রাষ্ট্রনৈতিক প্রস্তাবনা ও কর্মসূচী
অসীম সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ আজ এক গভীর খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। পতনের হাত থেকে বাঁচিয়ে একে সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে হলে ১৯৪৭ কিংবা ১৯৭১ সালে যেরকম পরিবর্তন হয়েছিল, ভৌগোলিক অর্থে নয়, রাজনৈতিক অর্থে তার চেয়েও বড়ো পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের উদ্ধার পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই।
৭ই বৈশাখ ১৪২৫ (২০শে এপ্রিল ২০১৮) তারিখ শুক্রবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউট, ঢাকায় ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ আয়োজিত রাষ্ট্রনৈতিক সভায় আলোচনা ও মতামতের জন্য উত্থাপিত।
ভূমিকা
অসীম সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ আজ এক গভীর খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। পতনের হাত থেকে বাঁচিয়ে একে সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে হলে ১৯৪৭ কিংবা ১৯৭১ সালে যেরকম পরিবর্তন হয়েছিল, ভৌগোলিক অর্থে নয়, রাজনৈতিক অর্থে তার চেয়েও বড়ো পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের উদ্ধার পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই।
এদেশের মুসলমান আর নিম্নবর্ণের হিন্দুরা একসময় ব্রিটিশ আর তাদের সৃষ্ট জমিদারদের নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। ১৯৪৬ সালের গণপরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে প্রায় ৯৪ শতাংশ ভোট দিয়ে ভৌগোলিকভাবে পাকিস্তানের মতো একটি অবিশ্বাস্য রাষ্ট্রপ্রকল্পকে তারা রাস্তবায়ন করেছিল। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই ভূভাগের মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে, পাকিস্তান বানানোর মাধ্যমে জমিদার আর ব্রিটিশদের তাড়ানো সম্ভব হলেও ইসলামের নামে পশ্চিম-পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তাদের উপর আরো জঘন্য কায়দায় চেপে বসেছে। এরপর ভাষা-আন্দোলন, শিক্ষা-আন্দোলন, সংবিধান-বিরোধী আন্দোলন, সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদির ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬ দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফার পথ ধরে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ সালের গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। এরপর রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এদেশের মানুষ একটি স্বাধীন দেশ অর্জন করতে সক্ষম হয় ১৯৭১ সালে।
কিন্তু স্বাধীনতার পর মানুষের আশাভঙ্গ হতেও বেশী সময় লাগেনি। একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ একটি শাসকদলের অত্যাচারের বিপরীতে আর-একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোকেই রাজনৈতিক সমাধান হিসাবে বিবেচনা করে এসেছে। কিন্তু ভয়াবহ-সব অভিজ্ঞতা এ দেশের মানুষকে এ বিভ্রম থেকে অনেকটা মুক্তি দিয়েছে। বর্তমানে তারা অনেকটাই স্পষ্ট যে, একটি দলের বদলে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসালে, এমনকি দেশ ভেঙে আর-একটি দেশ বানালেও শোষণ-নির্যাতন শুধু অভিন্ন থাকতে পারে তা-ই নয়, এমনকি তা আরো তীব্র ও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। বস্তুত কোনো দলীয় সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া বর্তমানে কেউ বিশ্বাস করে না যে বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে এ দুর্যোগ থেকে দেশকে উদ্ধার করা সম্ভব, তা সেই দল ডান-বাম-মধ্যপন্থী বা ধর্মব্যবহারকারী যে লেবাসেরই হোক-না-কেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের সামনে এসব দলের বাইরে কোনো গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দিক-নির্দেশনামূলক কর্মসূচীও নেই। ফলে এমন এক ভয়াবহ শূন্যতা ও হতাশার মধ্যে দেশ আজ নিমজ্জিত, যার নজীর আমাদের নিকট-ইতিহাসে নেই।
নজীরবিহীন এই সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজন সত্যিকারের একটি নতুন রাজনীতি (বা রাষ্ট্রনৈতিক কার্যক্রম), যে-রাজনীতি আমাদের সামনে উত্থাপন করবে ৩টি বিষয় : (এক) নতুন একটি রাষ্ট্রনৈতিক কর্মসূচী, (দুই) কর্মসূচী বাস্তবায়নের পথ ও পদ্ধতি-সম্বলিত একটি কর্মপরিকল্পনা এবং (তিন) ঘোষিত কর্মসূচী ও পথ-পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি সংগঠনের রূপকল্প।
