শাসনের রূপে ষড়যন্ত্র

মূল: জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
অনুবাদ: সেলিম রেজা নিউটন

Conspiracy, Conspire: ক্ষতিকর কাজ করার উদ্দেশ্যে যৌথভাবে গোপন পরিকল্পনা করা; কারো জন্য ক্ষতিকর এমন সুনির্দিষ্ট কার্যসিদ্ধির জন্য একত্রে কাজ করা। উৎস: ল্যাটিন শব্দ conspirare অর্থাৎ ‘একমত হওয়া’, ‘চক্রান্ত করা’ (con- অর্থাৎ ‘একত্রে’ শব্দটার সাথে spirare অর্থাৎ ‘শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া’ যুক্ত হয়ে) থেকে পুরাতন ফরাসি ভাষার conspirer হয়ে পরের দিককার মধ্যযুগীয় ইংরেজি থেকে আগত। (অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান)

সবচেয়ে ভালো পার্টিটাও জাতির বাকি অংশের বিরুদ্ধে এক প্রকার ষড়যন্ত্র। (লর্ড হ্যালিফ্যাক্স)

নিরাপত্তা পথ করে দেয় ষড়যন্ত্রের। (জুলিয়াস সিজার, ২য় অংক, ৩য় অংশ। সত্য-কথকের বার্তা, কিন্তু সিজার এত ব্যস্ত যে ওদিকে তাকানোর সময় তাঁর নাই।)

ভূমিকা

শাসনযন্ত্রের আচার-আচরণে মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই পরিষ্কারভাবে এবং নির্ভিকভাবে চিন্তা করতে পারতে হবে। কেননা— আমরা যদি কিছু শিখে থাকি তা হলো এই যে, কোনো শাসনযন্ত্রই বদলাতে চায় না। আমাদের আগে যাঁরা চলে গেছেন তাঁদেরকে অতিক্রম করেই আমাদেরকে চিন্তা করতে পারতে হবে এবং আমাদেরকে কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আবিষ্কার করতে পারতে হবে যাতে করে আমরা এমনসব পদ্ধতিতে কাজের জন্য সাহসী হয়ে উঠতে পারি যা আমাদের পূর্বসূরীরা পারেন নি। আমাদেরকে অবশ্য-অবশ্যই অপশাসনের[1] মূল জন্মদায়ক কাঠামোটাকে বুঝতে পারতে হবে। এই কাঠামোটা সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই এমন একটা মজবুত চিন্তাপদ্ধতি গড়ে তুলতে পারতে হবে যা আমাদের বের করে আনবে পরস্পর-প্রতিযোগিতারত রাজনৈতিক নীতিধর্মসমূহের পাঁক থেকে এবং পৌঁছে দেবে পরিচ্ছন্ন একটা অবস্থানে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, এসব অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করে আমাদেরকে আমাদের মধ্যে এবং অন্যদের মধ্যে মহত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ এক কর্মধারার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারতে হবে যাতে করে অপশাসন-অভিমুখী ঐসব কাঠামোর বদলে ভালো কিছু গড়ে তোলা যায়।

কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনপ্রণালীতে শাসনের রূপে ষড়যন্ত্র

কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনপ্রণালীর অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের খুঁটিনাটি যেখানে সবার জানা, সেখানে আমরা রাজনৈতিক এলিটদের ভেতরকার ষড়যন্ত্রমূলক মিথষ্ক্রিয়াগুলো দেখতে পাই। এসব মিথষ্ক্রিয়া যে স্রেফ প্রশাসনের ভেতরকার পদোন্নতি বা প্রশ্রয় পাওয়ার জন্য ঘটে তা নয়। বরং তা ঘটে কর্তৃত্বপরায়ণ ক্ষমতাকে বজায় রাখার অথবা সেটাকে আরো পোক্ত করে তোলার পেছনকার প্রাথমিক পরিকল্পনা-পদ্ধতি আকারে। সত্য, ভালোবাসা ও আত্মবিকাশের দিকে জনসাধারণের যে-আকাঙ্ক্ষা, তার বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনপ্রণালী এমনসব শক্তির জন্ম দেয় যা তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের জন্য সহায়ক পরিকল্পনাসমূহ উন্মোচিত হয়ে পড়লে  জন্ম নেয় আরো আরো প্রতিরোধ। অতএব প্রতিরোধগুলো উলঙ্গ ক্ষমতার কেরামতির সামনে ব্যর্থ অথবা পলকা প্রতিপন্ন না-হওয়া পর্যন্ত নিজেদের অসৎ পরিকল্পনাগুলোকে লুকিয়ে রাখে সিদ্ধকাম কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনক্ষমতা। এসব পরিকল্পনাজনিত কার্যকলাপকে ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য তাদের সহযোগমূলক গোপনীয় চরিত্রই  যথেষ্ট।

অপকর্মগুলো পাকিয়ে ওঠার পর্যায়ে থাকা অবস্থাতেই যদি — এমনকি দূর থেকে হলেও — জানা যায় (বিচক্ষণ মানুষেরাই শুধু তা জানতে পারেন), তবে তা সহজেই নিরাময় করা যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও ব্যাপারগুলো এভাবেই ঘটে। কিন্তু যখন এরকম জানতে পারার অভাববশত জিনিসগুলো এতখানি বেড়ে ওঠার অবকাশ পায় যে, সকলেই তা টের পেতে শুরু করে, তখন আর প্রতিকারের কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না। (দ্য প্রিন্স, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি [১৪৬৯-১৫২৭])

সংযুক্ত লেখচিত্র হিসেবে সন্ত্রাসমূলক ষড়যন্ত্র

নাইন-ইলেভেনের আগে এবং পরে ম্যারিল্যান্ড প্রোকিউরমেন্ট অফিস[2] এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গণিতজ্ঞদের জন্য তহবিল জুগিয়ে গেছেন যেন তাঁরা সন্ত্রাস-মূলক ষড়যন্ত্রসমূহকে সংযুক্ত লেখচিত্র হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন (এই রচনা বোঝার জন্য গণিতশাস্ত্রে পড়াশোনা থাকার প্রয়োজন নাই)। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সম্পর্কিত এই উপলব্ধিটাকেই আমরা একটু প্রসারিত করে নিচ্ছি, আর সেটাকে প্রয়োগ করছি ঐসব সংগঠনের বেতনভাতা-অর্থকড়ির জোগানদাতা প্রভুদের ক্ষেত্রে। উপলব্ধিটাকে আমরা একটা ছুরিতে রূপান্তরিত করে নিচ্ছি যেন কর্তৃত্বপরায়ণ ক্ষমতাকাঠামোকে বজায় রাখার কাজে ব্যবহৃত ষড়যন্ত্রসমূহকে তা দিয়ে ব্যবচ্ছেদ করে দেখা যায়। রাজনৈতিক সম্পর্কসমূহের ক্ষেত্রে আমাদের স্থান-পরিসরগত যুক্তি-প্রণয়ন-সামর্থ্য প্রয়োগ করার একটা উপায় হিসেবে আমরা সংযুক্ত লেখচিত্রকে ব্যবহার করব। সংযুক্ত লেখচিত্রকে ছবির মতো করে দেখতে পারাটা খুবই সহজ। প্রথমে কতকগুলো ছোট পেরেক নিন। পেরেকগুলো হলো “ষড়যন্ত্র-কারী”। এবার একটা হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে ওগুলোকে একটা বোর্ডের ওপর এলোপাতাড়িভাবে গেঁথে দিন। এবার পাকানো সুতার একটা গুটি নিন। সুতা এখানে “যোগাযোগ”। এক পেরেক থেকে আরেক পেরেকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সুতার লুপ বা জাল তৈরি করতে থাকুন। খেয়াল রাখবেন, সুতা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়। দুইটা পেরেককে সংযুক্ত-করা সুতার নাম দিন লিংক বা “সংযোগ-সূত্র”। অবিচ্ছিন্ন সুতা মানেই সুতা আর মধ্যবর্তী পেরেকগুলোকে ধরে ধরে যেকোনো পেরেক থেকে অন্য যেকোনো পেরেকে যাওয়া-আসা করা যাবে। গণিতজ্ঞরা এই ধরনের লেখচিত্রকে বলেন “সংযুক্ত লেখচিত্র”। একেকজন ষড়যন্ত্রকারীর কাছ থেকে তথ্য প্রবাহিত হতে থাকে অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীর কাছে। প্রত্যেক ষড়যন্ত্রকারীই যে অন্যসব ষড়যন্ত্রকারীকে বিশ্বাস করেন বা চেনেন তা নয়, যদিও তাঁরা সকলেই সংযুক্ত। কেউ কেউ থাকেন ষড়যন্ত্রের একেবারে কিনারে। অন্যরা থাকেন কেন্দ্রীয় অবস্থানে এবং তাঁরা যোগাযোগ করেন অনেক অনেক ষড়যন্ত্রকারীর সাথে। আর অন্যরা হয়ত স্রেফ দুই জন ষড়যন্ত্রকারীকে চেনেন কিন্তু তাঁরা ষড়যন্ত্রটার পৃথক পৃথক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা গ্রুপসমূহের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেন।

