- জাহিদুল ইসলাম
মাইক্রোপলিটিক্স কাজ করে রাষ্ট্রিয় সমাজ বা নিয়ন্ত্রিত সমাজের মধ্যে। এটি খণ্ডন বা বিভক্তিকে তার কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে। এই বিভক্তির বাস্তব রূপ হিসেবে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম বা কর্মস্থলের ভিন্ন ভিন্ন অলঙ্ঘনীয় নির্দেশনা ও সীমানা রয়েছে। আমাদের বাস্তব জীবনে এসব অগণিত খণ্ডিত অবস্থানই “নিয়ন্ত্রনের কৌশল”। নিয়ন্ত্রিত সমাজে জনসাধারণ এক খণ্ডিত অবস্থান থেকে অন্য খণ্ডিত অবস্থানে গমণ করে। জিল দেল্যুজের ভাষায় “রাষ্ট্র শুধুমাত্র সেই খণ্ডিত বা বিভক্তির উপর ক্ষমতা চর্চা করেনা, রাষ্ট্র নিজেও সেই বিভক্তিকে লালন করে এবং চাপিয়ে দেয়।”১ এই খণ্ডিত অবস্থানটি একইসাথে কেন্দ্রিভূত। আমাদের “নিয়ন্ত্রিত সমাজের” মধ্যে “অনুশাসনতান্ত্রিকতার” প্রযুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে অক্ষম। ক্ষমতা এখানে খুবই কেন্দ্রিভূত, শোষণ বঞ্চনার কাঠামো খুবই স্পষ্ট। এটি বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনাকে ক্রমশ উৎপাদন করে। নিয়ন্ত্রিত সমাজে মাইক্রোপলিটিক্সের কাজ হচ্ছে বিভাজন তৈরি করা। “বাইনারি ফ্যাশনের” ভিত্তিতে এই বিভাজন তৈরি করা হয়।২
মাইক্রোপলিটিক্সকে বোঝার জন্য সামাজিক সাংস্কৃতিক অবস্থানের ক্ষমতা সম্পর্কিত বোঝাপড়া প্রয়োজন। বাঙালি সমাজ তার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ক্রিটিকের অভাবে তার মধ্যে গভীর বিপর্যয়গুলো বাস করে। আমাদের সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সম্প্রদায়, বর্গ এবং বর্ণের মধ্যে পরস্পর বিরোধপূর্ণ অবস্থানকে সঠিকভাবে চিহ্নিত না করার ফলে সাময়িকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে, তবে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রূপে রূপান্তরিত হয়ে একই সমস্যা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান পর্ব হয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যেও এগুলোর কোন কার্যকর সমাধান হয়নি। ভিন্নতার এবং বিভক্তির বোঝাপড়া মাইক্রোপলিটিক্সের বিরুদ্ধে সাড়া প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। ভিন্নতা প্রসঙ্গে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায় থেকে তিন ধরণের শিক্ষাব্যবস্থা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনা ও জীবন পদ্ধতি তৈরি করে। এই বিচ্ছিন্নতা বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও অবিচার সম্পর্কিত পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গিকে জটিল, দ্বৈত এবং অনিশ্চিত করে তুলে। যার ফলে জীবনের পক্ষে সবসময় চূড়ান্ত অবস্থান গ্রহণ ও নূন্যতম জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করে। মইক্রোপলিটিক্সের প্রভাবে নৈতিক অবস্থান ও ক্ষমতার ক্রিটিক স্ববিরোধীভাবে নিজের সাথেই উপহাস করে। ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সীমানা সমজাতীয় ধর্মীয় বিশ্বাস বা আদর্শগত অবস্থান নির্ধারণ করে দেয়। এটি অপর বা প্রতিপক্ষকে ক্ষমতার চূড়ান্ত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে রক্ষণশীলতাকে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়না। রক্ষণশীলতার উৎস অনুসন্ধান না করে অসংযতভাবে একে রাজনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করে।
আদর্শবোধের অবস্থান যখন স্ববিরোধীভাবে নিজের সাথে উপহাস করে তখন তা ক্রমাগত পুনরাবৃত্তিমূলক অবস্থান তৈরি করে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক বা সমাজ সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে বিপদাপন্ন করে তুলে। বিপরীতে নিয়ন্ত্রিত বা রাষ্ট্রীয় সমাজ নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করে। রাষ্ট্রীয় সমাজ তার ক্ষমতা চর্চার মধ্য দিয়ে সংস্কার ও প্রতিরোধের অবস্থানকে গভীরভাবে গোলমেলে করে তুলে। সংস্কারের বা প্রতিরোধের মূলপাঠ তাই অগভীর ও আংশিকভাবে উপস্থিত হয়। যার ফলে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক সংকটগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়না। এধরণের মূলপাঠ দূরবর্তী মুক্তির সম্ভাবনাকে স্থগিত রেখে একধরণের আপসরফা তৈরি হয়। এই আপসরফার ফলাফল হচ্ছে এটি জীবনের পক্ষে অবস্থানকে সংকুচিত ও দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলে, নৈতিকতাবোধ, আদর্শ চিন্তাভাবনার মধ্যে স্ববিরোধী অবস্থান তৈরি করে।
নিয়ন্ত্রিত বা রাষ্ট্রিয়সমাজের মধ্যে মাইক্রোপলিটিক্স যে জ্ঞানভাষ্য উৎপাদন করে তা একরৈখিক ও সংকুচিত। এটি ইতিহাসকে দেখে প্রগতির নিরিখে। অদূর ভবিষ্যতকেও একই প্রগতির অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। যার ফলে ইতিহাস তখন অভিজ্ঞতার আলোকে উপস্থিত থাকেনা। ইতিহাসের অবস্থান তখন সংকুচিত ও প্রতিক্রিয়াশীল। জ্ঞানভাষ্যকে কার্যকর করার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রিত সমাজে মাইক্রোপলিটিক্স বিভিন্ন বিভক্তিকে চাপিয়ে দেয়। এই অবস্থানকে মোকাবিলা করতে গিয়ে বিভিন্ন চিন্তাভাবনা যখন শুধুমাত্র আদর্শগত অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তখন সেই চিন্তা আত্মমুগ্ধতায় ভোগে। ক্ষমতাকে নির্মোহভাবে ক্রিটিক করা তখন কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়ন্ত্রিত সমাজে মানুষের চিন্তা,বিশ্বাস বা রাজনৈতিক আদর্শ তখন নিজের মধ্যেই সংকট তৈরি করে। আদর্শের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত লক্ষ্য (End) ও উপায় (Means) সম্পর্কিত। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আদর্শকে যখন শুধুমাত্র উপায় হিসেবে ব্যবহৃত তখন এর মূলে বলপ্রয়োগের ক্ষমতাশীল প্রবণতা কাজ করে। এর ফলে নিয়ন্ত্রিত সমাজে সংস্কারের প্রবণতা নিজেই বিভ্রান্তিকর ও স্ববিরোধী হিসেবে হাজির হয়। পাশাপাশি মানুষের চিন্তা বা রাজনৈতিক আদর্শের প্রভাবে জনগণ যেসব মানসিক ও আবেগি শক্তি ব্যয় করে তা কোন সুনিশ্চিত ফলাফল নিয়ে আসেনা। এর মাধ্যমে জনগণ আশা, আকাঙ্ক্ষা খুব বেশি স্থির ও বিমূর্ত হয়ে থাকে।
এই স্ববিরোধীতা মাইক্রোপলিটিক্সের বিভাজন কৌশল সম্পর্কে জানান দেয়। এই কৌশলই বৃহত্তর জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা চর্চার সহায়ক। শৃঙ্খলা বা নজরদারির চেয়ে বিশৃঙ্খলা ও অজ্ঞতা এই ক্ষমতা চর্চায় প্রভাবশালী। এর মধ্যে ফুকোর জ্ঞান/ক্ষমতার চেয়ে অজ্ঞতা/ক্ষমতা সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এখানে অজ্ঞতা ও ক্ষমতা পরস্পরকে টিকিয়ে রাখে। জনসাধারণের মধ্যে যতই অজ্ঞতা, বিভাজন ও পারস্পরিক বিরোধের সম্পর্ক তৈরি করা যায় ক্ষমতা ততই ক্রিয়াশীল। শিক্ষাব্যবস্থা জ্ঞান উৎপাদনের পদ্ধতিসমূহ ও গণমাধ্যম এই অজ্ঞতার ভিত হিসেবে কাজ করে। এগুলো যেনো স্বীয় সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, পারস্পারিক সম্পর্ক, ইতিবাচক পরিবর্তনের চেয়ে নিজস্ব চিন্তাভাবনা বলপূর্বক প্রতিষ্ঠিত করার কারখানা। মানুষের জীবনধারণের পদ্ধতি হিসেবে সংস্কৃতির উপর আক্রমণ: মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে পরস্পর বিরোধী হিসেবে উপস্থাপন বিশৃঙ্খলা ও অজ্ঞতারই ফল।
অজ্ঞতা/ক্ষমতা ফলে সামাজিক অসিহষ্ণুতার বিষয়টি সম্প্রসারিত হয়। এ অসিহষ্ণুতা অপরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে অবদমন করে রাখতে চায়। বিপরীতে জনসংস্কৃতি বহুত্বকে উন্মুক্ত বা আলিঙ্গগন করতে চায়। বিভাজনের চেয়ে ভিন্নতার অস্তিত্বকে স্বীকার করে জনসংস্কৃতি সবসময় ক্ষমতা সম্পর্ককে মোকাবিলা করতে সক্ষম। নিয়ন্ত্রিত সমাজে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির পারস্পরিক স্বীকৃতি ও উদারতা ব্যতীত ক্ষমতার মোকাবিলা ও মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।
তবে এক্ষেত্রে মাইক্রোপলিটিক্সের ‘সংস্কৃতি কারখানা’ (রেডিও, চলচ্চিত্র, সংবাদপত্র ইত্যাদি) তার কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্ভাবনাগুলোকে রহিত করতে তৎপর। এডোর্নো এবং হরখেইমার সংস্কৃতির সাথে কারখানা শব্দটি যুক্ত করেন কারণ এর সাথে মুনাফা লাভের বিষয়টি জড়িত। সংস্কৃতি কারখানা মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা বা পুঁজি। মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সংস্কৃতির এই পদ্ধতিকে নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যান্য কারখানা মতো সংস্কৃতি কারখানা পুঁজিবাদী নৈতিকতা দ্বারা পরিচালিত। সংস্কৃতি কারখানা ভোক্তাকে যেভাবে প্রধান হিসেবে উপস্থাপন করে ভোক্তারা আসলে তা নয়। এই উপস্থাপনের মাধ্যমে সংস্কৃতি কারখানা নিজেকে শুধুমাত্র সেবা প্রধানকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। বাস্তবে ভোক্তারা সংস্কৃতি কারখানার বিষয় নয় নিছক লক্ষ্য। ভোক্তারা সংস্কৃতি কারখানার বিভিন্ন পণ্যকে একক হিসেবে বিবেচনা করলেও অভিন্নতাই এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লেখকদ্বয়ের ভাষায় ‘সমস্ত গণসংস্কৃতি অভিন্নভাবে একচেটিয়া বাজারের অধীন।….চলচ্চিত্র এবং রেডিওকে শিল্প হিসেবে উপস্থাপনের কোন প্রয়োজন নেই। বাস্তবতা হচ্ছে এগুলা ব্যবসা ছাড়া কিছু নয় যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে তুচ্ছ বিষয় উৎপাদনের বৈধ আদর্শ হিসেবে ব্যবহৃত হয়’।৩ ভোক্তারা এখানে পণ্য পছন্দ করতে পারলেও তা তাদের পছন্দ নয়। কারণ তাদের জন্য পণ্য পূর্ব নির্ধারিত থাকে। সংস্কৃতি কারখানা সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভোক্তাদের চাহিদা তৈরি করে। জনসাধারণ হচ্ছে এসব সংস্কৃতি কারখানার (রেডিও, চলচ্চিত্রের) ভোক্তা। সংস্কৃতির কারখানা জনমনে যে চাহিদা তৈরি করে তা কখনো নিঃশেষ হয়না। এটি ক্রমাগতভাবে চলতে থাকে। ফলে জনগণের মনোজগতে সংস্কৃতি কারখানার বাইরে ভিন্ন দর্শন, চিন্তা বা মুক্তির পথ ঘটেনা। তাঁরা তাদের সামাজিক স্থিতাবস্থার মধ্যেই সন্তুষ্ট থাকে। এটি সামাজিক স্তরবিন্যাস বজায় রাখে। শ্রমিকরা এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে বাস করে যা অত্যন্ত যৌক্তিক ও বিমানবিক কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ। সংস্কৃতি কারখানা হচ্ছে সামাজিক ও মানসিক নিয়ন্ত্রণের কৌশল। সংস্কৃতি কারখানা আমাদের কল্পনা শক্তির সীমানা নির্ধারন করে দেয়। সিনেমা, সংগীত, বিজ্ঞাপন আমাদের কল্পনার জগৎকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এটি একধরণের কৃত্রিম মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা তৈরি করে। সংস্কৃতি কারখানা মাধ্যমে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেই সচেতনতা বিদ্যমান সমাজ ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর সীমানাকে স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে কাজ করে।
