- লেখক: লুবানা বিনতে কিবরিয়া
বন্ধুরা সবাই উচ্চশিক্ষার্থে পরদেশে যাচ্ছে – যারা এখনো যায় নি, তারা যাওয়ার কথা ভাবছে। দুদিন আগে পরে প্রায় সবারই দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা আছে – পড়াশোনা শেষ করে একটা নিরাপদ আর সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে পারলে আর ফিরে আসার প্ল্যান প্রায় কারোরই নেই।
আজ থেকে চার পাঁচ বছর আগে এভাবে বিদেশে গমন করে ফিরে না আসাকে আমি ক্ষমা করতে পারতাম না। পরিচিত যারা পরদেশে সেটল হয়েছেন, তাদের সাথে প্রায়ই ঝগড়া বাঁধাতাম – কেন তারা ফিরছেন না – তাদের কি কোন দায়িত্ব নেই দেশের প্রতি? স্বীকার করতে দ্বিধা নাই তাদের দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাঁধত না।
গত দেড় বছরে আমার দেশে থাকার মোহ কেটে গেছে। এ মোহ প্রায় সবারই কেটে গেছে – যার সুযোগ আছে, সে কোন না কোন উপায় করে দেশ ছাড়ছে। প্রতিদিন দেশ ছেড়ে যাওয়া বিপুল মানুষ বিদেশে গিয়েও মনে মনে ভালো থাকতে পারে না – আজকাল দেখতে পাই – তাদের অনেকেই একধরনের মানসিক সংকটে ভোগেন – ‘আমি কি খুব স্বার্থপর? দেশে কি কিছুই করার ছিল না আমার? দেশ আমাকে পড়াশোনা করিয়ে যোগ্য করে তুলেছে আর সেই যোগ্যতা ব্যবহার করে দেশ ছেড়ে চলে এলাম – তাহলে আমার এতকাল অনুভব করে আসা দেশপ্রেম – জাতীয় সংগীত আর দেশের গানে রক্তে যে স্পন্দন তৈরি হতো – সেগুলো মেকি ছিলো?’ – এই প্রশ্নগুলো তাদেরকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে – মানসিকভাবে বিপন্ন করে।
দুদিন আগে আমার এক বন্ধু নিজেকে এইসব প্রশ্ন করে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে নিজেকে ভণ্ড ঠাউরেছে – তার আত্মশ্লাঘার জায়গাটা আমি চিনেছি। তাই ওকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলতে হলো সে আসলে দেশপ্রেমের অভাবে বা ভণ্ড বলে দেশ ছাড়ে নি; বরং রাষ্ট্রই দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে।
কাল রাতে আরেক বন্ধু নক করে বললো, পূর্বোক্ত বন্ধুর পোস্টে করা কমেন্টটা যেন আমার ওয়ালে পোস্ট করি স্ট্যাটাস আকারে – আরও মানুষের পড়া উচিত এই লেখাটা। এই বন্ধুটিও সদ্য দেশ ছেড়েছে – পরদেশে বসে এখন একই চিন্তা করছে – দেশেই যদি কিছু করা যেত তাহলে মাটি আর মায়ের সাথে থাকা যেতো!
ছাত্রাবস্থায় মানুষ সবচেয়ে ইনোসেন্ট, সৎ, ন্যায়পরায়ণ আর ইমোশনালি পিওর থাকে – ছাত্রদের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থের ব্যাপারগুলো থাকে না বলেই তারা ফুলেল মানুষ হয়ে থাকে। ছাত্রত্ব টুঁটিয়ে লেবারফোর্সের অংশ হয়ে জব মার্কেটে ঢোকার মাধ্যমে একজন ছাত্র মেইনস্ট্রিমের অংশ হয় – সে রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে ওঠে – নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রে তার অবস্থান কেমন জানতে পারে। আমার বন্ধুর স্ট্যাটাসে তার আত্মশ্লাঘাবোধ দেখে তাকে বলেছিলাম –
‘দেশে আয়। মেইনস্ট্রিমের অংশ হ। স্টুডেন্ট হিসেবে না, একজন নাগরিক হিসেবে – তখন যদি দেশে থাকার ইচ্ছে থাকে, থেকে যা।’
বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবো না – এটাই জানতাম বড় হওয়ার পর থেকে। সেজন্য উচ্চ শিক্ষা নিতে বিদেশে যাবো – এটাও সিরিয়াসলি ভাবি নাই। ভাবতাম দেশে চাকরি বাকরি করবো – যেমন মধ্যবিত্তের লাইফ হয় আর কি – কখনো সুযোগে সময়ে মিলে গেলে পড়াশোনা করতে বিদেশে যাবো – ফিরে আসবো।
এরপর পাস করে জব মার্কেটে কম্পিট করতে নামলাম এবং এর মাধ্যমে নাগরিক হিসেবে মেইনস্ট্রিমে প্রবেশ করলাম। ছাত্রাবস্থায় যে ব্যাপারটা বুঝি নাই, সেটা নাগরিক হয়ে বুঝলাম –রাষ্ট্র আমাকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়েছে নামমাত্র মূল্যে, যোগ্য করে তুলেছে এতখানি কিন্তু নাগরিক সম্মান দিয়ে সম্মানিত করে নি। নাগরিকের আত্মসম্মান আর সম্ভ্রম রক্ষার ন্যুনতম ব্যবস্থা করে নি। সম্ভবত এই ব্যাপারটা ফিল করে অধিকাংশ মানুষ দেশ ছাড়ে। অন্তত আমার তাই ধারণা।
তো কি কি ব্যাপার দেখে আমি বুঝলাম আমি যে নাগরিক হিসেবে সম্মানিত ফিল করি না? আমি যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিই, মাসে কয়েক বার আমাকে ঢাকায় আসা যাওয়া করতে হয়। এই দীর্ঘ যাত্রায় অপদস্থ হওয়ার সব ব্যবস্থাই আমার রাষ্ট্র করে রেখেছে। আসা যাওয়ার পথে বা শহরের নানা জায়গায় কোথাও পাবলিক টয়লেট নাই – রাজধানী শহরের সায়দাবাদ বা মহাখালীর মত প্রবেশমুখে যাত্রী তথা নাগরিকের জন্য খাবার পানি, বসার জন্য একটু ছায়া বা ছাউনি – একটু স্বস্তির ব্যবস্থা নাই।
কমলাপুরের মত রেলস্টেশনে প্রথম শ্রেণীর ওয়েটিং রুম ছাড়া পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নাই। প্রথম শ্রেণীর ওয়েটিং রুমে একটা ওয়াশরুম। সেখানে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য। আমার নিজেরই সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা আছে বেশ কয়েক বার। তার উপর পুলিশ এসে টিকেট চেক করে মাঝেমধ্যে, যাত্রীরা সব ফার্স্টক্লাসের কিনা দেখে, এমনও দেখেছি ফার্স্টক্লাস না হলে লাইন থেকে বের করে দিচ্ছে! আমি এতে মানবসত্তার চূড়ান্ত অবমাননা দেখতে পাই।
একটা দীর্ঘ জার্নির পরে একটু ফ্রেশ হওয়ার জায়গা মানুষ পাচ্ছে না – এ মানবিক আর প্রাকৃতিক প্রয়োজনের ব্যাপারটা নাগরিকদের দেখে রাখার দায়িত্বপ্রাপ্তগণের বোধে নাই? নাকি তারা নাগরিকদের মানুষ হিসেবে কেয়ারই করে না?
প্রাকৃতিক কর্ম করার ধরন মানুষকে অন্য প্রাণীর থেকে আলাদা করে ফেলে। মানুষ এটা সভ্য এবং সম্মানজনক উপায়ে ম্যানেজ করে থাকে। আমার রাষ্ট্র মানুষ হিসেবে আমার এই মৌলিক প্রয়োজনের সম্মানজনক ন্যুনতম ব্যবস্থা কোথাও করে নাই। আমি খুবই অসম্মানিত ফিল করি এইসব সিচুয়েশনে। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নেই – আমি ঢাকার কোথাও পাই নাই – এক্সামের আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নির্ভার এক্সাম দেওয়ার সুযোগ কখনোই মিলে না। আর নারী হওয়ার কারণে এইসব ভালনারেবিলিটি কতগুণ বেড়ে যায় তা সহজেই অনুমেয়।
এই রাষ্ট্র জনবান্ধব নয়– নারী শিশু বান্ধব তো নয়ই। সহজে পথ চলার কোন উপায় নাই– মিরপুর দশে এক্সাম ছিলো একবার। যে ভবনে সিট পড়েছিল, সেটা দশতলা বিশিষ্ট – কোন লিফট নেই – আমার সাথে পাশাপাশি সিঁড়ি ভাঙছিলেন একজন আসন্নপ্রসবা নারী – হাঁটতে পারছিলেন না – ব্যথায় মুখ কুঁকড়ে যাচ্ছিলো। ছয় তলায় আমার আসন ছিলো – ওই নারীর ছিলো আরও উপরে – তার বিধ্বস্তমুখ এখনো মনে পড়ে।
পেটের শিশু, স্কুলে যাওয়া শিশু – কোন শিশুই নিরাপদ না এখানে। আরো অনেক অসম্মানের দিক আছে – আমি জাস্ট এই জিনিসটা বললাম। পদে পদে অসম্মান মানুষের আত্মাকে সাপ্রেসড করে। আমি এইটুকু বুঝেছি রাষ্ট্র যদি আমার নাগরিক সম্মান ফিরিয়ে দেয়, আমরা নাগরিকরা অপরাপর নাগরিকদের সম্মান করা শিখে যাবো।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবল অপর্যাপ্ত ওয়াশরুমই মূল সমস্যা নয়। বিদ্যমান ওয়াশরুমগুলোও ব্যবহার উপযোগী থাকে না। নাক মুখ চেপে, গা গুলানো অনুভূতি নিয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। এই নিয়ে আমার বেশ ট্রমাটিক স্মৃতি আছে। অপ্রীতিকর স্মৃতিকে সাধারণত আমি অনেক গভীরে কবর দিয়ে ফেলি। ভুলেও খুলে নাড়াচাড়া করার সাহস পাই না। প্রসঙ্গক্রমে এক ভয়াবহ অপ্রীতিকর স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। কয়েক মাস আগে আমার এক এক্সাম ছিলো যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলে। যথারীতি ওয়াশরুম সুবিধা খুঁজতে বের হলাম। পেয়েও গেলাম সহজে। ভেতরে ঢুকে অতি নোংরা, ভেজা আর চোখ অন্ধকার করে বমি পাওয়া দুর্গন্ধের কবলে পড়ে বের হয়ে হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে নিতে টের পেলাম উপর থেকে হড়হড়িয়ে জলধারা নামছে। তড়াক করে লাফ দিয়ে সরতে সরতে আবিষ্কার করলাম সিলিংয়ের দিকে উন্মুক্ত ফাটা স্যুয়ারেজ পাইপ – সেখান থেকে গড়াচ্ছে… হয়ত উপরে কেউ ইউজ করছিল বরাবর উপরের ওয়াশরুমটা… আমার জামাকাপড়ে ছিটেফোঁটা এসে লাগলো বলে টের পেলাম… সাথেসাথে আমার দুচোখে আধার নেমে এলো…. বাইরে এসে সমস্ত পৃথিবী ঝাঁকুনি দিয়ে বমি এলো। খালি পেটে একদলা তিতকুটে পানি বমি করে কাঁপতে কাঁপতে পরীক্ষা কক্ষে এসে ধপাস করে বসলাম… আমি কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম… নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলাম না… চরম অবমানিত… অসম্মানিত আর হতাশ ফিল করছিলাম… আমার মনে হয়েছিলো মৌলিক মানবসত্তার চূড়ান্ত অপমানের স্বীকার হয়েছি আমি!