ষড়যন্ত্রকে বিভক্ত করা

যদি সকল ষড়যন্ত্রকারীকে গুপ্তহত্যা করা হয় অথবা যদি তাঁদের ভেতরকার যাবতীয় সংযোগসূত্র বিনষ্ট করে দেওয়া হয় তাহলে আর ষড়যন্ত্রটার কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তার জন্য সব মিলিয়ে এত বেশি সহায়-সম্পদ লাগে যে অতকিছু জোগাড় করা সম্ভব হয় না। কাজেই আমরা আমাদের প্রথম প্রশ্নটা তুলি এভাবে: ষড়যন্ত্রকে সমান সংখ্যার দুইটা ভাগে বিভক্ত করে ফেলার জন্য কমপক্ষে কতগুলো সংযোগসূত্রকে কেটে ফেলতে পারতে হবে? (ভাগ করো এবং জয় করো।) উত্তরটা নির্ভর করে ষড়যন্ত্রের গড়নের ওপর। অনেক সময় ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য প্রবাহিত হওয়ার মতো বিকল্প পথ থাকে না; কখনো আবার অনেক অনেক বিকল্প পথ থাকে। ষড়যন্ত্র জিনিসটার এটা কিন্তু কাজে-লাগানোর-মতো এবং মজার একটা বৈশিষ্ট্য বটে। যেমন ধরা যাক, বিশেষ কোনো ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে, “সেতু” হিসেবে কাজ করা একজন ষড়যন্ত্রকারীকে গুপ্তহত্যার মধ্য দিয়ে হয়ত ঐ ষড়যন্ত্রটাকে বিভক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা এমন কিছু বলতে চাই যা নির্বিশেষে সকল ষড়যন্ত্রের বেলায় খাটে।

কিছু কিছু ষড়যন্ত্রকারী অন্যদের চেয়ে কাছে কাছে নাচে

ষড়যন্ত্রকারীরা এমনিতে বোধশক্তিসম্পন্নই বটেন— কেউ কেউ পরস্পরকে বিশ্বাস করেন এবং পরস্পরের ওপর নির্ভর করেন, অনেকে আবার কথা কম বলেন। কিছু কিছু সংযোগসূত্রের ভেতর দিয়ে ঘনঘন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রবাহিত হয়; অন্যগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয় মামুলি তথ্যটথ্য। সুতরাং আমরা আমাদের সরল সংযুক্ত লেখচিত্র মডেলটাকে একটু প্রসারিত করে নিই যেন তাতে স্রেফ সংযোগসূত্রই নয় বরং তার “গুরুত্ব”কেও অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া যায়। তাইলে আবার একটু আমাদের বোর্ড-পেরেক উপমায় ফিরে যাওয়া যাক। কল্পনা করুন— কোনো কোনো পেরেকগুচ্ছের মধ্যস্থ সুতাগুলো একদম পুরু, মোটা দড়ির মতো; আর অন্যসব পেরেকগুচ্ছের ভেতরকার সুতা নিতান্তই সূক্ষ্ণ, পাতলা তন্তুর মতো। সংযোগসূত্রের গুরুত্ব, পুরুত্ব বা ঘনত্বের নাম দিন “ওজন”। যেসব ষড়যন্ত্রকারী কখনোই পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করেন না তাঁদের ভেতরকার সংযোগসূত্রের ওজন হলো শূন্য। কোনো একটা সংযোগসূত্রের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত যোগাযোগের “গুরুত্ব” আগাম মূল্যায়ন করাটা কঠিন, কেননা এর সত্যিকারের মূল্য নির্ভর করে ষড়যন্ত্রটার পরিণতির ওপর। আমরা স্রেফ এইটুকুই বলছি যে, যোগাযোগের গুরুত্ব কোনো একটা সংযোগসূত্রের ওজন কীভাবে বাড়ায় তা আসলে এমনিতেই বোঝা যায়: সংযোগসূত্রের ওজন তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত যোগাযোগের মোট পরিমাণের আনুপাতিক। [কোনো সংযোগসূত্রের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত যোগাযোগের পরিমাণ যত বেশি, তার ওজন তত বেশি; আর প্রবাহিত যোগাযোগের পরিমাণ যত কম, ওজনও তত কম।—অনুবাদক] ষড়যন্ত্রকে সামগ্রিকভাবে দেখার জন্য কোনো সংযোগসূত্রের ওজন আমাদের জানার দরকার পড়ে না কেননা ষড়যন্ত্র-ভেদে সেটা বদলায়।

