দরিদ্রদের কাছে চলে যাচ্ছিলো সেটা দেশবাসী এবং সরকারের নজরে আনার কাজের সাথে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন দিদারুল।

কিন্তু আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, এইসব মানবিক কাজে যখন আমাদের তরুণদেরকে আরো ব্যাপক মাত্রায় সংযুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার ছিলো ঠিক সেসময়ে রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য, আইটি বিশেষজ্ঞ দিদারুল ভূঁইয়াকে গত ০৫ মে, ২০২০ইং তারিখে সন্ধ্যায়, ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক র‍্যাব পরিচয়ে তাঁর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। দেশ-বিদেশের বন্ধুদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পর রমনা থানায় তাকে হাজির করা হয়। দিদারুল ভূঁইয়া সহ আরো এগারো জনের বিরুদ্ধে র‍্যাব বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। এরপর দিদারুলকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হলে দিদারুল ভূঁইয়ার আইনজীবী এফআইএর (FIR) এ তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই উল্লেখ করে করোনাকালের বিশেষ স্বাস্থ্যঝুকির বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদনের বিপরীতে জামিন আবেদন করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের রিমাণ্ড আবেদন করোনাকালীন ছুটি শেষে শুনানীর জন্য রাখেন এবং দিদারের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

বন্ধুগণ,
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দিদারুল ভূঁইয়া সহ মোট এগারোজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তন্মধ্যে দিদার, কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুস্তাক সহ মোট চারজন কারাগারে আটক আছেন। ইতোপূর্বে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুস্তাক আহমেদের জামিন শুনানিতে অপাগরতা জানিয়েছিলেন আদালত। গতকাল ২০ মে, রোজ বুধবার, দিদারুল ভূঁইয়ার জামিন শুনানিও গ্রহণ করেননি আদালত। ফলে উচ্চ-আদালতে জামিনের দরখাস্ত করার ক্ষেত্রে আইনি জঠিলতা তৈরী হলো এবং করোনা সংকটের নামে অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাদের উচ্চ-আদালতে বিচার চাওয়ার অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হলো।

বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন রাষ্ট্র-সরকার চাইলে এ অবস্থায় মৃত্যূদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও মুক্তি দিতে পারে, আবার সম্পূর্ণ বিনা কারণেও একজনকে যতদিন ইচ্ছা ততদিন কারাগারে আটকে রাখতে পারে। আমরা রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষ থেকে এইসব উপনিবেশিক আইন এবং বিচার কাঠামোর সংস্কার চেয়ে আসছিলাম। দিদারুল ভুঁইয়াদের জন্য আইনী কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমরাসহ দেশবাসীর কাছে এইসব আইন-বিচার এবং ক্ষমতাকাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনকেই আরো স্পষ্ট এবং তীব্র করেছে। আমরা এ দেশের মানুষকে এ সংস্কারের দাবীতে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

বন্ধুগণ,
গত ০৭ মে, ২০২০ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে দিদারুল ভুঁইয়ার পরিবারের কোনো সদস্য বা তার আইনজীবী বা কারো সাথেই দিদারকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। অত্যন্ত সঙ্গত কারণেই আমরা দিদারসহ অপরাপর বন্দীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। প্রতিদিনই যেখানে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, এরকম একটা পরিস্থিতিতে কারাগার বন্দিদের জন্য সহ কারারক্ষী, কারা কর্মকর্তা বা কারাকর্মী কারোর জন্য কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এছাড়াও গত ০৭ মে, ২০২০ থেকে আজ পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে আদালত, যার মধ্যে ধর্ষণসহ খুন এবং শতশত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিয়ুক্তরাও রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বলা হয়েছে।

এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, হয়রানিমূলক ও নিবর্তনমূলক মামলায়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় দিদার-কিশোর-মুস্তাক-কাজলদের বন্দি রেখে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সাথে নিষ্ঠুর প্রহসনে মেতে উঠেছে সরকার। মহামারি সংক্রমণের নিশ্চিত ঝুঁকি থাকার পরেও তাদেরকে কারাগারে বন্দি রেখে কার্যত করোনায় আক্রান্ত হবার মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, দিদার সহ আটককৃতদের যেকোন স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্পূর্ণ দায় সরকারের।

আমরা রাষ্ট্রচিন্তা ও দিদারুল ভুঁইয়ার পরিবার, দিদারের সাথে কোনোপ্রকার দেখা-সাক্ষাতের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায়, দিদারের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে আছি। আমরা মনে করছি, এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করার মাধ্যমে সরকার কার্যত বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে এক নিষ্ঠুর ও বিপজ্জনক ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছে।তাই আমরা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিম্নলিখিত দাবি জানাচ্ছি :

  • অবিলম্বে, ঈদের আগেই দিদার-কিশোর-কাজল-মুস্তাক সহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটককৃতদের মুক্তি দিয়ে পরিবারের সাথে ঈদ করতে দিতে হবে।
  • দিদার-কিশোরদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই মামলাসহ ডিজিটাল আইনে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং সকল বন্দীর মুক্তি দিতে হবে।
  • গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

পরিশেষে, একের পর এক গণবিরোধী, স্বৈরাচারী এবং জননিপীড়নমূলক আইন বানানোর সরকারী এখতিয়ারের সাংবিধানিক ব্যবস্থা পাল্টানোর মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা জনগণকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহবান জানাই।

সবার প্রতি ভালোবাসা।

২১ মে ২০২০

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন:
হাসনাত কাইয়ূম
রাখাল রাহা
দিদারুল ভূঁইয়ার স্ত্রী দিলশাদ আরা অর্পনা
সহুল আহমদ

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে কারগরি সহায়তা দিয়েছেন প্রবাসী ব্লগার আরিফুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *