- লাবিব হোসেন
বিভিন্ন সময়ে শহরকে মানব দেহ, জৈব দেহ, যন্ত্র, দ্বিতীয় প্রকৃতি ইত্যাদির সাথে তুলনা করা হয় এবং হাল আমলে তৃতীয় এমনকি চতুর্থ প্রকৃতি হিসেবেও ধারণা দেওয়া হয়। এইসব ধারণাতে ধরে নেয়া হয় শহরের ভূমি হবে উঁচু এবং শুষ্ক যা কিনা পানি থেকে বিছিন্ন থাকবে। কারণ, ধরে নেয়া হয় শহরের অভ্যন্তরে পানি হচ্ছে অস্থিতিশীল এবং ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী উপাদান যাকে শাসন বা নিয়ন্ত্রণ এর প্রয়োজন। শহরের সাথে পানির সম্পর্কের মূলে রয়েছে কিভাবে পানিকে আবদ্ধ রাখা হয়েছে – ‘নদী’, ‘সমুদ্র’ অথবা পাইপ বা ড্রেনের মাধ্যমে। এই সব মাধ্যম থেকে পানি বেরিয়ে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে বর্ষা-বিধৌত বাংলা বদ্বীপ অঞ্চলের ‘শহর’ এর যে দশা আমরা প্রত্যক্ষ করি সেটা ‘ভূমি’ ও পানি’ বিষয়ক বিরাজমান সরলীকৃত ধারণার ফলাফল। ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার একেবারে কেন্দ্রে ক্রিয়াশীল ছিল নদী, এর পাড় ঘেঁষে বেড়িবাঁধ, ঔপনিবেশিক কাঠামো, রেলপথ ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে ‘শুষ্ক’ ভূমি তৈরি করা এবং জলধমনি গুলোকে আবদ্ধ করা। বর্তমান কালেও একই মানসিকতা বিদ্যমান।
পানি ও ভূমি সম্পর্কিত ঔপনিবেশিক ভাবনার গোড়াপত্তন
ধারাবাহিক ঔপনিবেশিক চর্চা এবং মদদে ঢাকায় ‘আবদ্ধ জল’ এবং ‘শুষ্ক জমি’র বয়ান চালু হয়েছিল। নদীর গতিপথের প্রতিনিয়িত বদল, জমি বিলীন এবং নতুন জমি জেগে ওঠা– এই যে বদ্বীপের বৈচিত্র্যময় ভূমির ধরণ, ঔপনিবেশিক কালের শুরুর দিকে এগুলোকে আঞ্চলিকীকরণ, শাসন এবং ভূমির উপর কর আরোপের ক্ষেত্রে বাধা মনে করা হয়েছিল। উপনিবেশিত অঞ্চলের ম্যাপ তৈরী করে, বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে এবং অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ঔপনিবেশিক সরকার ব-দ্বীপিয় ভূমি সম্পর্কে ‘নতুন’ জ্ঞান নির্মাণ করে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করার ও মুনাফা লাভের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছিল। একই সাথে নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রভাবশালী স্থানীয়দের (বণিক, জমিদার ইত্যাদি) এসব প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক দেবযানী ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন কিভাবে এর ফলে ধীরে ধীরে বাংলার মানুষ এখানকার সহজাত ‘আর্দ্র বাস্তুতন্ত্র’ (soaking ecology) বেমালুম ভুলে যেতে শুরু করে। জমি ও পানির এই বিকৃত বিচ্ছিন্নতাকে এতটাই অবশ্যসম্ভাবী করে তোলা হয়েছিল যে খোদ এসবের অস্তিত্বকে প্রশ্ন করার সামর্থ্যই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ঔপনিবেশিক এবং উপনিবেশিত উভয়ের জন্যই এই ভূ-সাংস্কৃতিক রূপান্তর কিছু নির্দিষ্টভাবে নগরকে এবং এর ভূমিরূপকে দেখার রীতি চালু করে।
ঔপনিবেশিক থেকে উপনিবেশোত্তর সময়ে প্রবাহিত শোষণের পরম্পরার নিশানা বের করা উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় লক্ষ্য। এখন স্বভাবতই যে প্রশ্ন হাজির হবে- জমি ও পানির বিচ্ছিন্নকরণ কিভাবে ঔপনিবেশিক শোষণ পদ্ধতি হিশেবে কাজ করেছে এবং উপনিবেশোত্তর বাংলাদেশে এর ধারাবাহিকতা কীভাবে রক্ষা পেয়েছে? এ প্রশ্নগুলো জরুরি কারণ এর সাথে শহর সম্পর্কে আমাদের ধারণা, জলাশয় এর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং বন্যা সম্পর্কে ধারণার বিষয়গুলো গভীরভাবে যুক্ত। আমাদের তাঁতি এবং মসলিন শিল্পীরা উন্নতমানের মসলিন কাপড় বোনার জন্য পুরোপুরি জলজ জমি এবং আর্দ্র আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। মসলিন কাপড় যে অতি কোমলতা ও সূক্ষ্মতার জন্য ভূবনবিখ্যাত ছিল তা মূলত বাতাসের আর্দ্রতার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আর্দ্রতা জলের-ই আরেক রূপ হলেও বর্তমানে আমরা জলকে যেভাবে কল্পনা করি ঠিক সেরকম নয়। বনভূমি ও জলাশয় এর উপস্থিতি এবং মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেই এখানে এরকম স্যাঁতস্যাঁতে, আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করত।
বৃটিশরা আসার আগেই বাংলায় বন ও জলাভূমি নিধনের কার্যক্রম শুরু হলেও মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলেই এই নিধনযজ্ঞ নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছায়। কারণ ভূমি থেকে রাজস্ব আদায় কোম্পানির প্রধান বিবেচনার বিষয় ছিলো। জমি জলের পৃথকীকরণ, চাষযোগ্য জমি বাড়ানো এবং রাজস্ব উপার্জনকে সহজতর করতে ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন এবং ১৮২৫ সালের বেঙ্গল এলুভিয়ন ও ডিএলুভিয়ন রেগুলেশন প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনভূমি নিধন এবং জল ও ভূমির সীমানা নির্ধারণ ও বিধিবদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় মসলিন বোনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল শিল্প বিপ্লব প্রভাবিত অতিরিক্ত কর আরোপ যাতে মসলিন শিল্প পুরোপুরি বাধাগ্রস্থ হয়। অভিজ্ঞতা না থাকলে ও অনেক তাঁতিকে তাই কৃষিকাজ এবং অন্য পেশা বেছে নিতে হয়েছিল। আঠারো শতকের শেষ এবং ১৯ শতকের শুরতে বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতে বহু তাঁতি বেঘোরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
স্থপতি ও চিন্তাবিদ দিলীপ দ্য কুনহা সম্প্রতি তার একটি কাজে দেখিয়েছেন, যে দাগের সাহায্যে মানচিত্র আঁকা হয়েছিল, এবং ভূমি ও পানিকে আলাদা করা হয়েছিল, সেটা ছিল স্থানীয়দের অধীনস্থ করা এবং ‘আন্ডারক্লাস’ তৈরির একটি উপনিবেশিক হাতিয়ার। সে অর্থে উপনিবেশকালের ‘শুষ্ক ভূমি’ এবং ‘আবদ্ধ জল’ এর সংজ্ঞায়ন ছিল শোষণের মাধ্যম, কেননা এর ফলে স্থানীয়দেরকে তাদের অভ্যস্ত জলচক্রের সম্পৃক্ত পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভিন্ন এক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হয়। ঐতিহাসিক ভ্যান শেনডেল উপনিবেশকালের পূর্বে বাংলায় পানি নির্ভর কারিগরী শিল্প-ভিত্তিক অর্থনীতের অস্তিত্বের কথা বলেছেন। উপনিবেশিক প্রশাসন তাদের মুনাফা তৈরীর কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বহু স্থানীয় কারিগরী শিল্প ধ্বংস করে ধান-চাষকে ‘নিম্নশ্রণীর’ মানুষের জন্য সার্বজনীন পেশায় পরিণত করে। ভূমিতে উপনিবেশিক হস্তক্ষেপ শুধু মসলিন শিল্প বা কারিগরী অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেনি, পরবর্তী আরও শোষণ ও বৈষম্যের পথও পরিষ্কার করেছে।
ঔপনিবেশিক ভাবনার ধারাবাহিকতা
এখন প্রশ্ন হল ‘ভূমি’ এবং ‘পানি’ এর এই বিশেষ রূপটির বর্তমান অবস্থা কি এবং উত্তর উপনিবেশ বাংলাদেশে এটি কিভাবে বিরাজমান? ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা স্থানীয় জমিদার কর্তৃক বাঁধ নির্মিত হলে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কেননা এই বাঁধগুলো ভূমি ও পানির মধ্যেকার বিভাজনকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়। বাঁধ এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণে একইরকম আগ্রহ এখনো জাতীয়ভাবে দেখা যায় এবং প্রায়ই সেগুলো আন্তর্জাতিক ও বিশ্বসংস্থাগুলোর বাহবা কুড়ায়। এজন্য দেখা যায় প্রতি নির্বাচনের আগে উন্নয়নের নামে নদী নিয়ন্ত্রণ এবং বন্যা মোকাবেলায় বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। উত্তর-উপনিবেশিক চিন্তক ফ্রানৎস ফানোঁঃ তার প্রভাবশালী কাজে দেখিয়েছেন, কীভাবে উপনিবেশিক ডিসকোর্স উপনিবেশিতের মধ্যে ইউরোপীয় বা পশ্চিমাদের মত হওয়ার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলে। উপনিবেশিক সত্তা থেকে উত্তর-উপনিবেশিক জাতিরাষ্ট্রে রূপান্তরে জারি থাকা যোগসূত্রের মধ্যে এটা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বক্তৃতায় বেড়িবাঁধ নির্মাণকে এমনভাবে দোখানো হয় যেন, বেড়িবাঁধ আধুনিকতার প্রতীক এবং এমন নিয়ন্ত্রণ বাড়ালে আমরা আরো বেশি সভ্য হবো। তাই আমরা চাই বুড়িগঙ্গা নদী যেন দেখতে ঠিক টেমসের মত হয়! এজন্যই ‘জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক কী দরকার?’ এবং ‘এই বর্ষাস্নাত-ভূমির নগরের প্রকৃতি আসলে কেমন হবে?’ এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই আকাঙ্ক্ষার কবলে ঠাঁই পায় না।
প্রতিবছর আমরা শহর রক্ষার নামে অনেক বাঁধ এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করি। শহরগুলো কেবল একটা বড় অংশের জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার কারণেই নয়, বরং বাণিজ্য চালিত সমাজের কেন্দ্র হিসেবেও অধিক গুরুত্ব পায়। এ প্রক্রিয়ায় অ-শহুরে জনবসতি এবং তাদের বাসিন্দাদের প্রান্তিক করে ফেলা হয়। এক স্থানে যতবেশি বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়, অন্য স্থানে এর প্রভাব তত বেশি পড়ে। সম্প্রতি পদ্মা নদী রাতারাতি কয়েক মাইল সরে যাওয়ায় তিন-তলা বিশিষ্ট শিবচর মডেল হাইস্কুল ডুবে যাওয়ার ঘটনা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অপরদিকে শহরগুলো বাঁধ দ্বারা আবদ্ধ হওয়ায় প্রতিবছর জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর পরেও মাটি থেকে অনেকটা উঁচুতে থাকার সামর্থ্য যাদের আছে তারা বাড়িতে বসে খিচুড়ি খেয়ে এবং রবীন্দ্র সংগীত শুনে বর্ষাযাপন করতে পারে। কিন্তু ঘরের বাইরে পা রাখলে বর্ষা এবং শহরকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। আমাদের নিত্যদিনের নাগরিক জীবনের সে কি নিদারুণ বৈপরীত্য!
নিশ্চিতভাবেই জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার এই যুগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কোনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না, এবং বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল এবং ‘মৌসুমি জলবায়ু’-বিধৌত গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র বদ্বীপের জন্য তো এগুলো একেবারে অনুপযোগী। আর তাই শহরে হারহামেশা জলাবদ্ধতার ঘটনা, এবং অ-শহুরে/আধা শহুরে অঞ্চলের বিভিন্ন ধরণের দালান-কোঠা-কাঠামো হারিয়ে যাওয়া এই ধরণের ‘হার্ড-ইঞ্জিনিয়ারিং’ ভাবনার সমস্যাকে ফুটিয়ে তুলছে। সর্বোপরি এই ধরনের হাইড্রোলজিক্যাল অবকাঠামো বৈষম্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
বিউপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি
এখন প্রশ্ন হতে পারে বেড়িবাঁধ সমাধান না হলে এর বিকল্প চিন্তা কি? প্রসঙ্গটিকে এর সাথে বিদ্যমান জটিলতার সাথে বিবেচনা করলে বোঝা যাবে এর কোনো সোজাসাপটা উত্তর অথবা গাণিতিক সূত্র নেই। তবে এই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ার সাথে শহর এবং ভূমি বিষয়ক আমাদের চিন্তাভাবনার বিউপনিবেশায়ন জড়িত। এটা শুরু হবে উপনিবেশিক ইতিহাসকে স্বীকার করা, এবং উপনিবেশিক আমলে তৈরি মিথ্যে আকাঙ্ক্ষাগুলো, যা কিনা উত্তর-উপনিবেশ আমলেও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান, সেগুলো চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে। এটি উপনিবেশিক ভূমি-পানির বিচ্ছিন্নকরণ এবং শহর ও ভূমিকে দেখার আমাদের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যকার যোগসূত্র ধরিয়ে দিবে। পানির মত একটি প্রাকৃতিক উপাদান ঢাকায় আমাদের শত্রু হয়ে গেছে এবং বন্যার মত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, এগুলকে কী এখন আর এতটা ‘প্রাকৃতিক’ বলে মনে হয়?