ষড়যন্ত্র হলো জ্ঞানগত যন্ত্র। একই ব্যক্তিবর্গ একা একা কাজ
করলে চিন্তায় তাঁদেরকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয় ষড়যন্ত্র।

ষড়যন্ত্র পরিচালিত হয় যে-জগতে, সেই “ষড়যন্ত্রমূলক পরিমণ্ডল” থেকে তথ্য জোগাড় করে ষড়যন্ত্র। আর ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে হাতে পরিবাহিত হতে থাকে তা। অতঃপর সেসব তথ্য প্রভাব বিস্তার করে ষড়যন্ত্রের ফলাফলের ওপর। ষড়যন্ত্রকে আমরা এক ধরনের ডিভাইস বা যন্ত্র হিসেবে দেখতে পারি। এর আছে ইনপুট (পরিমণ্ডল সম্পর্কিত তথ্য), আছে একটা হিসাবগণনামূলক নেটওয়ার্ক (ষড়যন্ত্রকারীগণ এবং তাঁদের পারস্পরিক সংযোগসূত্রসমূহ), আর আছে আউটপুট (পরিমণ্ডলটাকে বজায় রাখা বা বদলানোর জন্য সম্পাদিত কাজকর্ম)।

প্রতারণাশীল ষড়যন্ত্র

যেহেতু ষড়যন্ত্র এক ধরনের জ্ঞানগত যন্ত্র যা তার পরিবেশ-পরিমণ্ডল থেকে আহরিত তথ্যের ভিত্তিতে করে কাজ করে, সুতরাং ইনপুটকে বিকৃত বা সীমিত করে ফেলার মানে হলো এর ভিত্তিতে সম্পাদিত কাজকর্ম অস্থানে-অপাত্রে গিয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হওয়া। প্রোগামাররা এই পরিণতির নাম দিয়েছেন “আবর্জনা ঢোকে, আবর্জনা বের হয়” (গার্বেজ ইন, গার্বেজ আউট)। এই পরিণতিটা সচরাচর ঘটে অন্য তরিকায়। কেননা ষড়যন্ত্রই হলো ছলনা আর তথ্য-সংকোচনের কারক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রোগামারদের এই প্রবচনকে মাঝে মাঝে “দ্য ফক্স নিউজ ইফেক্ট” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।*

ষড়যন্ত্র কী গণনা করে?

ষড়যন্ত্র গণনা করে ষড়যন্ত্রের পরবর্তী কর্মোদ্যোগটাকে। এবার তাহলে আমরা প্রশ্ন করি: এই যন্ত্রটা কতটা কার্যকর? এটাকে কি আমরা পৃথক পৃথক সময়ে  এর নিজেরই সাথে তুলনা করতে পারি? ষড়যন্ত্রটা কি আরও পোক্ত হয়ে উঠতে থাকে, নাকি তা দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে? এই প্রশ্নটা আমাদেরকে বলে যেন আমরা দুইটা মূল্যমানকে পূর্বাপর সময়ের সাথে মিলিয়ে দেখি।

আমরা কি এমন কোনো মূল্যমান আবিষ্কার করতে পারি
যা দিয়ে ষড়যন্ত্র জিনিসটার ক্ষমতা বর্ণনা যায়?  

আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা গুনে দেখতে পারতাম, কিন্তু তাতে করে খোদ ষড়যন্ত্র জিনিসটার সাথে ষড়যন্ত্র-গড়ে-তোলা ব্যক্তিবর্গের মুখ্য পার্থক্যকে ধরা যেত না। এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কেমন আসলে? কোনো একটা ষড়যন্ত্রের ভেতরে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ষড়যন্ত্র করেন, অথচ পরস্পরবিচ্ছিন্ন থাকা অবস্থায় তাঁরা সেটা করেন না। আমরা এই পার্থক্যের বেশিরভাগটাকে দেখাতে পারি যাবতীয় ষড়যন্ত্রকারীদের ভেতরকার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের (অর্থাৎ ওজনের) যোগফল নির্ণয় করার মাধ্যমে। এটার নাম দেওয়া যাক সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতা।

সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতা

এই সংখ্যাটা বিমূর্ত ধারণা বিশেষ। ষড়যন্ত্রের ভেতরকার সংযোগ-সম্পর্কগুলো সাধারণত অনন্য হয়ে থাকে। কিন্তু যদি আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের ভেতরকার সংযোগ-সম্পর্কসমূহের বিন্যাসের ঊর্ধ্বে অবস্থিত কোনো একটা মূল্যমানের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা সামগ্রিকভাবে ষড়যন্ত্র জিনিসটা সম্পর্কে একটা-কিছু বলতে পারব।

সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতা যদি হয় শূন্য,
তাইলে আর ষড়যন্ত্র থাকে না

সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতা যদি হয় শূন্য, তাইলে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে স্পষ্টতই আর কোনো তথ্যপ্রবাহ থাকে না, কাজেই ষড়যন্ত্রও থাকে না। সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতায় বাস্তবিক কোনো বৃদ্ধি অথবা হ্রাস ঘটার অর্থ কী? প্রায় সবসময়ই অর্থটা হলো সেটাই যেটা আমরা এর অর্থ হওয়ার কথা বলে ধারণা করতে পারি। অর্থটা হলো ষড়যন্ত্র জিনিসটা কতটা চিন্তা করতে পারে, কতটা সক্রিয় থাকতে পারে এবং পরিস্থিতির সাথে নিজেকে কতখানি খাপ খাওয়াতে পারে সে সংক্রান্ত সামর্থ্যের বৃদ্ধি অথবা হ্রাস ঘটা।

Supporters of WikiLeaks founder Julian Assange,hold placards calling for his freedom outside Woolwich Crown Court in southeast London on February 24, 2020 AFP

ওজনদার ষড়যন্ত্রগুলোকে বিভক্ত করা ফেলা

ষড়যন্ত্রকে ভেঙে দুই অর্ধেক করে ফেলার যে-আইডিয়ার কথা আমরা আগে বলেছিলাম, আবার সেখানে ফিরে আসি। সেখানে আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার সংযোগসূত্রগুলো কেটে ফেলার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকে সমান সংখ্যার দুইটা ভাগে বিভক্ত করে ফেলার কথা ভাবছিলাম। এখন আমরা দেখব যে, সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতাকে দুই অর্ধেক করে ভেঙে ফেলাটা বরং বেশি ইন্টারেস্টিং একটা আইডিয়া। যেহেতু প্রত্যেকটা বিচ্ছিন্ন অর্ধেকই নিজেরা নিজেদের মতো করে একেকটা ষড়যন্ত্র, আমরা তাই বিচ্ছিন্নকরণের কাজটা অনির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারি।

ওজনদার ষড়যন্ত্রগুলোর শ্বাসরোধ করা

ওজনদার ষড়যন্ত্রকে বিভক্ত করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার সংযোগ-সূত্রগুলো কেটে ফেলা যায়। কিন্তু সে দিকে না-গিয়েও আমরা একই ধরনের একটা পরিণতিতে পৌঁছাতে পারি যদি আমরা ষড়যন্ত্রটার শ্বাসরোধ করতে পারি। সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতার সমমাপের একেকটা অংশ থাকে যাদের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে উচ্চ-ওজনের কিছু সংযোগসূত্র। ওজন কমানোর মাধ্যমে এসব সংযোগসূত্রকে সংকুচিত করে ফেলা যায়। এভাবে ষড়যন্ত্রের শ্বাসরোধ করা যায়।