জনসাধারণের সচেতনতাবোধ তাদের সত্তাকে নির্ধারণ করতে পারেনা, বিপরীতে সংস্কৃতি কারখানা কতৃক নির্মিত সচেতনা তাদের সত্তাকে নির্ধারণ করে দেয়। এর ফলে জনগণ নিজেদের অবদমনের সাথে নিজেরাই জড়িত হয়। ব্যক্তি মানুষের সম্ভাবনা এর দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ চিন্তা ও কাজের পদ্ধতি সংস্কৃতি কারখানা কতৃক উৎপাদিত হয়। সংস্কৃতি কারখানা যেসব মূল্যবোধ নির্মাণ করে তা ক্ষমতার প্রভাবশালী চরিত্রকে সমর্থন করে। এটি জনসাধারণকে বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি আরো বেশি অনুগত হতে প্ররোচিত করে৷ এর কাজ জনসাধারণের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ। এ নিয়ন্ত্রণ জনসাধারণের জন্য একটি বিপদজনক অবস্থান তৈরি করে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতার জন্ম দেয় যা সামাজিক অন্যায্যের সাথে জড়িত। সংস্কৃতি কারখানার একক কতৃত্ব ক্ষমতাকে আরো সুগঠিত করে। সংস্কৃতি কারখানার আওতায় একজন পেশাজীবি মানুষ যে অবসর সময় ভোগ করেন সেটি আসলে অবসর নয়। এটি হচ্ছে ব্যক্তিকে তার পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলার প্রক্রিয়া।
সংস্কৃতি কারখানা যেসব মূল্যবোধ উৎপাদন করে নিয়ন্ত্রিত সমাজের পক্ষেই কাজ করে। সংস্কৃতি কারখানা তার কার্যপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনসংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি তার কাঠামোবদ্ধ মূল্যবোধের মাধ্যমে দমন নিপীড়ন ও নিয়ন্ত্রিত কার্যাবলিকে আড়াল করে। গণমাধ্যম কতৃক ভ্রান্ত গণসচেতনতার মাধ্যমে কোন আন্দোলনের কতৃত্ব শেষ পর্যন্ত সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে নেয়৷ বাস্তবতাকে অবজ্ঞা বা অবদমন করাই যার কাজ।
আমাদের দেশের গণমাধ্যম বিভিন্ন সংবাদের যে ফ্রেমিং করে থাকে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সংবাদপত্র যখন তাদের রিপোর্টিংগুলো করে তখন অসংযতভাবে প্রকৃত অবস্থান বর্ণনার চেয়ে সাবজেক্টিভ মতামত বা বিশ্লেষণকে প্রাধান্য দেয়। গণমাধ্যমে এই সাবজেক্টিভ অবস্থানের পিছনে রয়েছে রাজনীতি ও পুঁজির সম্পর্ক। আলী রীয়াজ ও মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমানের গবেষণা প্রকল্প এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।৪ এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম যারা পরিচালনা করে থাকেন তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। পাশাপাশি এগুলোকে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যাদের কাজ নিজস্ব স্বার্থে অজ্ঞতা/ক্ষমতাকে বজায় রাখা।
তথ্যসূত্র:
১) Gilles Deleuze and Felix Guattari, A Thousand Plateaus: Capitalism and Schizophrenia, Translation and Foreword by Brian Massumi, University of Minnesota Press, London (2005), Page 210.
২) Ibid, Page 208.
৩) Max Horkheimer and Theodor W.Adorno,Dialectic of Enlightenment Philosophical Fragment, Translated by Edmund Jephcott, (2002) page 95.
৪) Dr. Ali Riaz and Mohammad Sajjadur Rahman, Who Owns the Media in Bangladesh?, CGS, 2021