(ক) একটি নতুন রাজনীতি বা রাষ্ট্রনৈতিক কর্মসূচী নির্মাণ করতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে, আমরা বর্তমানে যে-রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করি তা প্রধানত ব্রিটিশদের তৈরী। অর্থাৎ এর রাজনীতি, সরকার, আইন-আদালত, বিচার-আচার, পুলিশ-মিলিটারী, আমলা-প্রশাসন, কর-খাজনা, সংসদ, স্থানীয় সরকার, সংবিধান সকল কিছু তাদের হাতে গড়া। পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত এদেশ শাসন করেছে ব্রিটিশদের একটা কোম্পানী। মুনাফা অর্জন এবং তা নিরাপদে দেশে পাঠানোর যে লক্ষ্য বিদেশী কোম্পানীর থাকে, সে-দিক দিয়ে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ছিল ভয়াবহ রকমের বেপরোয়া। এই বেপরোয়া লুণ্ঠনে অতিষ্ঠ মানুষ শিগগিরই ব্রিটিশদের বিতাড়িত করতে পারে এ আশঙ্কায় সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার কোম্পানীর কাছ থেকে এদেশের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয় ১৮৫৮ সালে। মূলত এরপর থেকে তারা শাসন-লুণ্ঠনকে প্রতিরোধবিহীন, আইনসম্মত, দীর্ঘস্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে এদেশে তাদের সহযোগী শ্রেণী গড়ে তোলার কাজে পরিকল্পিতভাবে হাত দেয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তারা ধাপে ধাপে এমন শিক্ষা, আইন-কানুন, পুলিশ-মিলিটারী, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন-পদ্ধতি, সরকার-ব্যবস্থা ইত্যাদি এখানে চালু করে, যাতে এদেশের মানুষের স্বাধীন-স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ-ব্যবস্থাকে দুর্বল ও নিশ্চিহ্ন করা যায় এবং একইসাথে এই ব্যবস্থা যেন এমন একটি সহযোগী শ্রেণী গড়ে তোলে যাদের দ্বারা ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করা যায়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশেরা এদেশ থেকে বিদায় হওয়ার পর তাদের রেখে যাওয়া সকল ব্যবস্থা হাতে পায় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। সেই ব্যবস্থা দিয়ে তারা ব্রিটিশদের চাইতেও হিংস্র কায়দায় শাসন কার্যক্রম চালাতে থাকে। তদুপরি তারা আরো কিছু নিকৃষ্ট আইন তৈরী করে এবং ধর্মকে আরো উগ্রভাবে ব্যবহার করে। তাদের লুণ্ঠন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে আজ প্রায় ৫০ বছর হতে চললো। কিন্তু এখনো আমাদের দেশ পরিচালিত হচ্ছে সেই ব্রিটিশ ও পাকিস্তানীদের বানানো আইন-কানুন আর শোষণ-লুণ্ঠনের মডেলেই। ১৯৭১-এর পূর্ব পর্যন্ত এ দেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেতো বিদেশী শাসকেরা, কিন্তু বর্তমানে লুট করছে নিজ দেশের শাসকেরা, এবং পাচারও করছে তারাই।
(খ) ব্রিটিশ উপনিবেশের একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো তারা তাদের শাসন ও শোষণকে বৈধ করে নিয়েছে আইন এবং সংবিধানের মাধ্যমে। এসব আইনের বৈধতা এবং মাহাত্ম্য প্রচার করেছে তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবী আর সুবিধাভোগীরা। এসব আইনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে মানুষকে তারা দীর্ঘদিন অন্ধকারে রাখতে সমর্থ হয়েছে। নাগরিকের সাথে নাগরিকের বিরোধ মেটানোর আইনী-পদ্ধতিকেই তারা শুধু আইন হিসাবে প্রচার করেছে। কিন্ত নাগরিকের সাথে সরকার বা রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় যেসব আইন দ্বারা সেগুলোকে তারা সম্পূর্ণ আড়াল করেছে। রাষ্ট্র কার কাছ থেকে কত টাকা কর-খাজনা কি পদ্ধতিতে আদায় করবে, সে কর-খাজনার টাকা কোথায় খরচ হবে, রাষ্ট্র কাকে কতদিনের জন্য কি ক্ষমতা দেবে, সে ক্ষমতা কি পথে ব্যবহৃত হবে, সরকার কোন পথে গঠিত হবে, সরকারের আমলা-কর্মকর্তা-এমপি-মন্ত্রী-পুলিশ-মিলিটারীরা কাদের টাকায় চলবে আর কাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, তারা কোনটা করলে অপরাধ হবে আর কোনটা করলে দায়িত্ব পালন হবে, তাদের অপরাধের তদন্ত আর বিচার কারা করবে, বিচারক কাদেরকে বানানো হবে, আর বিচারক অবিচার করলে তার বিহিতই-বা কি হবে সেসব আলোচনা কখনো তারা সামনে আসতে দেয়নি। বরং মানুষের টাকায় মানুষকে নিকৃষ্ট উপায়ে ‘শাসনের যে আইন’ তারা বানিয়েছে তারই নাম দিয়েছে ‘আইনের শাসন’! ব্রিটিশ তাড়িয়ে পাকিস্তান হয়েছে, পাকিস্তান হটিয়ে বাংলাদেশ হয়েছে, কিন্তু ব্রিটিশের সৃষ্ট ‘শাসনের আইন’-এর প্রায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। উপরন্তু যুগোপযোগী করার নামে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরো হিংস্র ও নিপীড়নমূলক করা হয়েছে। ফলে এদেশ থেকে লুণ্ঠন ও পাচার নিরাপদ ও নিরঙ্কুশ করার জন্য জনমানুষের প্রতি দমন-পীড়নও দিনকে-দিন তীব্রতর হয়েছে।
(গ) স্বাভাবিকভাবেই নতুন রাজনীতি ও নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হলে আমাদের রাষ্ট্রের অনালোচিত এদিকটাতেই চোখ ফেলতে হবে। নতুন রাজনীতির মূল কাজ হবে প্রথমত, দেশ পরিচালনা সংক্রান্ত আইন এবং সংবিধানকে এমনভাবে সংস্কার করা, যা এদেশের মানুষকে স্বাধীন দেশের নাগরিকের মর্যাদা দেয় এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষেই জনমানুষের হাতে থাকে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন, বাস্তবায়ন পর্যায়ের তদারকি এবং সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের শাস্তির ক্ষমতা জনমানুষের হাতে রাখার মতো আইনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমান রাষ্ট্র এবং এর সকল প্রতিষ্ঠান, আইন, আদালত, পুলিশ, মিলিটারী, প্রশাসন, সংসদ, নির্বাচন কমিশন, কম্পট্রোলার জেনারেল, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সবাই জনমানুষের পয়সায় চলে, কিন্তু সেবা করে জনমানুষের শত্রুদের। রাষ্ট্র এবং তার এইসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের মালিকদেরকে দাস আর কর্মচারীদেরকে মালিক বা রাজা বানিয়ে রাখে, এবং এটা এমন এক কায়দায় করে যাতে মালিকেরা দাস হয়েও এ ব্যবস্থার গুণগান করতে ও শুনতে পছন্দ করে!
প্রচলিত চিন্তা ও অভ্যাসকে পরিবর্তন করে আমাদের দেশের রাজনৈতিক কর্মীদের নতুন রাজনৈতিক চিন্তায় অভ্যস্ত করে তোলার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বাধা রয়েছে। যার মধ্যে একটা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিরোধকে নেতা-নেত্রী বা বড়জোর এক দলের সাথে আরেক দলের বিরোধ হিসাবে বিবেচনা করা এবং এটা যে দল বা রাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি-পদ্ধতির বিষয়, সেভাবে বিষয়টা না বোঝা। দ্বিতীয় হচ্ছে, সামাজিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্যকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে না পারা, কর্মসূচী প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশসহ রাষ্ট্রের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থানসহ সকল বিষয়কে একসাথে গুলিয়ে ফেলার মাধ্যমে প্রধান সমস্যাগুলিকে অপ্রধান করে ফেলা। আরো একটা বড়ো বাধা হচ্ছে, ক্ষমতার মালিকানার প্রশ্নকে স্পষ্ট না করা। গণতন্ত্রের মূল প্রশ্ন হলো ক্ষমতার মালিকানার প্রশ্ন। যে-রাষ্ট্রের ক্ষমতার মালিকানা সরকারের বা গোষ্ঠীর বা দলের, সে-রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতার মালিকানা জনগণের। তাই গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থ হলো ‘গণক্ষমতাতন্ত্র’। প্রচলিত গণতন্ত্রে এই ‘ক্ষমতা’ প্রশ্নটিকে খুব দক্ষতার সাথে আড়াল করা হয়। মুখে বা লেখায় তারা ‘রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ - এটা প্রচার করে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। এসব রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র (সংবিধান) ও শাসনের আইন (প্রশাসনিক আইন) এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহ এমনভাবে গঠন করা হয় যাতে জনগণ কার্যত মালিকের বদলে দাসে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে নাগরিকের ক্ষমতার প্রশ্নটিকে বাদ দিয়ে সরকার মন্ত্রীপরিষদ শাসিত নাকি প্রেসিডেণ্ট শাসিত, সংসদ এক কক্ষ নাকি দুই কক্ষ বিশিষ্ট, সরকার এককেন্দ্রিক নাকি ফেডারেল - এগুলো দিয়ে গণতন্ত্র হয় না। আর রাজনীতির মূল প্রশ্নগুলি বাদ দিয়ে সামাজিক বা অর্থনৈতিক অজস্র আন্দোলন দিয়েও রাজনৈতিক পরিবর্তন হয় না। প্রাসঙ্গিকভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের শত শত নদীর মধ্যে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার প্রবাহকে যদি ঠিক করা যেতো তাহলে যেমন বাকী নদীগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা সহজ হতো, তেমনি রাষ্ট্রের শত শত কলকব্জার মধ্যে আইন (সংসদ), বিচার (আদালত) ও প্রশাসন, তথা সংবিধানকে যদি জনমানুষের পক্ষে আনা যেতো তাহলে রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলোও জনমানুষের উপযোগী করা সহজ হতো। রাষ্ট্রের এ ধরণের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী এবং তার বাস্তবায়নের আন্দোলন।
(ঘ) একটি সমাজে যা কিছু ঘটে তার কোনোকিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মসূচী হলো তাই, যা অবশ্যই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা রাষ্ট্রক্ষমতার ব্যবহার-সম্পর্কিত। সে-জন্যেই ১৯৬০ দশকের আওয়ামী লীগের ৬ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচী, যা স্বায়ত্তশাসনের রাষ্ট্রকাঠামো তুলে ধরেছিল। কিন্তু অনেক বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদের ১১ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়, বরং তা ছিল ৬ দফায় সমর্পিত। সামাজিক (অরাজনৈতিক) আন্দোলন করতে রাজনৈতিক দল তখনই বাধ্য হয়, যখন মানুষ সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে ভাবতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু বর্তমানের এই নজীরবিহীন সংকটে মানুষ যখন রাজনৈতিক সমাধানের দিকনির্দেশনার অভাবে দিশেহারা তখন পর্যন্ত তাদের সামনে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী না থাকায় সমাজে এ ধারণাই বদ্ধমূল হচ্ছে যে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন অসম্ভব। এ প্রবল প্রতিকূলতার বিপরীতে যারা মজুরী, পরিবেশ, জ্বালানী, নারী, জাতীয় সম্পদ রক্ষা ইত্যাকার আন্দোলনে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন তারাও কাক্সিক্ষত সমর্থন পাচ্ছেন না। আন্দোলনের কর্মী ও পরিবর্তনকামী মানুষের মধ্যে এক ধরণের স্থবিরতা ও হতাশা বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে উঠছে।
(ঙ) প্রকৃতপক্ষে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে, যুদ্ধ করেছে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক’ একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ অর্জনের পর যে সংবিধান প্রণয়ন করা হলো তা প্রকৃতপক্ষে ছিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’, এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের লড়াই-সংগ্রাম ও আদর্শের পরিপন্থী একটি সংবিধান। এই সংবিধান উকালতি চাতুরীতে পরিপূর্ণ, বাহ্যত প্রগতিশীল কিন্তু কার্যত একব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার একটি স্বৈরতন্ত্রী বিধান। এই সংবিধান পাঠ করলে মনে হবে এটি মানুষের মুক্তির সনদ, কিন্তু প্রয়োগ করতে গেলে দেখা যাবে এটা পরাধীনতার দাসখত। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা জনগণের, এই কথা বলে প্রচলিত গণতন্ত্রে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ বা ভোগের সক্ষমতা যে একটি শ্রেণী বা গোষ্ঠীর হাতে রাখা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেটুকুও মানা হয়নি। এটা করা হয়েছে সম্পূর্ণ একব্যক্তিকে সামনে রেখে। উপরন্তু এর আরেকটি বড়ো সংকট হলো, এতে শাসনক্ষমতা নিজের শ্রেণীরই অন্য অংশের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তরের কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও (অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন) রাখা হয়নি। ফলে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন কোনো দলকে নির্বাচনে পরাজিত করা যায়নি (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল ছাড়া)। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী মানুষের আকাক্সক্ষা শুধুমাত্র প্রচলিত গণতন্ত্র পর্যন্ত ছিল না। আকাক্সক্ষা ছিল একটি নতুন ধরণের গণরাষ্ট্রের, যাতে পৌঁছানোর প্রথম পদক্ষেপ হলো ‘গণক্ষমতাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি ‘গণক্ষমতাতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা।
(ক) বাংলাদেশের মানুষের বহু ধরণের সরকার-ব্যবস্থা দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকে বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী কালের মধ্যে প্রবাসী সরকার, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার, বহুদলীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত সরকারের সংবিধান বদল করে এক দলীয় সরকারে রূপান্তরিত হওয়া সরকার, সেনা-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক সরকার, সামরিক সরকারের বেসামরিকরূপে পরিবর্তিত হওয়া সরকার, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘জরুরী অবস্থার সরকার’-এ রূপান্তরিত সরকার, আদালতের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার অপসারণ, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার, ভোটারবিহীন নির্বাচিত সরকার - অর্থাৎ এদেশের মানুষ ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে যতোরকম সরকার-ব্যবস্থার অধীনে বসবাসের অভিজ্ঞতা পেয়েছে বিশ্বের মধ্যে এক অর্থে তা নজীরবিহীন।
অপরদিকে এ ভূখণ্ডের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতাও বিপুল ও বিচিত্র। কেবল স্বাধীনতা-উত্তর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ দেখলেই বোঝা যাবে অহিংস-সহিংস, সশস্ত্র-নিরস্ত্র, নির্বাচনমুখী-নির্বাচনবিরোধী, গণঅভ্যুত্থানপন্থী-সেনাঅভ্যুত্থানপন্থী, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও, শহরকেন্দ্রিক শ্রমিক অভ্যুত্থান - অর্থাৎ আন্দোলন-সংগ্রামের যত রূপ থাকতে পারে তার প্রায় সব পথেরই চর্চা করেছে এ দেশের মানুষ। কিন্তু তাদের আকাক্সিক্ষত পরিবর্তনটি রয়ে গেছে অধরাই। তবে এ পথ-পরিক্রমা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই ভূখণ্ডের মানুষ ক্লান্তিহীনভাবে পথ খুঁজেছে এবং এখনো সে-অনুসন্ধিৎসা শেষ হয়নি।
(খ) আমাদের দেশে দুই ধরণের নির্বাচনের নজীর আছে। এক হলো সাধারণ নির্বাচন বা সরকার গঠনের সংসদ নির্বাচন (ন্যাশনাল এসেম্বলী), এবং আরেক হলো গণপরিষদ নির্বাচন বা সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচন (কনষ্টিটুয়েণ্ট এসেম্বলী)। গত ১০০ বছরের মধ্যে এই ভূখণ্ডে ২টি গণপরিষদ নির্বাচন হয়েছে। একটি ১৯৪৬ সালে এবং অপরটি ১৯৭০ সালে। ১৯৪৭-এর প্রেক্ষাপট যদি আমরা বিচার করি তাহলে দেখবো ১৯২৯ সালে মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ১৪ দফা কর্মসূচী ঘোষণার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দলটি তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতীয় মুসলমানদের একটি পছন্দের দল হিসেবে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। আর ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পর খুব দ্রুত পাকিস্তান অর্জনই হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের মুসলমানদের একমাত্র রাজনৈতিক লক্ষ্য, নিম্নবর্গের হিন্দুরাও (তফসিলী ফেডারেশন) এতে সমর্থন দেয়। ১৯৩৭ সালে পূর্ব-বাংলার কৃষকদের যে প্রিয় দল ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিল তার মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তারা শোচনীয় পরাজয় বরণ করে এবং পূর্ব-বাংলার মুসলমানদের প্রায় ৯৪ শতাংশ ভোট চলে যায় মুসলিম লীগের পক্ষে। বলা যায় পূর্ব-বাংলার ভোটেই ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগ পাকিস্তান অর্জনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়। প্রায় একইভাবে আমরা দেখি ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচী ঘোষণার পর ইতিহাসের সেই পুনরাবৃত্তি ঘটতে। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় আওয়ামী লীগ পূর্ব-বাংলার একক বৃহত্তম দল হিসেবে সামনে চলে আসে। এরপর ১৯৪৬-এর নির্বাচনের মতোই প্রায় একইভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচনে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করে, ইয়াহিয়া খানের সামরিক ফরমান (এল.এফ.ও)-এর অধীনে নির্বাচন করেও আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই অভাবনীয় জয়েই স্বায়ত্তশাসন প্রশ্ন থেকে অগ্রসর হয়ে এ দেশের মানুষ একটি রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দেয় ১৯৭১ সালে।
(গ) এ ভূখণ্ডের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা হলো সংবিধান বা শাসনতান্ত্রিক বড়ো ধরণের রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন মানুষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব, কালো টাকা, পেশীশক্তির দৌরাত্ম্য, সামরিক শাসন বা আদালতের রক্তচক্ষু কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। তখন তারা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিজয় ছিনিয়ে আনে, যেটা সাধারণ সরকার-পরিবর্তনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘটে না।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সাংবিধানিক (শাসনতান্ত্রিক) সংকটে। এই সংকট থেকে উদ্ধারের পথ সরকার-পরিবর্তনের-রাজনীতি বা সরকার-পরিবর্তনের-নির্বাচনের মধ্যে নেই। তাই সরকার-পরিবর্তনের রাজনৈতিক নির্বাচন কতোটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে সেটা নিয়ে জনমানুষের উদ্বেগ বা কৌতূহল থাকলেও এর জন্য জীবনপণ লড়াইয়ে নামার আগ্রহ তারা ইতিমধ্যে অর্জিত অভিজ্ঞতার কারণে প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমান বাংলাদেশ এবং এর জনমানুষের উদ্ধারের সম্ভাব্য পথ হলো দেশের আইন ও সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা। আর সে-সংস্কার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজন একটি গণপরিষদ নির্বাচনের মতো নির্বাচন। বাংলাদেশকে সেই নির্বাচনের পথে এগিয়ে নেয়াই হলো এ সময়ের প্রধান রাজনৈতিক করণীয়। আর সেই করণীয় সাধনের জন্য প্রয়োজন ‘রাষ্ট্রনৈতিক কর্মসূচী’ প্রণয়ন, জনমানুষকে সেই কর্মসূচীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা এবং সেই কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭০ সালের গণপরিষদ নির্বাচনের মতো বিজয় ছিনিয়ে আনা। এর মধ্য দিয়েই প্রচলিত গণতন্ত্রের স্থলে ‘গণক্ষমতাতন্ত্র’ এবং গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশকে একটি ‘গণক্ষমতাতান্ত্রিক’ বাংলাদেশে রূপান্তরিত করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে।
(ক) আমাদের দেশে জনমানুষের রাজনীতি এবং জনমানুষের সংগঠন গড়ে তুলতে হলে এদেশের মানুষের সংগঠন ও লড়াই-সংগ্রাম গড়ে তোলার অভিজ্ঞতার দুইটি প্রধান ধারার কথা মনে রাখতে হবে : (এক) স্বাধীন বা স্বতঃস্ফূর্ত ধারা, যা এই ভূখণ্ডের মানুষের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও প্রণোদনাজাত, এবং (দুই) ব্রিটিশ বা অন্য কোনো দেশের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত।
ফকির-সন্ন্যাসী-পাগলপন্থী বিদ্রোহসহ বিভিন্ন কৃষক-বিদ্রোহ এবং স্থানীয় সশস্ত্র বিদ্রোহসমূহ প্রথম ধারার অন্তর্ভুক্ত। আর ব্রিটিশ-আনুকূল্যে গড়ে ওঠা কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ইত্যাদি রাজনৈতিক দলকে দ্বিতীয় ধারার উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মূলত আমাদের দেশে যেসব রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে বা নতুনভাবে গড়ে উঠছে তারা প্রায় সবাই হয় এই দ্বিতীয় ধারার মাতৃদলগুলি ভেঙ্গে জন্ম নিয়েছে, না-হয় একই মডেল অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে। এই দুই ধারার বাইরে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য কমিউনিষ্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেছে আর একটি ধারা। তারাও সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশের দলসমূহকে অন্ধভাবে অনুকরণ ও অনুসরণ করেছে এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শে পরিচালিত রাষ্ট্রসমূহের কমবেশী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে আর এক ধরণের দলও এ দেশে গড়ে উঠেছে। এরাও দেশী-বিদেশী কোনো-না-কোনো রাষ্ট্র বা দলের অনুকরণ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট এবং পরিচালিত।
এইসব দল বা সংগঠনের গঠনপ্রণালী বা কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত কতিপয় মানুষ সম্মিলিত হয়ে প্রথমে একটি দল গঠন করে কর্মসূচী ঘোষণা করছে, এবং এরপর জনমানুষকে তাদের দলে যোগদান ও তাদের কর্মসূচী সমর্থনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এভাবে গঠিত দলসমূহ প্রথম থেকেই নেতা আর কর্মীতে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। নেতাদের পদ হয়ে যাচ্ছে স্থায়ী, সম্পত্তির মতো উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তরযোগ্য। দল বা সংগঠনে কর্মী-অনুসরণকারীদের মালিকানা তো দূরের কথা, কখনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। কর্মীদের কাছে নেতাদের জবাবদিহিতার বদলে কর্মীরাই নেতাদের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য থাকার রাজনৈতিক-সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এই ধরনের দল বা সংগঠন তাদের কাগজপত্রে যা-ই লিখুক বা মুখে যা-ই বলুক, যে-দলের অভ্যন্তরে কর্মী-সমর্থকদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না, সে-দলের দ্বারা কখনোই জনমানুষকে রাষ্ট্র-ক্ষমতার মালিক বানানো সম্ভব নয়। এমনকি তাদের পক্ষে জনমানুষকে রাষ্ট্রের মালিক বানানোর প্রকৃত রাজনীতিও করা সম্ভব নয়।
(খ) আমাদের কৃষকেরাও জানে মাটি কাটার জন্য কোদাল আর ধান কাটার জন্য কাস্তে লাগে। একটার কাজ আরেকটা দিয়ে হয় না। একইভাবে এক-এক ধরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এক-এক রকম সংগঠন গড়ে তোলা হয়। কোনোটা সামাজিক, কোনোটা-বা রাজনৈতিক। যারা সরকার-বদলের রাজনীতি করবেন বা সরকার-গঠনের জন্য নির্বাচন করবেন, আর যারা গণমানুষের সংবিধান ও গণমানুষের ক্ষমতাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন করবেন, তাদের সাংগঠনিক কাঠামো একরকম হবে না। একরকমের হলে শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসবে না। স্বাধীনতার আগে স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ দিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর দেশ ও জনগণের উপযোগী রাজনীতি না হওয়াই এর সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাগ্যজনক উদাহরণ।
কিন্তু সমস্যা হলো যারা ‘গণক্ষমতাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যারা ‘গণক্ষমতাতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের সংগঠন কেমন হবে তার কোনো তৈরী-কাঠামো সামনে নেই। তাই এদেশে নতুন রাজনীতি গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি যারা নেবে তাদের এই নতুন কাজের উপযোগী নতুন সংগঠনের কাঠামো উদ্ভাবনের চ্যালেঞ্জটিও নিতে হবে। ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করতে চায় এবং পরিবর্তনকামী বন্ধুদের সহায়তায় আলোচনা ও মতামত গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল তা চূড়ান্ত করতে চায়। সেই কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বপর্যন্ত অন্তবর্র্তী কাঠামো নিয়েই এগিয়ে যেতে চায়।
(ক) বাংলাদেশ নদীমাতৃক, সমুদ্র-উপকূলবর্তী, জোয়ার-ভাটা, ভাঙা-গড়া এবং ভাটির দেশ। অফুরন্ত জল-বৃষ্টি-বর্ষা-সূর্যালোক এদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বরা শক্তির দেশগুলোর একটির মর্যাদা দিয়েছে। এদেশের মানুষ অসামান্য আধ্যাত্মিক ও ভক্তি-ভালবাসার ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অল্পে তুষ্ট। তারা নির্বিরোধ ও সাগ্রহী। স্বভাবগতভাবে মানবিক ও গণতান্ত্রিক। পরিবর্তনের সাথে দ্রুত খাপ খাওয়াতে সক্ষম। অতিথিপরায়ণ, এমনকি লুণ্ঠনকারী পরদেশী শাসকদেরও আশ্রয়দানের উদারতাসম্পন্ন। কিন্তু প্রয়োজনে বেপরোয়া, অসম-সাহসী এবং লড়াকু।
এদেশের মানুষের ভালবাসার বোধ গভীর এবং বিস্তৃত, আত্মোৎসর্গের প্রবণতাজাত। এদেশের যুবকেরা যুবতী স্ত্রী বা প্রেমিকাদের একাকী ফেলে এমনকি কাঠের নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ক্রীতদাসের জীবন কিনে নেয় আত্মীয়-পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটানোর আশায়। এদেশের মানুষ অজানা-অচেনা প্রাণের চিৎকারে জীবন বিপন্ন করেও ধ্বংসস্তূপের মাঝে প্রবেশ করে নির্দ্বিধায়। এদেশের মানুষ ‘পরের দ্রব্য পরের নারী হরণ’ করেনি, পরদেশ লুণ্ঠনের অভিপ্রায় এদেশের মানুষের কোনোকালেই ছিল না। মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা দেয়ার জন্য এখানে আইনের প্রয়োজন পড়েনি, এরা মানুষকে আইনী বাধ্যবাধকতা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মর্যাদা দিয়ে চলায় অভ্যস্ত। বস্তুবাদী দর্শন পড়ে এখানকার মানুষ সাম্যবাদী হতে যায়নি, প্রবল আন্তরিকতা আর ভালবাসাই এদেরকে পরস্পরের প্রতি সহমর্মী ও সাম্যবাদী করে রেখেছিল। এখানকার মানুষ নিজেরা ধর্মীয় বিভেদকে রাষ্ট্র বা রাজনীতির সাথে যুক্ত করেনি, এটা করেছে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী। তাই পশ্চিমা সেক্যুলারিজমের শিক্ষা দিয়ে এদেশের মানুষকে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বুঝতে হয়নি, বরং ‘সবার উপরে যে মানুষ সত্য’, সেই ‘সহজ মানুষের সাধনা’ই তাদেরকে পরস্পরের বিশ্বাস, ধর্ম, আচার ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে ভিন্নমত নিয়ে চলায় প্রণোদনা দিয়ে গেছে। স্মরণ করা যেতে পারে ইউরোপে যখন কার্ল মার্কসের জন্ম হয়েছে প্রায় সেসময়েই বাংলায় লালন জন্ম নিয়েছেন।
(খ) আমাদের যে-সমস্ত দুর্লভ গুণ পৃথিবীতে আমাদের উচ্চ মর্যাদা এনে দিতে পারতো ইংরেজরা এদেশ দখল করে তার অনেকগুলিকেই আমাদের ‘পশ্চাদপদতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিতরা এখনো সেই ধারাকেই বজায় রেখে চলেছে। ব্রিটিশ আর পাকিস্তানীরা লুণ্ঠন ও পাচারের পাশাপাশি নির্যাতন অব্যাহত রাখতে ‘ডিভাইড এণ্ড রুল পলিসি’ ব্যবহার করে এদেশের মানুষকে শুধু হিন্দু আর মুসলমানে বিভক্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠী হিন্দু-মুসলিম ছাড়াও বাঙ্গালী-আদিবাসী, ওয়াহাবী-সুন্নী, তাবলিগী-জেহাদী, কাদিয়ানী-অকাদিয়ানী, পীরপন্থী-পীরবিরোধী, শরিয়তী-মারফতী, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, আস্তিক-নাস্তিক, নারীবাদী-পুরুষতন্ত্রী, পরিবেশবাদী-উন্নয়নবাদী, ভারতপন্থী-পাকিস্তানপন্থী, অর্থাৎ মানুষকে যতো ছোট-ছোট ভাগে বিভক্ত করা যায়, যতোভাবে মানুষকে মানুষের বিপক্ষে দাঁড় করানো যায়, ততোভাগে বিভক্ত করে পরস্পরের শত্রু বানিয়ে লুণ্ঠন করছে। আর এ বিভক্তি ও শত্রুতা জিইয়ে রাখার পক্ষে তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া, এনজিও আর রাজনৈতিক দলগুলি অজস্র বিনিয়োগ করছে, অহর্নিশ তৎপর থাকছে।
দেশের সম্পদ লুটপাট ও পাচার; শিক্ষাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে ওঠার পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে তার স্থান বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা; উৎপাদনের চাইতে বাণিজ্যকে লাভজনক বানানোর নীতি-কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের শ্রমশক্তিকে অকার্যকর, বেকার, নেশাখোর ও দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের মর্যাদাহীন তল্পিবাহক মাস্তান হিসেব গড়ে তোলা; রাষ্ট্রকে জনসম্পদ আহরণ এবং তা লুটেরাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার বৈধ মেশিনারী হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সকল প্রতিষ্ঠানকে মেধাশূন্য ও দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেয়া; জনগণের টাকায় পরিচালিত আইন-আদালত-বিচার-সংসদ-স্থানীয়সরকার-প্রশাসন-পুলিশ-মিলিটারীদের জনগণের বিপক্ষ শক্তি হিসাবে গড়ে তোলা; দেশের স্বার্থ বিকিয়ে ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে সীমিত জাতীয় সম্পদকে বিদেশী বাণিজ্য-দৈত্যদের হাতে তুলে দেয়া, ইত্যাদির মতো মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করে এর পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ যাতে ঐক্যবদ্ধ কোনো সংগ্রাম গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য এইসব ছোট ছোট বিরোধকেই মূল বিরোধ হিসাবে তারা জারী রাখছে। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত তারা নতুন নতুন ইস্যু তৈরী করে সেইসব ইস্যুর পেছনে সংবেদনশীল মানুষদের দৌড়ানোর খেলায় লিপ্ত রাখছে। জনমানুষের পক্ষের দল বলে পরিচিত সংগঠনগুলোও শাসকশ্রেণীর ছুড়ে দেওয়া এইসব ইস্যু একের পর এক গ্রহণ করে জনমানুষকে ব্যস্ত রাখছে।
(গ) ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ মনে করে শুধু শাসকের ছুড়ে দেওয়া ইস্যুর পেছনে দৌড়ানো জনমানুষের রাজনীতি বা জনমানুষের রাজনৈতিক দলের মূল বা প্রধান কাজ হতে পারে না। জনমানুষের রাজনীতির প্রধান কাজ হচ্ছে জনমানুষের কষ্টার্জিত সম্পদের মধ্য থেকে স্বীকৃতমতেই প্রতিবছর যে প্রায় লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়, বিদেশী শ্রমিকদের বেতনবাবদ যত টাকা পরিশোধ করতে হয় তার মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শুধুমাত্র ভারতকেই যে অর্ধ লক্ষ কোটি টাকা দিতে হয়, আর উন্নয়ন ও বড়ো বড়ো প্রজেক্টের নামে যে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় তা বন্ধ করার কর্মসূচী উত্থাপন করা। পাশাপাশি দরকার জনমানুষের পক্ষের আইন এবং ক্ষমতার প্রশ্নে শাসকদলগুলিকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য করা। জনমানুষের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে তাদের জনবিরোধী অবস্থানকে উন্মোচন করে তাদের জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পরাজিত করা।
সেই রাজনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের জন্য যে নতুন ধরনের রাজনৈতিক শক্তি-সংগঠন-দল গড়ে তোলা প্রয়োজন তা গড়ে তোলায় ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ ভূমিকা নিতে চায়। যতো কম সময়ে সম্ভব সারাদেশে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে ও কমিটি গড়ে তুলতে চায়। সারাদেশের মানুষদের নতুন রাজনীতি, নতুন কর্মসূচী, নতুন দলীয় কাঠামো গড়ে তোলার জন্য আলোচনা ছড়িয়ে দিতে চায়। যারা এদেশে গণক্ষমতাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছে এবং যারা কাজ করতে চায় তাদের মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলতে চায়। একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সাথে যোগাযোগ ও তাদের মতামত সংগ্রহের পর যতো দ্রুত সম্ভব পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন রাষ্ট্রনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে সত্যিকারের একটি ‘জনমানুষের দল’ গড়ে তুলতে চায়।
‘রাষ্ট্রচিন্তা’ বাংলাদেশের জনগণের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা থেকে যৌক্তিকভাবে বিশ্বাস করে যে প্রচলিত রাজনৈতিক-সংস্কৃতির বাইরে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের ভালবাসা ও আন্তরিকতার সাথে রাষ্ট্রের পরিবর্তনের রূপরেখা নিয়ে নিষ্ঠার সাথে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি, এদেশ অতি দ্রুতই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক’ দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে।
‘রাষ্ট্রচিন্তা’ কর্তৃক প্রস্তাবিত ৭ দফা'
রাষ্ট্রনৈতিক কর্মসূচি
বাংলাদেশের মানুষ বহুকাল ধরে, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল হয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি যে-ধরণের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে, সে-রকম মানবিক ও গনক্ষমতাতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর ন্যূনতম যে পরিবর্তন ও সংস্কার করতে হবে তার একটি ৭ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রচিন্তা-র পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হলো :
(ক) স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার অনুযায়ী ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠাকে রাষ্ট্রের আদর্শ হিসেবে সংবিধানে গ্রহণ করতে হবে।
(খ) ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘ঘোষণা ও লক্ষ্য’ (অর্থাৎ প্রস্তাবনা থেকে তৃতীয় ভাগ)-এর সাথে বাস্তবায়ন পদ্ধতি (অর্থাৎ চতুর্থ ভাগ থেকে শেষ)-এর যে বৈপরীত্য রয়েছে তা দূর করে সংবিধানকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য অনুচ্ছেদ ৪৮(৩), ৪৯, ৬৪, ৬৫, ৭০, ৯৫, ১০২, ১১৬, ১১৮, ১২৩(৩), ১২৭, ১৪২, ১৪৪ এবং ১৪৯ সহ সংশ্লিষ্ট অন্য অনুচ্ছেদের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।
(গ) সংবিধানকে প্রকৃত ‘গণক্ষমতাতান্ত্রিক’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উপযোগী করতে হবে, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত-গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা, তথা রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উপর জনমানুষের প্রকৃত মালিকানা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য সকল সাংবিধানিক সংস্থার উপর থেকে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বমূলক অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