ষড়যন্ত্রমূলক জ্ঞানগত সামর্থ্যের ওপর আক্রমণ

শেকলে বাঁধা মানুষ জানেন তাঁকে জলদি জলদি কাজ করতে পারতে হবে, কেননা রাষ্ট্রকর্মের ওপর প্রভাব বিস্তারের সামর্থ্য তাঁর ফুরিয়ে আসছে। শক্তিশালী ষড়যন্ত্রমূলক ক্রিয়াকলাপ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গেলে অবশ্যই আমাদেরকে আগে আগে চিন্তা করতে পারতে হবে এবং ঐ ক্রিয়াকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটার ওপর আক্রমণ চালাতে পারতে হবে, কেননা খোদ ক্রিয়াকলাপগুলো নিয়ে কিন্তু কিছুু করার উপায় থাকবে না। যেসব তথ্য লাভ করা ষড়যন্ত্রের পক্ষে সম্ভব সেগুলোর বিকৃতিসাধন বা সেগুলোকে সংকুচিত করে ফেলার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকে বিভ্রান্ত করতে পারি বা তাকে বিচারবুদ্ধিহীন করে ফেলতে পারি। সংযোগসূত্রসমূহের ওপর অনানুষ্ঠানিক-ও-অপরিকল্পিত আক্রমণের মধ্য দিয়ে অথবা শ্বাসরোধ ও বিচ্ছিন্নকরণের মধ্য দিয়ে সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতাকে আমরা হ্রস্ব করে দিতে পারি। এভাবে ষড়যন্ত্রের পেছনে যথেষ্ট মাত্রায় লেগে থাকতে পারলে ষড়যন্ত্র আর তার পরিবেশ-পরিমণ্ডলকে উপলব্ধি করার ও জোরালো কাজকর্মের পরিকল্পনা করার সামর্থ্য রাখে না।

জুলিয়ানের মুক্তির দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

প্রথাগত বনাম আধুনিক ষড়যন্ত্র

ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতাগোষ্ঠীর ওপর গুপ্তহত্যার মতো প্রথাগত হামলাগুলো অধিক উচ্চ-ওজনের সংযোগসূত্রকে কেটে ফেলে। গুপ্তহত্যার ঘটনা অর্থাৎ দৃশ্যমান ব্যক্তিবর্গকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানোটা প্রাক-শিক্ষিত সমাজে শানিত হয়ে ওঠা মানসিক অভিলাষের ফল। এ জাতীয় সমাজের ভেতর দিয়েই বিবর্তিত হয়েছে আমাদের প্রজাতি। অক্ষরপরিচয় ও যোগাযোগ-বিপ্লব ষড়যন্ত্রকারীদেরকে  দিয়েছে নতুন নতুন উপায়ে ষড়যন্ত্রের ক্ষমতা। বৃদ্ধি করেছে তাঁদের নিজেদের ভেতরকার মিথষ্ক্রিয়াগত নির্ভুলতার গতি। এভাবে ষড়যন্ত্র লাভ করেছে তার সর্বোচ্চ আকার— ভেঙে পড়ার আগে একটা ষড়যন্ত্র যতটা বড় হতে পারে আর কি। প্রযুক্তিসম্পন্ন ষড়যন্ত্রকারীরা প্রযুক্তিবিহীন ষড়যন্ত্র-কারীদেরকে ষড়যন্ত্রে পরাস্ত করতে সক্ষম। এভাবেই তাঁরা উচ্চতর সর্বমোট ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। আর সেজন্যই তাঁরা সেসব ব্যবহার করতে শেখেন। উদাহরণ হিসেবে, লর্ড হ্যালিফ্যাক্সের কথাগুলোর স্মরণে  কাছাকাছি ধরনের ভারসাম্যওয়ালা এবং মোটামুটি মাত্রায় ষড়যন্ত্রমূলক দুটো ক্ষমতাগোষ্ঠী মার্কিন ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান পার্টির কথা ভেবে দেখা যাক। ভাবুন কী হবে যদি এই পার্টি দুটোর একটা তাদের মোবাইল ফোন, ফ্যাক্স এবং ইমেইল-বিনিময় ছেড়ে দেয়? যা দিয়ে তারা তাদের সদস্যতা, অর্থদাতা, বাজেট, জনমত জরিপ, কল সেন্টার এবং প্রত্যক্ষ ডাক-প্রচারণা ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্ত কাজ চালায়, সেই কম্পিউটার সিস্টেমের কথা বাদই দিলাম। একদম সাথে সাথে তারা সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তায় নিপতিত হবে এবং হেরে যাবে অন্যপক্ষের কাছে।