এই ধাক্কাটা সামলে মাঝরাতে সিলেটে ফিরে এসে স্নান করতে গিয়ে আরেক দফায় ইমোশনাল ব্রেক ডাউনের স্বীকার হলাম। সারাদিন রাগ হতাশা ঘেন্না যন্ত্রণা ধুয়ে যখন নিজের মধ্যে ফিরছিলাম তখন আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লাম…
আমি অতি সংবেদনশীল ধরনের মানুষ। কদর্য, বিভীষিকা আর অসুন্দরের স্মৃতির চর্চা আমাকে কষ্ট দেয়। আমি তাই যত্ন করে এসব কবর দিয়ে ফেলি। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতাটা কবর দিতে গিয়েও নানা ভাবনা এসেছ – নিশ্চয় এই উন্মুক্ত স্যুয়ারেজ পাইপ লিকেজের কথাটা ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। কোন না কোন ছাত্রও হয়ত আমার মত বিড়ম্বনায় পড়ে থাকবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটা সারাবার প্রয়োজন মনে করে নি। ছাত্রছাত্রীদের এই মানবিক সম্মানটুকু দেওয়ার দরকার উনাদের বোধে আসে নি।
এই যে একটা রাষ্ট্র– এখানে নিজ নিজ জায়গায় থেকে অন্যকে অসম্মান করার চর্চাটা হচ্ছে– এটা সর্ব ব্যাপী; সর্বময়।
স্কুলের শিক্ষকগণ পিওন/ কর্মচারী/ ছাত্রছাত্রীদের সাথে মানবিক এবং সম্মানজনক আচরণ করেন না। প্রধান শিক্ষক অন্য শিক্ষকদের সম্মান করেন না। প্রধান শিক্ষককে তার বড়কর্তা সম্মান করেন না। বড়কর্তাকে তার বড়কর্তা; তার বড়কর্তাকে তার বড়কর্তা এভাবে উচ্চক্রমে চলতে চলতে সাংবিধানিক ঈশ্বর পর্যন্ত যেতে থাকবে! অধীনস্থ/ অধস্তনকে অসম্মান করার সুযোগ ক্ষমতার বর্গের সমানুপাতিক। ক্ষমতা দ্বিগুণ হলে অন্যকে অসম্মান করার সুযোগ চারগুণ বেড়ে যায়। যে রাষ্ট্র তার জনগোষ্ঠীকে নূন্যতম নাগরিক সম্মান দেয় না, যে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতার ভার্টিক্যাল হায়ারার্কি মেনে পরস্পরকে অসম্মানের চর্চা চলে; সে রাষ্ট্রে নাগরিকগণ পরস্পরকে সম্মান করবে কী করে। রিক্সা চালককে কেবল সে রিক্সা চালায় বলে ‘তুই’ ডেকে ফেলা যায়। সে রাষ্ট্রে বিসিএসটা তো আরাধ্য হয়ে উঠবেই। কারণ বিসএস ক্যাডার হতে পারলেই কেবল এ রাষ্ট্রে সম্মান, যশ, খ্যাতি পাওয়া সম্ভব। যে রাষ্ট্রে আগামী প্রজন্ম তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মানবিক সম্মান পায় না, তারা বড় হয়ে অপরাপর মানুষকে সম্মান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না। ফলে ইউএনও বা প্রশাসনের কোন বড়কর্তা মাছওয়ালাকে ‘বেয়াদবি’ র জন্য লাথি মেরেছে বলে খবর আসে প্রায়শই।
তো বলছিলাম এই লেবার ফোর্সে ঢোকে জব খুঁজতে গিয়ে আমার রিয়েলাইজেশন হলো আমি যে অসম্মান ফেইস করেছি, আমার সন্তান যেন তা ফেইস না করে। এর উপায় দুইটা – হয় আমি রাষ্ট্র সংস্কারের চেষ্টা করবো; নাহয় নাগরিক সম্মান নিশ্চিত করে এমন দেশে মুভ করবো। যদি দ্বিতীয় অপশন বেছে নিতে হয়, আমি মনে করি না আমার দেশপ্রেম নেই।
দেশপ্রেম বা দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ শুধু ইমোশন থেকে আসে না – নাগরিক হিসেবে অধিকার ভোগের মাধ্যমে দেশের প্রতি দায়িত্বের বোধ গড়ে উঠে। এই জিনিস আমার রাষ্ট্র দিতে পারছে না – ফলে বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গ এলে আমি দেশের জন্য যে টান ফিল করি, সেটা মাতৃভূমির মাটির প্রতি টান- নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যের টান নয় – বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের জন্য এই কথা খাটে। সুতরাং, আমি মনে করি আমার রাষ্ট্র আমারে সম্মান দিয়ে রাখতে পারছে না বলে আমার থাকা হচ্ছে না।
রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক অঙ্গীকার ভঙ্গ করছে– সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ১১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—‘প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্র হবে এমন একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা হবে…..’
জন্মলগ্ন থেকে এই রাষ্ট্র কখনোই মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করার ন্যুনতম ব্যবস্থা করেছে বলে মনে হয় নি। সিনিয়র সিটিজেনদের অভিজ্ঞতায় আর ইতিহাস পড়ে অন্তত তাই মনে হয়েছে৷ মানবাত্মা এখানে চরমভাবে অবমাননা আর অবদমনের স্বীকার হচ্ছে।
আমি এখনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগটা পাই নি – ভোটাধিকার প্রয়োগের যোগ্যতা অর্জনের পরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন আর হয় নি – সুষ্ঠু নির্বাচন যদি কখনো হয়, নাগরিক সম্মান ও মানবসত্তার মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি যিনি দিবেন – তিনি আমার প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।