প্রতিবছর জুন-জুলাই মাসে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হওয়া বৃষ্টি নদী উপকূলকে প্লাবিত করে। এই অতিপ্রবাহকে বন্যা বললেও আমাদের ‘আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি’ এই অতিপ্রবাহের উৎস খোঁজে। তাত্ত্বিকভাবে, যেখানে জল শেষ হয় এবং ভূমি শুরু হয় সেই দাগেই এটা থাকে। অনুরাধা মাথুর এবং দিলীপ দ্য কুনহা দেখিয়েছেন, যাকে আমরা এখন ‘বন্যা’ বলি তা কোন প্রাকৃতিক ঘটনা নয়। কারণ পানি যখন শক্ত দাগগুলো অতিক্রম করে তখন আমরা তাকে বন্যা বলি, আর এই দাগগুলো যা দিয়ে জল ও ভূমিকে আলাদা করা হয়, মানুষেরই সৃষ্টি। এই দাগগুলোকে প্রশ্ন করতে পারলে, আমরা বন্যার অস্তিত্বকে প্রশ্ন করতে পারবো। বরঞ্চ, আমরা যাকে ‘বন্যা’ বলি সেই অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হবে এবং বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশবে। এজন্য নগরের ভূমিরূপকে এমনভাবে আমাদের ভাবতে হবে যেটি পানিকে বাঁধা দেয় না, বরং বৃষ্টি ও পানিকে স্বাগত জানায়, অতিরিক্ত পানি শুষে নেয় এবং বাষ্প হতে দেয়। এজন্য বিদ্যমান শক্ত দাগগুলোকে শিথীল করার উপায় খুঁজতে হবে এবং ভুলে যাওয়া ‘soaking ecology’-কে কিভাবে নগর পরিকল্পনার সাথে মিলানো যায়- তা খুঁজে বের করতে হবে।
শহর-গ্রামের বাইনারির উর্ধ্বে বা সীমানা চিন্তার ঊর্ধ্বে ইকোলজিক্যাল স্কেল-ভিত্তিক চিন্তার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মৌসুমী অভিজ্ঞতাকে সামনে আনতে হবে। পানি ও বন্যা ভাবনার যে বর্তমান সংকট তা কাটিয়ে উঠার জন্য দরকার ‘বিউপনিবেশায়ন’। চিন্তকদের ভাষ্য অনুযায়ী ‘বিউপনিবেশায়ন’ একটি ধীর প্রক্রিয়া এবং চটজলদি কোনো সমাধান দিয়ে এটা হয় না, এবং হওয়া উচিতও না। এর জন্য আমাদের চিন্তাভাবনা এবং উপলব্ধিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। এটি একটি ট্রান্সডিসিপ্লিনারি কাজ যেখানে অন্যান্য ডিসিপ্লিনগুলোর যুক্ততা দরকার। সুতরাং ভবিষ্যতে নগর-পানি পরিকল্পনা প্রকল্পতে কেবল রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী এবং নগর পরিকল্পনাকর্মীদের নিযুক্ত করলেই হবে না বরং ঐতিহাসিক, নৃবিজ্ঞানী, স্থপতি, লেখক, সম্পাদক এবং স্থানীয় সাধারণ জনগণকে ও যুক্ত করতে হবে।
- লাবিব হোসেন: পিএইচডি ফেলো, স্থাপত্য ইতিহাস, কর্নেল ইউনিভারসিটি এবং লেকচারার (অন লিভ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ইমেইল: lh636@cornell.edu
- ভাষান্তর: নিশাত জাহান নিশা ; শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
মূল লেখার লিঙ্ক: Decolonising the cities to address flood, rain and water, Daily Star, August 17, 2020