যে-কর্তৃত্বপরায়ণ ষড়যন্ত্র চিন্তা করতে পারে না,
নিজেদের-তৈরি-করা বিরোধীপক্ষের হাত থেকে
নিজেদেরকে তারা বাঁচানোর সামর্থ্য রাখে না

কর্তৃত্বপরায়ণ ষড়যন্ত্রের দিকে সামগ্রিকভাবে তাকালে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া-মূলক অঙ্গপ্রত্যঙ্গওয়ালা একটা সিস্টেম দেখতে পাই আমরা একটা। জন্তুর শিরা-ধমনীতে রক্ত যখন হয়ে ওঠে থকথকে আর মন্থর, তখন সে পড়ে যায়। সে তখন চেতনারহিত, অনুভূতিশূন্য। নিজের পরিবেশ-পরিমণ্ডলের শক্তিসমূহ-কে নিয়ন্ত্রণ করতে বা সেগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট উপলব্ধি অর্জন করতে সে তখন অক্ষম। পরে আমরা দেখব নতুন প্রযুক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রণোদনার ভেতরজগতটা বোঝার মতো অন্তর্দৃষ্টি আমাদেরকে কিছু ব্যবহারিক উপায়পদ্ধতি বাতলে দিতে পারে। এসব উপায়পদ্ধতি দিয়ে কর্তৃত্বপরায়ণ ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগকে আটকানো অথবা কমানো যায়, কর্তৃত্বপরায়ণ পরিকল্পনা-প্রণালীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইন্ধন জোগানো যায় এবং অধিক মানবিকতাপূর্ণ শাসনকাঠামোর দিকে জোরালো উদ্দীপনা সৃজন করা যায়।

এই রচনার আদি হদিস
https://web.archive.org/web/20061127092652/http://iq.org/
https://archive.fo/Y3KPQ
https://web.archive.org/web/20070129125831/http://iq.org/conspiracies.pdf

অন্যান্য হদিস
STATE AND TERRORIST CONSPIRACIES
CONSPIRACY AS GOVERNANCE

নোট/ টীকা


[1]              প্রতিবার যখন আমরা এমন কোনো কাজ প্রত্যক্ষ করি যেটাকে আমরা অন্যায় বলে মনে করি অথচ কিছুই করি না, তখন আমরা আসলে অন্যায়ের পক্ষেই চলে যাই। অন্যায়ের সামনে বারবার যাঁরা নিষ্ক্রিয় থেকে যান, অচিরেই তাঁরা দেখতে পান যে, তাঁদের চরিত্র ক্ষয় হতে হতে দাসত্বে পর্যবসিত হয়েছে। এভাবে প্রত্যক্ষ করা বেশিরভাগ অন্যায়কর্মই অপশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট কেননা শাসনপ্রণালী যখন ভালো চলে, প্রতিকার-না-হওয়া অন্যায়ের ঘটনা তখন বিরল। পরিজ্ঞাত-অথচ-প্রতিকারহীন অন্যায়ের পরিণতি কিন্তু এমনিতে যতটা মনে হয় তার চেয়ে অনেক ব্যাপক। সেটা বোঝা যায় জনসাধারণের চরিত্রের ক্রমাবনতি থেকে। আধুনিক যোগাযোগ-রাষ্ট্রগুলো তাদের ব্যাপকতা, সমসত্ত্বতা ও আতিশয্যের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের লোকসাধারণকে চাক্ষুষকৃত-অথচ-আপাতপ্রতিকারহীন অন্যায়কর্ম দিয়ে ভাসিয়ে দেয়।