(ক) এক ব্যক্তির ক্ষমতাচর্চার উপযোগী, নিপীড়নমূলক ও গণবিরোধী আইন বানানোর উপনিবেশিক সংসদ-ব্যবস্থার পরিবর্তে জনস্বার্থে আইন প্রণয়নে বাধ্য এমন সংসদ-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ পরিবর্তন করতে হবে।
(খ) সংবিধান ও সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি সংশোধন করে রাষ্ট্রের সকল শীর্ষ-পদাধিকারীদেরকে সংসদের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য এবং সংসদ-সদস্যদেরকে জনমানুষের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য করার ব্যবস্থা করতে হবে। সংসদীয় কমিটিকে অধিকতর ক্ষমতাশালী করতে হবে এবং সরকারের বাইরের সংসদ সদস্যদের কমিটি সমূহের প্রধান করতে হবে।
(গ) আইন প্রণয়ন ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সংসদ-সদস্যরা যাতে অংশ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ সংশোধন করতে হবে।
(ঘ) রাষ্ট্রের বাজেট বা আয়-ব্যয় নির্ধারণের বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির পরিবর্তনের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮০-৯২ এর প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। জনগণের স্বার্থে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
(ঙ) জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। বৈধ আয় বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেলে সদস্যপদ বাতিল ও শাস্তির বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব এবং রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব জনগণের কাছে উন্মুক্ত রাখার জন্য রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের সংস্কার করতে হবে।
(চ) সরকার-প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান কোন দলের প্রধান হতে পারবেন না। সরকার-প্রধানকে প্রয়োজনে অভিশংসন করা যাবে এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করতে হবে।
(ক) কারো ভোট পচবে না বা নষ্ট হবে না, সকল নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন করা যাবে এমন নির্বাচন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তকে নির্বাচিত ঘোষণা করে অন্য প্রার্থীদের পক্ষে ভোটপ্রদানকারী নাগরিকদের রাষ্ট্রপরিচালনায় (প্রতিনিধির মাধ্যমে) অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত রাখার বিদ্যমান নির্বাচন-ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
(খ) ‘ভোটের অনুপাতে আসন’ ভিত্তিক সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিদ্যমান ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে যদি কোনো দল সারাদেশে ১% ভোট পায় তবে সেই দল সংসদে তিনটি আসন বরাদ্দ পাবে। নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করবে এবং প্রাপ্ত আসন সেই তালিকার ক্রম অনুসারে বণ্টনের বিধান থাকতে হবে।
(গ) প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত ভোটের মধ্যে কমপক্ষে ৫১% ভোটারের সমর্থনপুষ্ট দলের কিংবা দলসমূহের জোটের সরকার গঠনের বিধান করতে হবে।
(ঘ) যতবার ইচ্ছা ততবার রাষ্ট্র এবং সরকারের প্রধান হওয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করে তা সর্বোচ্চ ২ বারে সীমাবদ্ধ করতে হবে।
(ক) ‘রাষ্ট্র পরিচালনার উপনিবেশিক আইন’ অর্থাৎ রাষ্ট্র বা সরকারের সাথে জনমানুষের সম্পর্ক নির্ধারণী প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক আইনসমূহ পরিবর্তন করে সেগুলোকে স্বাধীন দেশের নাগরিকের অধিকার, মর্যাদা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপযোগী করতে হবে।
(খ) জনগণের সমর্থনে ক্ষমতাবান এবং জনগণের অর্থে বেতন পান এমন সকল জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ রাখার আইন প্রণয়ন করতে হবে।
(গ) জনগণের নিজেদের মধ্যকার আইনী বিরোধ নিষ্পত্তির দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনকে দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কার্যপদ্ধতি বিধিসমূহ (প্রসিডিউরাল ল) এবং মিথ্যার হাত থেকে বিচারকে রক্ষা করে প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাক্ষ্য-আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে।
(ঘ) জনসম্পদ ও জাতীয় সম্পদ লুটপাটকারীদের সহায়ক আইন এবং তাদের দায়মুক্তির বিধানসহ অনুরূপ সব ধরণের বিধান বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদধারীদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সর্বদা জনমানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বৈধ-আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেলে পদচ্যুতিসহ শাস্তির সুস্পষ্ট বিধান প্রণয়ন করতে হবে।
(ঙ) জনগণের সন্তানদেরকেই জনগণের শত্র“ হিসাবে গড়ে তোলার বিদ্যমান পুলিশ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে ব্রিটিশ প্রবর্তিত পি.আর.বি, ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্ট এবং ১৯৮৪ সালের মেট্রোপলিটান পুলিশ আইন ও র্যাব আইনসহ বিদ্যমান সকল পুলিশী আইন-কানুনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। পুলিশ যাতে জনগণের শত্র“র বদলে তাদের ভরসাস্থল আর অন্যায়কারীদের প্রতিরোধে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে সে-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি স্বাধীন তদন্তের আইন করতে হবে।
(চ) উচ্চ আদালতে দলীয় অনুগতদের বিচারপতি নিয়োগের বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এবং নি¤œ-আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন করে উচ্চ-আদালতের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অনুচ্ছেদ ১১৬-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।
(ছ) প্রচলিত উপনিবেশিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শারীরিকভাবে সক্ষম সকল নাগরিকের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
(ক) রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে লুটপাটের প্রক্রিয়া থেকে উদ্ধার করে দেশের অর্থনীতিকে অর্থনীতির নিয়মে চলতে দিতে হবে। অর্থনীতি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিধানসমূহে রাষ্ট্রক্ষমতার ব্যবহার করে কেউ যাতে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করতে না পরে সেজন্য সংবিধান, ব্যাংক কোম্পানী আইন, কোম্পানী আইন, ষ্টক অ্যাণ্ড সিকিউরিটিস সংশ্লিষ্ট আইন, কম্পট্রোলার অ্যাণ্ড অডিটর জেনারেল ফাংশনস অ্যাক্ট, অডিট অ্যাক্ট-১৮৬০, দেউলিয়া বিষয়ক আইন, রুলস অব বিজনেস সহ সংশ্লিষ্ট অপরাপর আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে।
(খ) বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী ক্ষমতার উপর অর্থমন্ত্রণালয় বা নির্বাহী বিভাগ যাতে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করতে না পারে এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যাংকিং অ্যাণ্ড ফাইন্যান্স ডিভিশন’ বিলুপ্ত করতে হবে। সকল ব্যাংক ও বৃহৎ কোম্পানীর হিসাব আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অডিটের আওতায় আনতে হবে। টাকার বিনিময় মূল্য যথাসম্ভব চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে।
(গ) সরকারী ব্যাংকে এক-তৃতীয়াংশ স্বাধীন (ইন্ডিপেন্ডেন্ট) পরিচালক এবং বেসরকারী ব্যাংকে এক তৃতীয়াংশ পরিচালক আমানতকারীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হতে হবে। কোনো ব্যাংকে এক পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি পরিচালক হতে পারবে না এবং তিন বছরের বেশী কেউ পরিচালক থাকতে পারবে না। ব্যাংকের দৈনন্দিন এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রমের উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ মুক্ত করতে ব্যাংক ঋণ ম্যানুয়েলসহ বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে।
(ঘ) রাষ্ট্রের আয় ব্যয়ের সর্বোচ্চ নিরীক্ষক হিসেবে মহা হিসাব নিরীক্ষক যাতে স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে সে লক্ষে সংবিধানের ১২৭-১৩২ অনুচ্ছেদের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। বিদ্যমান অডিট সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অডিটকে আর্ন্তজাতিক মান সম্পন্ন করতে হবে।
(ঙ) কোনো উন্নয়ন প্রকল্প যেন লুটপাটের আখড়া না হয়ে উঠতে পারে তা তদারকির জন্য ‘স্বাধীন নাগরিক কমিশন’ গঠন করতে হবে। অর্থ পাচার রোধ করতে মানি লণ্ডারিং অ্যাক্টের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।।
(চ) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জাতীয় নিরাপত্তা, জ্বালানী ও গণপরিবহন সেবা ছাড়া অন্য কোনো খাতে সরকার ব্যক্তিখাতের প্রতিযোগী ও প্রতিরোধী হতে পারবে না।। অর্থনীতিকে উৎপাদনবান্ধব, সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুঁজি বিনিয়োগের অনুকূল করতে দল-মত-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকল বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি হয় এমন কোনো বিনিয়োগ রাষ্ট্র অনুমোদন করতে পারবে না।
(ছ) ‘জাতীয় সম্পদ ব্যবহার’ ও ‘আর্ন্তজাতিক সকল চুক্তি’ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সংসদে আলোচনা বাধ্যতামূলক করার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৪ এবং ১৪৫ সংশোধন করতে হবে। আন্তর্জাতিক মোট ঋণের পরিমাণ কোনো অবস্থাতেই জিডিপি-র ২৫%-এর বেশী হতে পারবে না।
(জ) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে এর তথ্যের মান এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো ধরণের সন্দেহ তৈরী না হয়।
(ঝ) রাজস্ব আদায়ে পরোক্ষ করের ভূমিকা কমাতে এবং প্রত্যক্ষ করের ভূমিকা বাড়াতে আয়ের অনুপাতে কর নির্ধারণের বিদ্যমান হারকে এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে যাতে অধিক আয় ও সম্পদশালীরা অধিকতর কর দিতে বাধ্য হয় এবং বৈষম্য হ্রাস পায়। সর্বস্তরে কর হার হ্রাস করে কর সংগ্রহের আওতা বাড়াতে হবে এবং কর ফাঁকি রোধে এনবিআর-এর প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। ক্ষুদ্র্র ও মাঝারী বিনিয়োগ প্রসারে বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করতে হবে যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং বেকারত্ব হ্রাস পায়।
(ঞ) নাগরিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণের মান এমন করতে হবে যেন দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরী হয় এবং বিদেশী শ্রমিকের প্রয়োজন ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রসারে কৃষিতে ভর্তুকি প্রদানসহ কৃষিপণ্যের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে তা উৎপাদন ব্যয়ের অন্তত দেড়গুণ হয়।
(ট) বিদেশী যারাই বাংলাদেশে আয়মূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন তাদের প্রত্যেকের আয়কে আয়করের আওতায় আনতে কর আইনের সংশোধন করতে হবে।
(ক) বিদ্যমান এককেন্দ্রিক শাসন-ব্যবস্থার অবসান করে, সরকারকে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় এই দুই স্তরে বিভক্ত করতে হবে। প্রত্যেক স্তরের ক্ষমতা, কর্তব্য, দায়িত্ব ইত্যাদি পৃথক এবং সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
(খ) ব্রিটিশ ও পাকিস্তান প্রবর্তিত স্থানীয় শাসন-ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বশাসিত, জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় সরকার-কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
(গ) প্রচলিত কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবর্তে স্থানীয় সরকারকে সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করতে হবে এবং একে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলার জন্য সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করতে হবে।
(ঘ) স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাতে জনমানুষের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য থাকে সেজন্য প্রয়োজনে তাদের প্রত্যাহার বা রিকল-এর ক্ষমতা জনমানুষের কাছে প্রদানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।
(ক) জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়-অঞ্চল-লিঙ্গ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান নাগরিক-অধিকার ও মৌলিক অধিকার ভোগ করার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪৩ অনুচ্ছেদসমূহকে ‘শর্তসাপেক্ষে’র বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে হবে।
(খ) এমন কোনো আইন, আদেশ বা ফরমান রাষ্ট্র প্রণয়ন, অনুমোদন বা জারী করতে পারবে না, যা ব্যক্তির মৌলিক মানবিক অধিকারকে গৌণ, হস্তক্ষেপ বা লঙ্ঘন করে।
(গ) সকল নাগরিকের বিচার পাবার সমান সুযোগ থাকতে হবে। আদালত কর্তৃক অপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাহী ক্ষমতাবলে দণ্ড মওকুবের কোনো বিধান থাকতে পারবে না।
(ঘ) অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, বিনোদন এবং নিরাপত্তার অধিকারকে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
ইব্রাহীম ম্যানশন, রুম নং ২০৪, ১১ পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০
ফোন : ০১৮ ১৬ ০১১২১৪, ০১৭ ১৫ ০২৬৯০২
www.rashtrochinta.net facebook.com/rashtrochinta/
Like your move.
I want to be tagged with this thinking.
Please connect me to your every meeting, if possible 🙂
সব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিরদলিও করতে হবে।সরকারি কর্মচারিরা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে পারবেন না।(চাকরিতে থাকা অবস্থায় )