[2]              শিক্ষায়তনিক গবেষণায় তহবিল জোগানোর ক্ষেত্রে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি কীভাবে আবছা আড়াল ব্যবহার করে সে সম্পর্কে জানার জন্য গ্র্যান্ট কোড “MDA904” লিখে গুগল করুন।

[*]              [অনুবাদকের টীকা] দ্য ফক্স নিউজ ইফেক্ট: প্রতারণা করে মানুষকে নয়ছয় বোঝানোর সামর্থ্যটা ষড়যন্ত্রের জন্য একটা প্যারাডক্স। পরিবেশ-পরিমণ্ডল থেকে যথেষ্ট মাত্রায় তথ্য আহরণ না-করলে ষড়যন্ত্রের চলে না। অথচ তার তথ্যকাঠামো /তথ্যনেটওয়ার্ক/তথ্যপ্রবাহ অবাধ উন্মুক্ত নয়। তার একটা প্রবণতা হলো তথ্য-প্রবাহকে নানাভাবে পরিসীমিত ও সংকুচিত করে ফেলা। এই কারণে সঠিক তথ্য সবসময় তার কাছে পৌঁছায় না। এভাবে তার ইনপুট বিকৃত হয়। ফলে আউট-পুটও বিকৃত হয়। সবসময় সে সত্য জানতে পারে না। ফলে ষড়যন্ত্র নিজের কাছে নিজে প্রতারিত হয়। প্রোগামাররা একে বলেন গার্বেজ ইন গার্বেজ আউট। এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফক্স নিউজের লিবারাল/‌ডেমোক্র্যাট ব্যাখ্যা।

        ফক্স নিউজ এখানে প্রচারণার প্রতীক। নিজেরই প্রচারণা ষড়যন্ত্রকে তার নিজের পরিবেশ-পরিমণ্ডল বুঝতে দেয় না। কেননা নিজের প্রচারণাকে সে সত্য বলে মনে করতে শুরু করে। এভাবে ষড়যন্ত্র নিজেই নিজের প্রচারণার কাছে প্রতারিত হয়। ফলে তার লক্ষ্যচ্যূত হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।

       (আত্ম)প্রতারণাশীলতার এই বৈশিষ্ট্যকে অ্যাসাঞ্জ কাজের লাগান ‘লিক’-এর ক্ষেত্রে। যত বেশি লিক বা তথ্যফাঁস হয়, ষড়যন্ত্র-নেটওয়ার্ক তত বেশি আতঙ্ক-গ্রস্ত হতে শুরু করে। ফলে সে তার তথ্যপ্রবাহ/তথ্যনেটওয়ার্ক আরো সংকুচিত করতে শুরু করে। তথ্যপ্রবাহ কমতে থাকলে তার ষড়যন্ত্র-সামর্থ্যও কমতে শুরু করে। সুতরাং নির্দিষ্ট একটা লিক নির্দিষ্ট একটা ষড়যন্ত্রকে কতটা ভেঙে ফেলতে পারল সেটা অ্যাসাঞ্জের কাছে মুখ্য নয়। মুখ্য হলো ষড়যন্ত্রমূলক তথ্যপ্রবাহ-জগতে লিক জিনিসটাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করে তোলা। যখন-তখন যেখানে-সেখানে নিরাপদে লিক ঘটতে পারাটা যে-সিস্টেমের সাধারণ বৈশিষ্ট্য, সেখানে ষড়যন্ত্র জিনিসটা তার ষড়যন্ত্র করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। তখন তারই জন্ম দেওয়া বিরোশীশক্তিগুলো সামগ্রিক ষড়যন্ত্রমূলক শাসনপ্রণালী-তে ইতিবাচক বদল আনার ক্ষেত্রে সফল হতে শুরু করে। (কৃতজ্ঞতাসূত্র: Aron Bady এবং James Di Palma-Grisi)

[প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল রাষ্ট্রচিন্তা জার্নালের চতুর্থ সংখ্যায় (আগস্ট ২০১৯ এ প্রকাশিত)]


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *